Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

পরিদর্শনে গড়িমসি, তাই ঘোচে না বন্দিদশা

সাজার সর্বোচ্চ মেয়াদ পেরিয়ে গিয়েছে। অথচ বন্দিদশা ঘুচছে না। মামলাও চলছে যথারীতি। রাজ্যের বিভিন্ন জেলে এমন বন্দির সংখ্যা কয়েক হাজার। কেন এই দশা? রাজ্যের কারামন্ত্রী হায়দার আজিজ সফি নিজেই জানান, জেল পরিদর্শন করে বন্দিদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য দেওয়ার জন্য পরামর্শদাতা কমিটি রয়েছে। কিন্তু সেই কমিটি বছরের পর বছর পরিদর্শনে যায় না!

কাজী গোলাম গউস সিদ্দিকী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৫৫
Share: Save:

সাজার সর্বোচ্চ মেয়াদ পেরিয়ে গিয়েছে। অথচ বন্দিদশা ঘুচছে না। মামলাও চলছে যথারীতি। রাজ্যের বিভিন্ন জেলে এমন বন্দির সংখ্যা কয়েক হাজার। কেন এই দশা?

রাজ্যের কারামন্ত্রী হায়দার আজিজ সফি নিজেই জানান, জেল পরিদর্শন করে বন্দিদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য দেওয়ার জন্য পরামর্শদাতা কমিটি রয়েছে। কিন্তু সেই কমিটি বছরের পর বছর পরিদর্শনে যায় না!

এর ফলে সমস্যা হচ্ছে মূলত দু’দিক থেকে।

• জেলে বন্দির সংখ্যা কমছে না। পরিদর্শন না-হওয়ায় নিশ্চিত ভাবে জানা যাচ্ছে না, কারা সম্ভাব্য সময়সীমার পরেও জেলে আটকে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। কাদের মুক্তির জন্য বিশেষ ভাবে চেষ্টা চালানো যায়, বোঝা যাচ্ছে না সেটাও। ফলে সেই সব বন্দি গারদে থাকতে বাধ্য হওয়ায় জেলে স্থানাভাব দেখা দিচ্ছে।

• পরিদর্শন না-হওয়ায় বিচারাধীন বন্দিরা যথাসময়ে বিচারও পাচ্ছেন না। কারণ, পরিদর্শক কমিটির দিক থেকে তাগাদা না-আসায় ওই সব বন্দির মামলা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোনও উদ্যোগই প্রায় থাকে না।

পশ্চিমবঙ্গের জেলগুলিতে এই মুহূর্তে প্রায় ২৩ হাজার বন্দি রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১৪ হাজারই বিচারাধীন। কারা দফতরের এক কর্তা জানান, অপরাধের গুরুত্বের ভিত্তিতে সাজার মেয়াদ ঠিক করে দেয় আদালত। কোন অপরাধের জন্য সর্বাধিক কত দিনের কারাদণ্ড হতে পারে, আইনে তার একটি সম্ভাব্য সময়সীমার কথা বলা আছে। যেমন, চুরি-ডাকাতি করার মতো অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগে কেউ জেলে থাকলে অপরাধের গুরুত্ব মোতাবেক সাধারণ ভাবে তার সাজার মেয়াদ দীর্ঘ হওয়ার কথা নয়। অথচ রাজ্যের বিভিন্ন জেলে এমন অনেক বিচারাধীন বন্দি আছে, যারা সেই সর্বোচ্চ মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার পরেও মুক্তি পাচ্ছে না। আবার অনেক বন্দির সম্পর্কে ঠিকঠাক তথ্য যথাসময়ে আদালতকে জানাতে না-পারায় মামলা চলছে অনন্ত কাল।

কারা দফতরের ওই কর্তা জানান, জেলবন্দিদের সম্পর্কে সরকারকে অবহিত করাতে জেলা ও দায়রা জজের নেতৃত্ব প্রতিটি জেলায় পাঁচ সদস্যের পরামর্শদাতা কমিটি রয়েছে। তাদের কাজই হল, জেলার সংশোধনাগারগুলি নিয়মিত পরিদর্শন করে বিচারাধীন বন্দিদের আচার-আচরণ নিয়ে রিপোর্ট সংগ্রহ করা। কোন অভিযোগে সংশ্লিষ্ট বন্দি কত দিন জেল খাটছে, তার অপরাধের জন্য সর্বাধিক কত দিন সাজা হতে পারে, ইত্যাদি বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়াটাও ওই কমিটির দায়িত্ব। ওই সব তথ্য সংগ্রহের পরে সব দিক বিবেচনা করে প্রয়োজনে বিচারাধীন বন্দির জন্য মুক্তির সুপারিশ করতে পারে কমিটি। সেই সুপারিশ যাচাই করার কথা রাজ্য স্তরে গঠিত বন্দি মুক্তি কমিটির। তাদের দায়িত্ব, সব দিক খতিয়ে দেখে রাজ্য সরকারের কাছে কোনও কোনও বন্দির মুক্তির সুপারিশ করা। সরকার ওই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই বন্দি মুক্তির ব্যাপারে নির্দেশ জারি করে।

কিন্তু পরিদর্শক বা পরামর্শদাতা কমিটি পরিদর্শন করে না কেন?

“রোগটা শুধু এই সরকারের আমলে নয়। এটা বাম আমল থেকেই চলে আসছে,” মন্তব্য কারামন্ত্রীর। তাঁর কথায়, বহু বছর ধরেই জেলার পরামর্শদাতা কমিটিগুলি কার্যত কোনও কাজ করছে না। এই অবস্থা চলতে থাকলে মেয়াদ শেষের পরেও এক জন বিচারাধীন বন্দিকে কত দিন জেলে থাকতে হবে, তার ঠিক উত্তর জানা নেই কারা দফতরের।

মন্ত্রী এই পরিস্থিতির পরিবর্তন চান। তিনি বলেন, “প্রতিটি জেলায় নির্দেশ পাঠিয়ে বলেছি পরামর্শদাতা কমিটিগুলিকে নিয়মিত জেল পরিদর্শনের কাজ শুরু করতে হবে। তাদের রিপোর্ট দিতে হবে নিয়মিত ভাবে।” মন্ত্রী জানান, বিচারাধীন কোনও বন্দি তাঁর সম্ভাব্য সাজার সর্বাধিক মেয়াদের অর্ধেক সময় জেলে কাটালেই তাঁকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার চিন্তাভাবনা করছে। এই ব্যাপারে কেন্দ্রীয় স্তরে সিদ্ধান্ত বা নিয়ম চালু হওয়ার আগেই জেলা পরামর্শদাতা কমিটিগুলি যদি ঠিকঠাক কাজ করে, তা হলেও বিচারাধীন বন্দির সংখ্যা অনেকটা কমে যাবে বলে মনে করেন কারামন্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE