প্রত্যন্ত গ্রামে সমবায় সমিতিগুলির মাধ্যমে রবিচাষের জন্য শুধু নভেম্বর মাসেই ৭০০ কোটি টাকা কৃষি ঋণ বা দাদন দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্কের। কিন্তু নোট বদলের চাপে পড়ে পুরো ব্যবস্থাই লাটে ওঠার জোগাড়। কৃষি দফতরের আশঙ্কা, রবিচাষে দাদন না দেওয়া গেলে সামনের মরসুমে আলু, সবজি, সরষে, ডাল এবং বোরো ধানের উৎপাদনে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। এমনকী মাস তিনেকের মধ্যে কৃষিপণ্যের দাম আমজনতার নাগালের বাইরে চলে যাওয়ারও আশঙ্কা করছেন কৃষি দফতরের কর্তারা।
সমবায় ব্যাঙ্কের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘দাদন দেওয়ার প্রক্রিয়ায় যাতে ব্যাঘাত না ঘটে, তা জানিয়ে নাবার্ড এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে বার বার বলা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রক চাষিদের সপ্তাহে ২৫ হাজার টাকা তোলার নির্দেশও জারি করেছে। আমারা আশা করছি, চাষিদের কথা ভেবে খুব তাড়াতাড়ি নতুন নোটও মিলবে।’’
কিন্তু আকাল তো নতুন নোটেরই। রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্ক গত আট দিনে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে ১৪৫ কোটি টাকার নতুন নোট চেয়েছিল। কিন্তু মিলেছে মাত্র ৩২ কোটি টাকা! জেলার বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কগুলিকে দিয়েছে আরও প্রায় ৫০ কোটি টাকা। এক কর্তার ব্যাখ্যা, ‘‘দাদনের জন্য এখনই প্রয়োজন ৭০০ কোটি। এর পরেও সমবায় ব্যাঙ্কগুলিতে সাধারণ আমানতকারীর টাকা তোলার চাহিদা থাকছে। কারণ আমানতের মেয়াদ পূর্ণ হলে ব্যাঙ্ক তা মেটাতে বাধ্য।’’
কৃষি দফতরের হিসেব অনুযায়ী, রবি মরসুমে এ রাজ্যে মূলত আলু, বোরো ধান এবং শীতকালীন সব্জি চাষে দাদন দেওয়া হয়। আলুর বীজ বসানোর কাজ এখন ৬০% হয়েছে। বাকি জমিতে আলু চাষের জন্য এ মাসেই চাষির হাতে টাকা পৌঁছনো জরুরি। কিন্তু এখন তা বেশ মুশকিলের। একই ভাবে বোরো ধান বা শীতকালীন সব্জি চাষের জন্যও খরচ পেতে হিমশিম খাবেন চাষিরা।
কৃষি দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘এখন টাকার জোগান নেই বলে সব্জির পাইকারি বাজারে কম দামেই পণ্য বিক্রি হচ্ছে। আমন ধান উঠলেও আড়তে তা বিক্রি করতে পারছেন না চাষিরা। ফলে নতুন করে ধান চাষ করতে পারছেন না তাঁরা। আর মাস তিনেক পর টাকা হয়তো মানুষের হাতে থাকবে। কিন্তু তখন জোগান থাকবে না। বাজার আগুন হবে।’’
শুধু দাদন বিলি নয়, সমবায় দফতর জানিয়েছে, এ মাসেই খরিফ মরসুমে বিলি করা ১৩০০ কোটি টাকার মধ্যে অন্তত ৬০০ কোটি টাকা আদায় হওয়ারও কথা ছিল। পাঁচশো-হাজারের ধাক্কায় সেটাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কারণ, কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক এবং কৃষি সমবায় সমিতিগুলি মারফত ৫০০-১০০০ টাকার নোট জমা নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। ফলে বহু চাষি ঋণ শোধ করতে চাইলেও পুরনো নোট থাকায় তা ব্যাঙ্কে জমা করতে পারছেন না।
সমবায় ব্যাঙ্কগুলোর মাধ্যমে লেনদেনে রির্জাভ ব্যাঙ্ক রাশ টানায় এ রাজ্যে প্রায় ২০ লক্ষ চাষি প্রবল সমস্যায় পড়তে পারেন বলে সরকারি সূত্রের দাবি।
কী ভাবে?
এক সমবায় কর্তা জানান, এ রাজ্যে ১৭টি কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক রয়েছে। এই ব্যাঙ্কগুলি তাদের ৩০০টি শাখার মাধ্যমে ৫০০০ প্রাথমিক সমবায় সমিতিকে ঋণ বন্টন করে। প্রাথমিক সমবায় সমিতিগুলি আবার গ্রামে গ্রামে চাষিদের খরিফ এবং রবি মরসুমের জন্য ঋণ বিলি করে। এর মধ্যে ২৬১২টি সমিতি আবার আমানত সংগ্রহও করতে পারে। এদের হাতে এখন ৭৫০০ কোটি টাকা রয়েছে। যা তারা জেলাস্তরে কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কগুলিতে জমা রাখে। ‘‘এখন সমবায় সমিতিগুলির ৫৫০০ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কগুলিতে জমা থাকলেও তা চাষিদের হাতে পৌঁছনোর অবস্থা নেই। কারণ নতুন নোট নেই’’— বলছেন রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্কের এক কর্তা।
সব মিলিয়ে বহু চাষিই ঋণ পাচ্ছেন না। চাষের এই ক্ষতির জন্য কয়েক মাসের মধ্যেই রাজ্যের কৃষি পণ্যের দাম হুহু করে বাড়তে বাধ্য। রাজ্যের মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় এই আশঙ্কার কথা কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট সচিব প্রদীপকুমার সিন্হাকে জানিয়েছেন বলে নবান্ন সূত্রের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy