ধৃত রাকেশ মণ্ডল।— নিজস্ব চিত্র।
বিয়ের প্রস্তাব দিয়েও সাড়া মেলেনি। অভিযোগ, তার পর থেকে বছর কুড়ির ওই তরুণীকে ক্রমাগত উত্ত্যক্ত করা শুরু করেছিল ক্যানিংয়ের তালদি এলাকার এক তৃণমূল নেতার ভাইপো। শুক্রবার বিকেলে, তারই বিহিত চেয়ে ওই যুবকের দোকানে গিয়েছিলেন মেয়েটির দিদি-জামাইবাবু। অভিযোগ, হাতের সামনে পড়ে থাকা লোহার রড কুড়িয়ে নিয়ে পাল্টা ‘শাস্তি’ দিয়েছিল রাকেশ মণ্ডল নামে ওই যুবক। সামনে দাঁড়িয়ে থেকে, মারধরের ঘটনায় প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাকেশের কাকা উদয় মণ্ডল নামে এলাকার তাবড় ওই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধেও। উদয়বাবু তালদি পঞ্চায়েত সদস্য কবিতা মণ্ডলের স্বামী।
অভিযোগ পেয়ে শনিবার রাকেশকে গ্রেফতার করলেও উদয়বাবুকে ধরার সাহস দেখায়নি পুলিশ। কেন?
পুলিশের দাবি, মারধরের সময়ে উদয়বাবু যে ঘটনাস্থলে ছিলেন, তার কোনও স্পষ্ট প্রমাণ নেই।
তালদি এলাকায় রাকেশের একটি মণিহারি দোকান রয়েছে। ওই তরুণীর জামাইবাবুর দাবি, ‘‘রাকেশের ভয়ে গত কয়েক মাস ধরে আমার শ্যালিকার রাস্তাঘাটে বের হওয়া দুষ্কর হয়ে উঠেছে।’’
ওই যুবকের ক্রমান্বয়ে ‘কটূক্তি’ ও ‘অসভ্যতা’র একটা বিহিত চেয়ে শুক্রবার তাই উদয়বাবুকে ফোন করেছিলেন তরুণীর জামাইবাবু। তাঁদের দাবি, বিকেলে রাকেশের দোকানে মেয়েটিকে নিয়েই আসতে বলেন উদয়বাবু।
তরুণীর দিদি-জামাইবাবুর দাবি, দোকানে পৌঁছতেই কড়া গলায় পাল্টা শাসানি শুরু করেন উদয়। ওই তরুণীর দিদি বলেন, ‘‘আমি প্রতিবাদ করতেই একটা লোহার রড কুড়িয়ে নিয়ে সজোরে আমার মাথায় বসিয়ে দেয় রাকেশ। তাকে আটকানো দূরে থাক, উল্টে উদয়বাবু আমাদের ‘নাটক’ না করে বেরিয়ে যেতে বলেন।’’ ওই দিন বিকেলেই স্থানীয় থানায় রাকেশ ও উদয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন দম্পতি। পুলিশ গ্রেফতার করে রাকেশকে। মহিলার অভিযোগ, এর পর থেকেই অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য ক্রমাগত হুমকি দিতে থাকেন উদয়বাবু। তাঁদের এলাকা ছাড়া করার শাসানিও দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। এ ব্যাপারে উদয় মণ্ডল কিংবা তাঁর স্ত্রী কবিতা মুখ খুলতে চাননি।
রাকেশ অবশ্য জেরায় পুলিশের কাছে জানিয়েছে, ‘‘ওই মেয়েটির জামাইবাবু আমার দোকান থেকে জিনিস নিয়েও দাম মেটাননি। তা নিয়েই ঝামেলা। সেই সময়ে ওই মহিলা আমায় মারতে এলে আমি বাধা দিয়েছিলাম, তাতেই পড়ে গিয়ে মাথা ফেটে গিয়েছে ওঁর।’’
তবে, স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গ্রেফতারের পরে ওই দিন বিকেল থেকেই থানায় গিয়ে রাকেশকে ছাড়ানোর জন্য তদ্বির শুরু করেছেন শাসক দলের স্থানীয় নেতারা। তালদি পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের কালীচরণ মালকে বেশ কয়েক বার থানায় যেতে দেখা গিয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই তরুণীর জামাইবাবু। কালীচরণ তা অস্বীকারও করছেন না। বলছেন, ‘‘থানায় গিয়েছিলাম ঠিকই তবে রাকেশকে ছাড়াতে নয়, ঘটনাটি ঠিক কী হয়েছিল তা জানতে।’’
তৃণমূলের জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি তথা ক্যানিং ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি শৈবাল লাহিড়ী অবশ্য বলেন, ‘‘এই ধরনের ঘটনাকে দল সমর্থন করে না। এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy