Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
State News

সিএএ-এনআরসির রাহুগ্রাস এড়াতে পুজো সাগরে

গঙ্গাসাগরে আসার পর থেকেই চাপা এনআরসি-উত্তেজনা মালুম হচ্ছে পদে পদে।

এনআরসি, সিএএ বর্জন চেয়ে পুজো গঙ্গাসাগরে। ছবি: সুদীপ ঘোষ

এনআরসি, সিএএ বর্জন চেয়ে পুজো গঙ্গাসাগরে। ছবি: সুদীপ ঘোষ

নীলোৎপল বিশ্বাস
গঙ্গাসাগর শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২০ ১০:০০
Share: Save:

“নো এনআরসি, নো সিএএ নমো!”

অভিনব এই মন্ত্র জোরে জোরে উচ্চারণ করল দু’পক্ষই। খানিক দম নিয়ে ভক্তের হাতে ধরা সাদা কাগজের উপরের দিকে লাল টিকা লাগিয়ে এর পরে এক পুরোহিত বলতে শুরু করলেন, “এনআরসি, সিএএ বর্জনার্থে, গঙ্গাসাগরে যথাসম্ভব দান সঙ্কল্পার্থে, যথাশক্তি দক্ষিণা ব্রাহ্মণায় অহম সম্প্রদতে!” অবশেষে কাগজে লাগানো লাল টিপই ভক্তের কপালে ছুঁইয়ে পুরোহিত বললেন, “হয়ে গিয়েছে। যান এ বার স্নান সেরে নিন। ধুতিটা ভাল করে গুটিয়ে নিন।”

মঙ্গলবার পুজোর ডালা হাতে, নীল কালি দিয়ে ‘নো এনআরসি, নো সিএএ’ লিখা কাগজ নিয়ে পুজো সারলেন তিন জন। তাঁরা হলেন গোপাল রক্ষিত, তরুণ মণ্ডল ও সুশান্ত ভুঁইয়া। তিন জনেরই বাড়ি গঙ্গাসাগর এলাকার আশপাশের গ্রামে। তরুণ বললেন, “গঙ্গাসাগরই আমাদের বাড়িঘর। নানা বছর নানা কারণে পুজো দিয়েছি। আমার তো মনে হয়, বিপদ কাটানোর জন্যই লোকে পুজো দেয়। এই মুহূর্তে সিএএ, এনআরসি-র থেকে বড় বিপদ আর কিছু আছে?” বিপদ এবং বিপদের ভয় সাধারণ মানুষকে কী ভাবে গ্রাস করেছে, ব্যাখ্যা করলেন গোপাল। তিনি বললেন, “এনআরসি নিয়ে কাকদ্বীপ এলাকায় যে-ভয় দেখেছি, বলে বোঝাতে পারব না। ভয়ে এ বার গঙ্গাসাগর মেলাতেও লোক অনেক কম এসেছেন। এ-রকম চললে তো আমাদের রুটিরুজি বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা রুখতে পারব কি না, জানি না। তবে এই অপয়া শক্তিকে ভগবান নিশ্চয় আটকাতে পারবেন।”

সাগরে একটি দোকানে ঢুকে গোপাল চেয়ে নেন বড় মাপের একটি ডালা। বললেন, “এনআরসি নিয়ে পুজো দেব। একটু বড় মাপেরই দিন।” এর পরে দুই পুরোহিতকে ধরে ‘নো এনআরসি, নো সিএএ’ লেখা কাগজ ব্যাগ থেকে বার করে সাগরের পাড়ে বসে পড়েন তাঁরা। উচ্চকণ্ঠে মন্ত্রপাঠ-সহ চলতে থাকে পুজো। দুই পুরোহিত দেবাশিস মিশ্র এবং রবীন্দ্রনাথ মিশ্রের মন্তব্য, “এমন পুজো আগে করাইনি। মন্ত্রটাও একটু আলাদা করে বলতে হয়েছে। যাক, ভাল হলেই ভাল।”

সংক্রান্তির আগের দিন, মঙ্গলবার ভিড় পুণ্যার্থীদের। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

গঙ্গাসাগরে আসার পর থেকেই চাপা এনআরসি-উত্তেজনা মালুম হচ্ছে পদে পদে। পসরা নিয়ে বসা কম্বল বিক্রেতা, কপিল মুনির মন্দিরের কর্মী থেকে বেশ কয়েক বছর ধরে গঙ্গাসাগরে আগতদের বড় অংশই বলছেন, সরকার যতই ৩১ লক্ষ লোক এসে গিয়েছে বলে দাবি করুক, মেলা আদতে ফাঁকা। গঙ্গাসাগরের সিপিএম নেতা শেখ ইসমাইল মেলা-প্রাঙ্গণের সিটু অফিসে বসে বললেন, “নামখানা থেকে বেণুবন আর লট-এইট থেকে কচুবেড়িয়া দিয়ে জোয়ার-ভাটার সময় সামলে খুব বেশি হলে দিনে ২০ হাজার পুণ্যার্থী আসতে পারেন। আর যা বাস চলছে, তাতেও গত তিন দিনে সব মিলিয়েও ৩১ লক্ষ লোক আসা সম্ভব নয়। না-আসার বড় কারণ এনআরসি নিয়ে দুশ্চিন্তা।” চিন্তা যাচ্ছে না উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা রাজেন্দ্র যাদবেরও। “উত্তরপ্রদেশ থেকে তো কাউকেই এখানে দেখছি না। ফেরার পরে সব ঠিকঠাক থাকবে কি না, কে জানে,” তাঁর গলায় উদ্বেগ স্পষ্ট।

এনআরসি-ভীতি ও উদ্বেগের মধ্যেই আজ, বুধবার মকরসংক্রান্তির পুণ্যস্নান। সেখানে বিপদ এড়াতে মূল ভরসা উপকূলরক্ষী বাহিনীর আট জন বিশেষ ডুবুরি। একাধিক দলে ভাগ হয়ে জেমিনি নৌকা নিয়ে স্নানের জায়গার আশেপাশে থাকবেন তাঁরা। মেলা চলাকালীন জলপথে শত্রুর হানা ঠেকানোর ভারও উপকূলরক্ষীদের। তাই বঙ্গোপসাগরে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা বলয় গড়া হয়েছে। মেলার কন্ট্রোল রুম থেকে গোটা ব্যবস্থার তদারক করছেন কমান্ডান্ট অভিজিৎ দাশগুপ্ত।

এ দিন বার্জের ধাক্কায় কচুবেড়িয়া জেটির একাংশ ভেঙে পড়ে। কেউ হতাহত হননি। ওই অংশে তখন কেউ না-থাকায় বড় বিপদ এড়ানো গিয়েছে বলে জানায় পুলিশ। দুর্ঘটনার জেরে ওই জেটি থেকে প্রায় এক ঘণ্টা পরিবহণ বন্ধ থাকে। এ দিনই মেলায় হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন শিবপূজন শর্মা নামে বিহারের এক বৃদ্ধ। হেলিকপ্টারে তাঁকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gangasagar Mela CAA NRC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE