Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ধরপাকড়, তবু রাজ্যে চাঁদার জুলুম অব্যাহত

চাঁদার জুলুম রুখতে পুলিশ সব রকম পরিকাঠামো নিয়ে প্রস্তত বলে বৃহস্পতিবারই জানিয়েছিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ। কিন্তু তার পরেও রাজ্যের নানা প্রান্তে চাঁদার জুলুম বন্ধ হয়নি। চাঁদা না দেওয়ায় মারধরের ঘটনাও অব্যাহত।

গাড়ি আটকে চলছে কালীপুজোর চাঁদা তোলা। শুক্রবার তমলুক-পাঁশকুড়া রাজ্য সড়কের নিশ্চিন্তবসানে। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

গাড়ি আটকে চলছে কালীপুজোর চাঁদা তোলা। শুক্রবার তমলুক-পাঁশকুড়া রাজ্য সড়কের নিশ্চিন্তবসানে। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৩৬
Share: Save:

চাঁদার জুলুম রুখতে পুলিশ সব রকম পরিকাঠামো নিয়ে প্রস্তত বলে বৃহস্পতিবারই জানিয়েছিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ। কিন্তু তার পরেও রাজ্যের নানা প্রান্তে চাঁদার জুলুম বন্ধ হয়নি। চাঁদা না দেওয়ায় মারধরের ঘটনাও অব্যাহত।

শুক্রবার সকালেই নাকাশিপাড়ার জালসুখায় রাস্তা আটকে কালীপুজোর জন্য স্থানীয় একটি ক্লাবের ছেলেরা চাঁদা আদায় করছিল বলে অভিযোগ। বেথুয়াডহরি থেকে বীরপুরগামী একটি লরি আটকেও ক্লাব সদস্যেরা চাঁদা চান। তা নিয়ে দু’পক্ষের কথা কাটাকাটি শুরু হয়। অভিযোগ, ক্লাবের ছেলেরা এবং পুজো প্যান্ডেলের কর্মীরা লরির চালক এবং এক আরোহীকে মারধর করেন। ওই আরোহীর মাথা ফাটে। তাঁকে বেথুয়াডহরি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ এই ঘটনায় সুকুমার শীল নামে এক যুবককে ধরে। ক্লাব কর্তৃপক্ষ মারধর বা জোর করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

নাকাশিপড়ার মতোই কিছু ক্ষেত্রে অভিযোগ পাওয়ার পরে পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে। দাবিমতো চাঁদা না পেয়ে শিলিগুড়ি জংশন এলাকার রেল আবাসনের বাসিন্দা, রেলকর্মী কৃষ্ণ দাস ও তাঁর স্ত্রী সুমিতাদেবীকে বুধবার মারধরের অভিযোগ উঠেছিল ওই এলাকার একটি ক্লাবের ছেলেদের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনায় শুক্রবার দুপুরে পুলিশ নরসিংহ মাহাতো নামে এক ওই ক্লাবের এক কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেছে। নরসিংহবাবু তৃণমূল নেতা হিসেবেই এলাকায় পরিচিত। এ দিনই তাঁকে শিলিগুড়ি এসিজেএম আদালতে পেশ করা হয়। ধৃতের বিরুদ্ধে জোর করে টাকা আদায়, মারধরের অভিযোগ এনেছে পুলিশ। বিচারক নরসিংহবাবুর জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁকে তিন দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। বাকি অভিযুক্ত অন্তত ১০ জনের খোঁজ চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে, নরসিংহবাবু অভিযোগ উড়িয়ে দাবি করেছেন, ‘‘আমি ঘটনার সময় ছিলামই না। মিথ্যা মামলা হয়েছে।’’

চাঁদার জন্য জুলুমের অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতে শান্তিপুরের ঘোষপাড়ার একটি ক্লাবের সভাপতি জগন্নাথ চক্রবর্তী এবং সদস্য বিজয় বিশ্বাসকেও পুলিশ গ্রেফতার করেছে। স্থানীয় শ্রীকৃষ্ণ পল্লির বাসিন্দাদের অভিযোগ, চাঁদার জন্য জুলুম প্রতিবারই হয়। এ বার তা সীমা ছাড়িয়ে যায়। হুমকি দেওয়া হতে থাকে। তাই তাঁরা পুলিশের দ্বারস্থ হন বলে জানিয়েছেন। যদিও অভিযোগ উড়িয়ে ক্লাবের সম্পাদক মৃত্যু়ঞ্জয় ঘোষের দাবি, ‘‘আমরা কাউকেই চাঁদার জন্য চাপ দিইনি। আমাদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত হচ্ছে।”

উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার গেলেঞ্চা-দত্তফুলিয়া সড়কে গাড়ি থামিয়ে জোর করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে পাঁচ যুবককে যেমন ধরা হয়েছে, তেমনই হাবরার আশুতোষ কলোনি এলাকা থেকেও এক ব্যক্তিকে একই অভিযোগে ধরা হয়। এ ছবি যেমন রয়েছে, তেমনই তমলুক, নন্দকুমার, পাঁশকুড়ার বিভিন্ন রাস্তায় গাড়ি আটকে চাঁদা আদায় চোখে পড়েছে শুক্রবারও। এ দিন নন্দকুমার থানার রাজারামপুর গ্রামে রাজ্য সড়কের উপর দেখা গেল লরি থামাচ্ছে এক দল কিশোর। তাদের এক জন চালকের কেবিনে উঠে ৫০ টাকা দাবি করছে। হাতে চাঁদার রসিদ!

একই ছবি তমলুক থানার নিশ্চিন্তবসান গ্রামে। ভোর ভোর চাঁদার রসিদ হাতে হাজির একদল যুবক। ছোট-বড় লরি, মেশিনভ্যান, টোটো— থামানো হচ্ছে সব গাড়ি। চাঁদা আদায় হওয়ার পরেই মিলছে ছাড়। অভিযোগ, মূলত ভোরের দিকে আর সন্ধ্যার পরেই জুলুম বাড়ে। কারণ এ সময় পুলিশি টহল থাকে না-বললেই চলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Puja subscription Kali puja Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE