—ফাইল চিত্র।
১৭ ডিসেম্বর, ১৯৯৫: পুরুলিয়ার ঝালদা, ঘাটাঙ্গা, বেলামু, মারামু প্রভৃতি সাতটি গ্রামে ‘আন্টোনভ এএন-২৬’ বিমান থেকে অস্ত্রবর্ষণ। বন্দি বিমানআরোহী ব্রিটিশ নাগরিক পিটার ব্লিচ এবং লাটাভিয়ার সাত জনের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ দায়ের। তাদের বিরুদ্ধে আর্মস অ্যাক্ট, এক্সপ্লোসিভ সাব্স্ট্যান্স অ্যাক্ট এবং এয়ারক্রাফ্ট অ্যাক্টের ভিত্তিতে মামলা। (ঝালদা কেস নং ১৫২)। পিটার ব্লিচ-সহ ছ’জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
ফেব্রুয়ারি ২০০০: হাইকোর্টে নগর দায়রা আদালতের রায় চ্যালেঞ্জ।
১৪ এপ্রিল ২০০০: দিল্লি থেকে প্রেসিডেন্সি জেলে এসে পাঁচ বন্দির সঙ্গে দেখা করেন রুশ রাষ্ট্রদূত। বলেন, ওঁদের মুক্তির ব্যাপারে মস্কো-দিল্লি কথা হয়েছে। ভারত সরকার ওঁদের মুক্তি দিতে নীতিগত ভাবে রাজি হয়। কিছু দিন বাদে ছাড়া পায় পাঁচ লাটাভীয়।
২৫ অগস্ট ২০০২: মুক্তির দাবিতে প্রেসিডেন্সি জেলে আমরণ অনশন শুরু করেন ব্লিচ। তাঁর প্রশ্ন, একই অভিযোগে ধৃত বাকিদের ছাড়া হল, তিনি কেন মুক্তি পেলেন না? তাঁর সঙ্গে দেখা করে অনশন তোলার অনুরোধ করেন ব্রিটিশ ডেপুটি হাই কমিশনার বব ইয়ং।
২০ সেপ্টেম্বর ২০০২: ভারত-রাশিয়ার সম্পর্কের কথা ভেবে পাঁচ লাটাভীয়র মুক্তির জন্য রাষ্ট্রপতি বিশেষ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন— এই যুক্তিতে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় ব্লিচের মুক্তির আবেদন খারিজ করে দেন।
৩০ জানুয়ারি ২০০৪: রাষ্ট্রপতি কে আর নারায়ণন ব্লিচকে মার্জনা করেন।
৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৪: নিজের দেশে ফিরে যান পিটার ব্লিচ।
২০০৭: প্রধান অভিযুক্ত কিম ডেভির খোঁজ মেলে ডেনমার্কে। তাঁকে ফিরিয়ে আনতে না-পারায় বিচার শেষ হয়ে গেলেও মামলাটি বন্ধ করে দেওয়া যায়নি।
১ মে ২০০৮: বাজেয়াপ্ত বিমানটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে শুনানি হয় কলকাতা হাইকোর্টে। সেটি মুম্বই বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে থাকায় আধুনিকীকরণের কাজ শুরু করা যাচ্ছিল না। ফলে বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন। তাঁদের বক্তব্য, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না করলে টাকা ফেরত চলে যাবে। সরকারি আইনজীবী অসীমেশ গোস্বামী বলেন, উন্নয়নের কাজ যাতে বন্ধ না হয় সে জন্য বিমানটি স্থানান্তরের আবেদন জানানো হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে।
২০০৯: বিমানটি নিলামে কেনে কলকাতার একটি বেসরকারি প্রশিক্ষণকেন্দ্র।
৯ এপ্রিল ২০১০: ডেনমার্কে ডেভিকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে জারি হয়েছিল ইন্টারপোলের রেড কর্নার নোটিস।
৯ এপ্রিল ২০১০: ডেভিকে শর্তসাপেক্ষে ভারতের হাতে তুলে দিতে রাজি হয় ডেনমার্ক। শর্ত হল: ১) তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া চলবে না, ২) ভারতের আদালতে দোষী সাব্যস্ত হলেও কিমকে সাজা খাটার জন্য তিন সপ্তাহের মধ্যে ডেনমার্কে ফেরত পাঠাতে হবে।
১ নভেম্বর ২০১০: ডেনমার্কের নিম্ন আদালত তাঁকে ভারতের হাতে তুলে দিতে অস্বীকার করে। সিবিআইয়ের অনুরোধে ডেনমার্ক সরকার সেই রায়ের বিরুদ্ধে কোপেনহাগেনের এজলাসে আবেদন করে।
মে ২০১১: পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ভোটের মুখে প্রচারমাধ্যমে ব্লিচের সাক্ষাৎকার নিয়ে আলোড়ন।
৩০ জুন ২০১১: ডেনমার্কের শীর্ষ আদালতের পাঁচ সদস্যের বিশেষ বেঞ্চ সিদ্ধান্ত নেয় কিম ডেভিকে ভারতে পাঠানো হবে না।
উবাচ
কিম ডেভি: কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার রাজ্যের বামফ্রন্ট সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে আনন্দমার্গীদের কাছে এই অস্ত্রশস্ত্র পাঠানোর চেষ্টা করেছিল। “India’s central government agreed that we could defend ourselves. When MI5 informed RAW, the prime minister’s spy unit, they told us to keep them posted so that they could turn off the military radar when we made the drop. You could call my ambitions naïve, but I’m not so naïve that I would try to fly into India without some sort of shield”.
জনার্দন দ্বিবেদী: ‘‘মূল ঘটনার মাস পাঁচেকের মধ্যে বাম সরকারের সহযোগিতায় কেন্দ্রে মোর্চা সরকার আসে। ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। রহস্য উদ্ধারে তিনি কী করেছিলেন? কী করছিলেন প্রকাশ কারাত, সীতারাম ইয়েচুরি, গুরুদাস দাশগুপ্তেরা? তার পরেও তো কেন্দ্রে এনডিএ সরকার এসেছে। তারাও তো রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারল না!’’
মণীশ গুপ্ত (রাজ্যের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রসচিব): ‘‘আমার কাছে গোড়াতেই বিশদ খবর এসেছিল, ওই অস্ত্র ফেলা হয়েছে আনন্দমার্গীদের জন্য। এ রাজ্যের বামেদের সঙ্গে ওদের দীর্ঘকালের বৈরিতা ছিল। আদালতে অবশ্য কোনও মার্গীকে দোষী হিসাবে চিহ্ণিত করা যায়নি।’’ কেন এত দিনেও ঘটনার সুরাহা হল না? ‘‘কে বলল সুরাহা হয়নি? অভিযুক্তরা গ্রেফতার হয়েছিল। সাজা হয়েছিল। তার পর কী হল, সেটা বড় কথা নয়। রাষ্ট্রপতির ক্ষমার জেরে অথবা অন্য কারণে ওদের মুক্তি হয়েছিল। এ সব তো সবাই জানেন!’’
দিব্যচেতনানন্দ অবধূত (জনসংযোগ সচিব, আনন্দমার্গ প্রচার সঙ্ঘ): ‘‘আমরা তো প্রথম থেকেই বলছি, ওই ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই। আদালতও এ কথা বলেছে। বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছিল।’’
কী করছেন দুই মূল অভিযুক্ত
কিম ডেভি (নীলস হক ওরফে ক্রিশ্চান নেলসন): ১৯৮২ থেকে গুয়েতেমালায় স্কুল,
ভারতে কৃষিপ্রকল্প, রাশিয়ায় বাঘ-বৈঠক প্রভৃতিতে অংশ নিয়েছেন।
‘They call me a terrorist’ বইয়ের সুবাদে এখন পরিচিত লেখক।
এখন হাউজবোট তৈরির একটি কারখানার ম্যানেজার।
পিটার ব্লিচ: ছেলেবেলার শহর স্কারবরোয় হোটেল চালাচ্ছেন এককালের দাপুটে অস্ত্র ব্যবসায়ী।
নিজের কথায়, ‘‘ডেভিই আমাকে ওই অস্ত্রবর্ষণের কাজে নিয়োগ করেছিল।
ভারতের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা এখনও পুরো মেটেনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy