Advertisement
E-Paper

সরকারকে ৫ লক্ষ টাকার জমি দিলেন প্রান্তিক চাষি

নিজেদের সংসারেই নুন আনতে পান্তা ফুরনোর হাল। কিন্তু পরিবেশের সুস্থতা ফেরানোর লক্ষ্যে জৈবসার তৈরির প্রকল্প গড়তে পঞ্চায়েতকে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক টাকার একটি জমিদান করলেন এক প্রান্তিক চাষি!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:১৭
আনোয়ার হোসেন। নিজস্ব চিত্র।

আনোয়ার হোসেন। নিজস্ব চিত্র।

নিজেদের সংসারেই নুন আনতে পান্তা ফুরনোর হাল। কিন্তু পরিবেশের সুস্থতা ফেরানোর লক্ষ্যে জৈবসার তৈরির প্রকল্প গড়তে পঞ্চায়েতকে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক টাকার একটি জমিদান করলেন এক প্রান্তিক চাষি!

আনোয়ার হোসেন নামে নানুরের নিমড়া গ্রামের বাসিন্দা, বছর ষাটের ওই চাষি সম্প্রতি স্থানীয় কীর্ণাহার ১ পঞ্চায়েতের হাতে বিঘে খানেক জমির দানপত্র তুলে দিয়েছেন।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘মিশন নির্মল বাংলা’ কর্মসূচিতে কীর্ণাহারকে জঞ্জাল মুক্ত করতে একটি বিশেষ প্রকল্প নেয় ওই পঞ্চায়েত। ঠিক হয়, প্রতিটি পাড়ায় একটি করে পচনশীল এবং একটি করে অপচনশীল জঞ্জাল ফেলার ডাস্টবিন করা হবে। সপ্তাহে দু’দিন সেই সব জঞ্জাল সংগ্রহ করে জৈব সার তৈরির প্রকল্প গড়া হবে। কিন্তু জমির অভাবে ওই প্রকল্প গড়া নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। কীর্ণাহারের মতো একটি ক্রম বর্ধমান বাজার এলাকায় কেউ-ই জায়গা দিতে রাজি হননি। প্রশাসনের পাশে দাঁড়াতে শেষমেশ এগিয়ে আসেন আনোয়ার। কীর্ণাহার লাগোয়া পরোটায় তাঁর বিঘে খানেক জলা জমি ছিল। পঞ্চায়েত কর্তারা সেই জমিটির জন্য গিয়ে ধরেন তাঁকে। পরিকল্পনার কথা শুনে পঞ্চায়েত কর্তাদের কাছে নিজেই জমিটি দান করার কথা ঘোষণা করেন আনোয়ার।

বিঘে সাতেক জমি চাষ করেই সংসার চলে আনোয়ার হোসেনের। তিন ছেলে আলাদা থাকলেও ওই জমিটুকুতেই সবার ভাত-কাপড়ের সংস্থান করতে হয়। সব মিলিয়ে ১৪ জনের সংস্থান। জমি চাষ করে তা হয় না বললেই চলে। কোনও রকমে জোড়াতালি দিয়ে চালাতে হয়। কিন্তু সরকারি প্রকল্প গড়তে জমি দিতে সাত-পাঁচ ভাবেননি আনোয়ার। দৃশ্যত নিরাসক্ত গলায় তিনি বলেন, ‘‘জমিটা তো পড়েই ছিল। নিজেরা খরচ করে বাড়ি করতে পারতাম না। বিক্রি করে মোটা টাকা পেতাম ঠিকই। কিন্তু প্রধান-সহ অন্যান্য মান্যগণ্য ব্যক্তিরা যখন বাড়িতে এসে জমিটা চাইলেন, তখন আর না করতে পারিনি। তাছাড়া প্রকল্প হলে তো পরিবেশের সুস্থতা ফিরবে। আমরাও কমদামে জৈব সার পাবো।’’

ওই গ্রামেরই হানিফ শেখ, কল্যাণ দলুইরা জানান, অবস্থাপন্নরা যেখানে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, সেখানে সরকারি প্রকল্পের জন্য জমি দিয়ে আনোয়ার গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। অন্য দিকে, পঞ্চায়েত প্রধান শিবরাম চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘জায়গার অভাবে প্রকল্প গড়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছিল। আনোয়ার জমি দিয়ে সেই সংশয় দূর করে দিয়েছেন। উনি নিঃর্শতেই জমি দিয়েছেন। কিন্তু যে ভাবে নিজেদের আর্থিক প্রতিকূলতাকে অগ্রাহ্য করে পাঁচ লক্ষাধিক টাকার জমিদান করছেন, সে কথা মাথায় রেখে পঞ্চায়েতও সময় এবং সুযোগ মতো ওই পরিবারের পাশে দাঁড়াবে।’’

land farmer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy