Advertisement
E-Paper

নেই ডেবিট কার্ড, নগদেও টান

মেয়ের বিয়ের কথা ভেবে দীর্ঘ দিন ধরে একটু একটু করে টাকা জমিয়েছিলেন কাননবাবু। হাতে রাখলে পাছে খরচা হয়ে যায়, তাই টাকা রেখেছিলেন এলাকার সমবায় ব্যাঙ্কে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৩০

মেয়ের বিয়ের কথা ভেবে দীর্ঘ দিন ধরে একটু একটু করে টাকা জমিয়েছিলেন কাননবাবু। হাতে রাখলে পাছে খরচা হয়ে যায়, তাই টাকা রেখেছিলেন এলাকার সমবায় ব্যাঙ্কে। কিন্তু বিয়ে যখন পাকা হল, টাকা তুলতে গিয়ে মাথায় হাত ছাতনার শালডিহা পঞ্চায়েতের সুড়িবেদ্যা গ্রামের বাসিন্দা কানন খাঁর! ব্যাঙ্কে টাকা নেই। থুড়ি, টাকা আছে তাঁর অ্যাকাউন্টে, কিন্তু নোট নেই।

এই থেকেও নেই ব্যাপারটা যে কী সেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না পেশায় দিনমজুর কানন খাঁ। অ্যাকাউন্টে জমা টাকা খরচ করার জন্য নগদ তোলা ছাড়া তাঁর কাছে অন্য কোনও উপায় নেই। ডেবিট কার্ড নেই। কাননবাবুর আক্ষেপ, ‘‘দরকারের সময়ে নিজের টাকা নিজেই তুলতে পারছি না। কত কষ্টে জমানো টাকাগুলো!’’ কাননবাবু বিপাকে পড়ে ছুটে গিয়েছিলেন পঞ্চায়েত প্রধান টেলু করের কাছে। তিনি তাঁকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাঙ্কে গিয়ে ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু তাতেও ভবি ভোলার নয়। টেলুবাবু বলেন, ‘‘গোটা পঞ্চায়েত এলাকায় কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক নেই। অধিকাংশ মানুষ কমপুরের ওই সমবায় ব্যাঙ্কের উপরে নির্ভর করে থাকেন। তাঁরা এখন গ্রাহকদের টাকা দিতে না পারায় খুবই সমস্যা হচ্ছে।’’

ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁদের হাতেই নগদ টাকা নেই, গ্রাহকদের দেবেন কী করে!

শুধু কমলপুর নয়, জেলার অধিকাংশ সমবায় ব্যাঙ্কের ছবিটাই এরকমের। কিন্তু কেন? বাঁকুড়ার এআরসিএস দেবসুন্দর মাইতি জানান, একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের পরে সমবায়ের বাকি সমস্ত টাকা গচ্ছিত থাকে ব্যাঙ্কে। তিনি বলেন, ‘‘খুবই কঠিন পরিস্থিতি। রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে চাহিদা মতো টাকা আসছে না। জেলার সমবায় ব্যাঙ্কগুলিতে টাকার আকাল। গ্রাহকদের ঠিক মতো পরিষেবা দেওয়া যাচ্ছে না।’’ জেলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকার মানুষজন সমবায় ব্যাঙ্কের উপরে নির্ভর করেন। সমস্ত শাখাতেই নগদের অভাব হওয়ায় মুশকিলে পড়েছেন তাঁরা। পর্যাপ্ত টাকার যোগান কবে আসে, সে দিকে তাকিয়ে রয়েছেন সমবায় ব্যাঙ্কের আধিকারিকেরাও।

শুধু গ্রামাঞ্চলের শাখা নয়, সমস্যায় পড়েছেন খোদ বাঁকুড়া জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের শহরের শাখা গ্রাহকেরাও। গ্রাহকদের একাংশ জানান, সেভিংস অ্যাকাউন্ট থেকে দৈনিক দু’হাজার টাকার বেশি তুলতে পারছেন না তাঁরা। ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন বিষ্ণুপুর টাউন কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের গ্রাহকেরাও। বিষ্ণুপুরের মলডাঙা এলাকার বাসিন্দা লক্ষ্মীকান্ত নন্দী বলেন, “বাবার শ্রাদ্ধের জন্য হাতে অনেক টাকার প্রয়োজন। সেই টাকা তুলতেই টাউন কো-অপারেটিভে গিয়েছিলাম। জমানো টাকা তুলতে পারিনি। এখন এত টাকা কোথা থেকে জোগাড় করব কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।” টাকা তুলতে না পেরে সমস্যায় পড়েছেন ওই সমবায় ব্যাঙ্কের গ্রাহক হলধর দাসও। তিনি বলেন, “হাতে নগদ নেই। ব্যাঙ্কে গেলে কোনও দিন এক হাজার, কোনও দিন দু’হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।”

বিষ্ণুপুর টাউন কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান শ্যামাপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় সমস্যার কথা মেনে নিচ্ছেন। তিনি বলেন, “খুব টানাটানির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। কয়েকটি ব্যাঙ্ক ও রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে পাওয়া টাকা দিয়ে কোনও মতে পরিষেবা চলছে। যথেষ্ট পরিমান টাকা কোথাও পাচ্ছি না। চিকিৎসার খরচ, বিয়ে বা শ্রাদ্ধবাড়ির জন্য যাঁরা টাকা তুলতে আসছেন আমরা যতটা পারছি টাকা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’’

কার্ডে লেনদেনের উপায় নেই। নগদও জুটছে না। সমবায় ব্যাঙ্কের গ্রাহকেরা এই পরিস্থিতিতে নতুন নোটের পথ চেয়ে রয়েছেন।

Marriage ceremony demonetisation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy