Advertisement
E-Paper

রবিবারে কুসংস্কার বিরোধী ক্লাস

জানুয়ারির রবিবারগুলিতে সবাই যখন চড়ুইভাতিতে ব্যস্ত, তখন রাখাশোল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি ঘরে কয়েকজন ছাত্রছাত্রীকে পড়াচ্ছিলেন পঞ্চানন। জানা গেল, রবিবারগুলিতেও এলাকার সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ক্লাস নেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:০৮
স্কুলের বারান্দায় দল েবঁধে। নিজস্ব চিত্র

স্কুলের বারান্দায় দল েবঁধে। নিজস্ব চিত্র

জঙ্গল লাগোয়া গ্রাম রাখাশোল। মূলত আদিবাসী মানুষজনের বসবাস। একসময় এই অঞ্চল অশিক্ষার অন্ধকারে ডুবে ছিল। আর যেখানে অশিক্ষা সেখানেই কুসংস্কারের কুশিক্ষা তার জাল ছড়ায়। তবে সেই কুশিক্ষার আঁধার কাটিয়ে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন এলাকার এক আদিবাসী যুবক তথা পেশায় শিক্ষক পঞ্চানন মুর্মু। দিচ্ছেন কুসংস্কার বিরোধী শিক্ষার পাঠ।

জানুয়ারির রবিবারগুলিতে সবাই যখন চড়ুইভাতিতে ব্যস্ত, তখন রাখাশোল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি ঘরে কয়েকজন ছাত্রছাত্রীকে পড়াচ্ছিলেন পঞ্চানন। জানা গেল, রবিবারগুলিতেও এলাকার সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ক্লাস নেন তিনি। সঙ্গে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়তে নেওয়া হয় বিশেষ ক্লাস।

পঞ্চানন মুর্মুর কথায়, ‘‘আমাদের জঙ্গল ঘেরা গ্রামের আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা করাতে গিয়ে অনেক প্রতিকূলতার সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়। পড়াশোনার বিষয়ে ওদের অনেকেরই অনেক অসুবিধা থাকে। কিন্তু বাড়ির লোকেরা সেরকম ভাবে ওদের সাহায্য করতে পারে না।’’ পঞ্চানন জানান, সেই কারণেই সাহিত্য মুর্মু এবং কয়েক জন আদিবাসী যুবকের সঙ্গে একযোগে তিনি গঠন করেন ‘পাত্রসায়র আদিবাসী ওয়েলফেয়ার সমিতি’। বছর তিনেক আগে যখন তারা এই সমিতি গঠন করেন, তখন তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়ানো। সঙ্গে অবশ্যই জঙ্গল ঘেরা গ্রামগুলির ছাত্র ছাত্রীদের পড়াশোনার বিশেষ সুযোগ সুবিধা করে দেওয়া। সাহিত্য মুর্মু বলেন, ‘‘আমাদের খুব সুবিধা হয়ে যায় যখন আমাদের সঙ্গে যোগ দেন পাত্রসায়র এলাকার অর্ক মুখোপাধ্যায়, অত্রি মুখোপাধ্যায়, পিন্টু দাস, তন্ময় গঙ্গোপাধ্যা, এবং শুভদীপ মুখোপাধ্যায়ের মতো কয়েকজন যুবক যুবতী।’’

অর্ক জানান, কিছুদিন আগেই তাঁরা বাঁকুড়ার ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির সাহায্যে চাদনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থানীয় আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি শিবির করেছিলেন। সেই শিবিরে দারুণ সাড়া মিলেছে। এই ধরনের শিবিরের আয়োজন করার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে কুসংস্কার বিরোধী প্রচার করে থাকেন বলে জানিয়েছেন অর্ক।

বিগত দু’তিন বছর ধরেই পঞ্চাননবাবুরা ‘ফ্রি কোচিং’-এর পাশাপাশি সমাজ সচেতনতামূলক কাজ করে যাচ্ছেন। বিশেষ ক্লাসে উপস্থিত নবম শ্রেণির ছাত্রী দেবী মুর্মু বলে, ‘‘এখন আমরা জানি সাপে কাটলে কী করা উচিত। গ্রামের লোকেদেরও গুনিনের কাছে যেতে বারণ করি।’’ জানা গেল, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পাশাপাশি স্বাস্থ্য সচেতনতা, এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখার কাজও করেন পঞ্চাননবাবুরা। কখনও নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে আবার কখনও কোনও সহৃদয় ব্যক্তির অর্থ সাহায্য নিয়ে। তাঁদের এই প্রচেষ্টায় পাশে দাঁড়ান দূর দূরান্তের অনেক শিক্ষক।

Teacher Class Superstition
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy