শিক্ষামন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, কিন্তু সেই নির্দেশিকা না আসায় স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি নিয়ে জটিলতা কাটেনি পুরুলিয়া জেলার বহু স্কুলে। উদ্বেগে অভিভাবকেরাও।
রাজ্যের বিভিন্ন হাইস্কুলের মতো পুরুলিয়ার স্কুলগুলিতেও এখন পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রধান শিক্ষকদের একাংশের কথায়, শিক্ষা দফতর থেকে আগে জানানো হয়েছিল, পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য ১০ বছরের বেশি এবং ১১ বছরের কম বয়স থাকতে হবে। কিন্তু এখন তাঁদের অভিজ্ঞতা, ১০ বছরের কম ছেলেমেয়েদেরও পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করতে আনা হচ্ছে। এ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়।
খবর পেয়ে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমকে জানান, সবাই ভর্তি হবার সুযোগ পাবে। কেউ শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না। জেলা শিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, তাঁরাও সংবাদমাধ্যমে খবরটা দেখেছেন। কিন্তু শিক্ষা দফতর থেকে এ নিয়ে কোনও সার্কুলার না আসায় স্কুলগুলিকে তাঁরা মন্ত্রীর কথা মতো ভর্তি করতে বলতে পারছেন না। জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শুষেন মাঝির অবশ্য আশ্বাস, ‘‘শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী দু’-এক দিনের মধ্যে নতুন নির্দেশিকা সবাই পেয়ে যাবেন বলে আশা করছি। তবে যতক্ষণ না নতুন নির্দেশিকা আসছে, ততক্ষণ আগের নির্দেশ অনুযায়ীই ভর্তির কাজ চলবে।’’
ফলে পঞ্চমে ভর্তি করা নিয়ে জট পাকিয়েই রয়েছে। মানবাজারের পোদ্দারপাড়ার বাসিন্দা উত্তম দত্ত সম্প্রতি ছেলেকে মানবাজারের রাধামাধব ইনস্টিটিউশনে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করাতে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘১০ বছর পূর্ণ হতে আমার ছেলের এখনও চার মাস দেরি আছে। সেই কারণ দেখিয়ে স্কুল ওকে ভর্তি নিতে চাইছে না। উল্টে তাকে চতুর্থ শ্রেণিতেই আরও এক বছর রেখে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে!’’ পোদ্দারপাড়ার বাসিন্দা আনন্দ দাস, স্বরূপ দত্ত এ রকম আরও অনেক অভিভাবক এই সমস্যায় ভুগছেন।
পুঞ্চার চাঁদড়া হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক গোপালচন্দ্র দে বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলেও এই ধরনের আবেদন নিয়ে কয়েকজন অভিভাবক এসেছিলেন। আমি তাঁদের জানিয়েছি, শিক্ষা দফতরের নির্দেশ মানতেই হবে।’’ আবার মানবাজার গার্লস স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি মনোজ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই ব্লক এলাকায় মেয়েদের একমাত্র হাইস্কুল বলে এখানে ভর্তির চাপ বেশি। আমরা ভর্তি নিলেও কম বয়েসি ছাত্রীদের অভিভাবকদের জানিয়ে দিয়েছি, শিক্ষা দফতরের নির্দেশিকা মেনে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার বয়স মানতে হবে। অভিভাবকদের কাছে এই মর্মে মুচলেকা নিচ্ছি।’’ একটি হাইস্কুলের এক প্রধান শিক্ষক জানান, নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় নাম নিবন্ধীকরণের জন্য পাঠাতে হয়। তখন সেই ছাত্রছাত্রীর তার বয়স ১৪ বছরের বেশি থাকা চাই, এটাই নিয়ম।
স্বপন সুব্রত হাইস্কুলের পরিচালন কমিটির সভাপতি অপূর্ব সিংহ-র মতে, ‘‘সাধারণত বেসরকারি স্কুলের পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি। কিছু স্কুলে কেজি ওয়ান বা কেজি টুতে ভর্তি করার সময় বয়স দেখা হচ্ছে না। সেই সময় খেয়াল রাকলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির এই সমস্যায় পড়তে হতো না।’’ আপাতত শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাস মতো নির্দেশিকা আসার অপেক্ষায় অভিভাবকেরা।