Advertisement
০২ মে ২০২৪
Migrant Workers

স্কুলছুট পরিযায়ীরা কেন ফিরবে, জবাব নেই

পরীক্ষার্থী কেন কমল, খোঁজ নিতে বাড়ি বাড়ি গিয়েছিলেন শিক্ষকেরা। বহু ক্ষেত্রেই তাঁরা দেখেছেন, সংসারের রুটিরুজির ব্যবস্থা করতে তাঁদের ছাত্রেরা বাইরে কাজে গিয়েছেন।

করোনা-কালে বাড়ির পথে পরিযায়ী শ্রমিকেরা।

করোনা-কালে বাড়ির পথে পরিযায়ী শ্রমিকেরা। —ফাইল চিত্র।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২৩ ০৭:৫৮
Share: Save:

করোনাকালে স্কুলের পাট চুকিয়ে বহু নাবালক উপার্জনের জন্য ভিন রাজ্যে কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েছিল। তাদের গায়ের সেঁটে গিয়েছে পরিযায়ী শ্রমিকের তকমা। কিন্তু রাজ্য সরকার পরিযায়ীদের জন্য যে সব সুবিধা নিয়ে আসার কথা জানিয়েছে, সেখানে আবেদনকারীর বয়স হতে হবে ১৮-৬০ বছর। তাহলে ওই নাবালক-পরিযায়ীদের কী হবে? শিশু শ্রমিকদের স্কুল বন্ধ থাকায় তাঁদের স্কুলে ফেরানোও বিশবাঁও জলে। তাদের সমস্যায় কে পাশে দাঁড়াবে, উঠতে শুরু করেছে সে প্রশ্নও।

করোনা পরিস্থিতির পরে নাবালকদের মধ্যে ভিন রাজ্যে কাজে চলে যাওয়া ও নাবালিকা বিয়ের সংখ্যা বাঁকুড়া জেলায় অনেকখানি বেড়েছে বলে নানা সমীক্ষায় উঠে এসেছে। চলতি বছর জেলায় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ব্যাপক পরিমাণে কমার পিছনেও স্কুলছুট বড় কারণ বলে অনেকের দাবি। ২০২২ সালে জেলায় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিল ২৫,৫২৭। এ বার সেই সংখ্যাটা কমে দাঁড়ায় ১৪,০৬০ জনে।

পরীক্ষার্থী কেন কমল, খোঁজ নিতে বাড়ি বাড়ি গিয়েছিলেন শিক্ষকেরা। বহু ক্ষেত্রেই তাঁরা দেখেছেন, সংসারের রুটিরুজির ব্যবস্থা করতে তাঁদের ছাত্রেরা বাইরে কাজে গিয়েছেন। বাঁকুড়া ২ ব্লকের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও হিড়বাঁধ ব্লকের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান, ছাত্রেরা যে পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে বাইরে কাজে গিয়েছে, তা স্কুল শিক্ষা দফতরে মৌখিক ভাবে জানানো হয়। ওই পড়ুয়াদের ফোনে বুঝিয়েও ফেরানো যায়নি। তাদের অভিভাবকেরাও সন্তানদের আর স্কুলে পাঠাতে চাননি।

মাধ্যমিক পরীক্ষায় না বসা বাঁকুড়া ২ ব্লকের এক নাবালক পরিযায়ী শ্রমিকের বাবা বলেন, “করোনা পরিস্থিতিতে বাড়িতে অর্থাভাব দেখা দিয়েছিল। স্কুল কবে খুলবে ঠিক ছিল না। তখন এলাকার অনেকে দল বেঁধে বাইরে কাজে যাচ্ছিল।ছেলেকেও পাঠিয়ে দিই। সে বাইরে ভালই কাজ করছে।” ইঁদপুরের এক স্কুলছুট ছাত্রের বাবা বলেন, “এখন পড়াশোনা করে রোজগারের সুযোগ কোথায়? এখন থেকেই ছেলে কাজে লেগে পড়েছে, টাকা রোজগার করছে, এটা আমাদের পরিবার আর ওর জন্যও ভাল।”

রাজ্যে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য নানা প্রকল্প থাকলেও পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য কোনও সুবিধা ছিল না। কিন্তু স্কুলছুট নাবালক পরিযায়ীদের কী হবে?

জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “নাবালকদের কাজের অনুমতিই দেওয়া হয় না। এটা শ্রম-আইনের বিরোধী। ফলে কোনওভাবেই তাদের বৈধ শ্রমিকের তকমা দেওয়া যাবে না।” তিনি জানান, স্কুলছুট হয়ে যারা বাইরে কাজ করছে, তাদের ফিরিয়ে এনে ফের স্কুলমুখী করতে নানা চেষ্টা চালানো হচ্ছে সরকারি ভাবে।’’

কিন্তু রোজগার ফেলে কেন তারা ফিরবে? শিশু শ্রমিকদের কাজ থেকে ছাড়িয়ে এনে শিশু শ্রমিকদের স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছিল। প্রশাসন সূত্রে খবর, বাঁকুড়া জেলায় ৪৭টি শিশু শ্রমিকদের স্কুল ছিল। সেখানে ১৪২৪ জন পড়ুয়া ছিল। স্কুলে মিড-ডে মিলের পাশাপাশি পড়ুয়াদের মাসিক ৪০০ টাকা করে দেওয়া হত। বছরখানেক ধরে সেই স্কুলও বন্ধ।

অন্য দিকে, প্রাপ্তবয়স্ক পরিযায়ী শ্রমিকদের একটা বড় অংশই সরকারের এই সুবিধা দেওয়ার বদলে রাজ্যেই কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। অন্ধ্রপ্রদেশের একটি স্টিল কারখানার শ্রমিক রানিবাঁধের বাসিন্দা গুরুপদ কর্মকার, পিন্টু রায় বলেন, “আমরা রাজ্যেই কাজ করতে চাই। পরিবারের কাছাকাছি থাকতে চাই। কিন্তু কোভিডের সময় গ্রামে ফিরে খোঁজ করেও কাজ পাইনি। অন্ধ্রপ্রদেশে মাছ ব্যবসায় যুক্ত একটি সংস্থার প্যাকেজিং-এর কর্মী ইঁদপুরের যুবক সমরেশ দে জানান, উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে কম্পিউটারের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। শিক্ষাগত যোগ্যতার নিরিখে কোথাও কাজ না পেয়ে কলকাতায় একটি বিস্কুট কারখানায় ঠিকা শ্রমিক হিসেবে যোগ দেন। সেখানে ঠিকঠাক বেতন না মেলায় অন্ধ্রপ্রদেশে গিয়েছেন। তিনি বলেন, “শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতেও রাজ্যে কাজ পাইনি। রাজ্য সরকার কাজের ব্যবস্থা করুক।” (শেষ)

তথ্য সহায়তা: শুভেন্দু তন্তুবায়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Migrant Workers bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE