পুরুলিয়া শহরে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। শনিবার পর্যন্ত শহরে ১৭ জন ডেঙ্গি আক্রান্তের সন্ধান মিলেছিল। সোমবার আরও ২১ জনের রক্তের নমুনায় ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। এই নিয়ে শহরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৩৫।
এত দিন শহরের দেশবন্ধু রোডের একটি শপিংমল লাগোয়া এলাকা থেকেই ডেঙ্গি আক্রান্তের সন্ধান মিলছিল। সোমবার যে ২১ জনের রক্তের নমুনায় ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে, তাঁরা সকলেই এই এলাকারই বাসিন্দা। শহরের একটি অঞ্চল থেকে এত সংখ্যক ডেঙ্গি আক্রান্তের সন্ধান মেলায় গোটা পরিস্থিতিকে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিলকুমার দত্ত জানান, ‘‘আরও ২১ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। দফতর বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।’’
শনিবার পর্যন্ত ১১ জনের রক্তের নমুনায় ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছিল। যাঁরা সকলেই মহালক্ষ্মী বাগান লেন, আনন্দ সরণি বা লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের মহামারী বিশেষজ্ঞ সতীনাথ ভুঁইয়া জানান, মাঝ খানে একদিন রক্ত পরীক্ষা বন্ধ থাকায় রবিবার রক্ত পরীক্ষা হয়নি। দু’দিনের সংগৃহিত রক্ত এক সঙ্গে পরীক্ষা হওয়ায় সংখ্যাটি একটু বেশি মনে হচ্ছে। তবে স্বাস্থ্য দফতর বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েই দেখছে। জানা গিয়েছে, নতুন করে যে ২১ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে, তাঁদের মধ্যে তিন জন নির্মাণকর্মী। যাঁরা শহরের বাইরে অন্য জেলা থেকে এই এলাকায় নির্মীয়মাণ বাড়ি গুলিতে কাজ করছেন। বাকি ১৫ জন এই এলাকার বাসিন্দা।
আক্রান্তদের আট জন পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। অনেকেই বাইরে চিকিৎসা করানোর জন্য গিয়েছেন। কেউ কেউ বেসরকারি নার্সিংহোমেও ভর্তি রয়েছেন। রবিবার রাতের এবং সোমবারের টানা বৃষ্টির জেরে নিকাশি নালাগুলির জমা জলে এডিস মশার লার্ভা জন্মেছিল বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। তা বয়ে চলে যাওয়ায় এক দিকে স্বস্তি দিয়েছে, অন্য দিকে পুরসভা বা স্বাস্থ্য দফতরের চিন্তা বাড়িয়েছে বৃষ্টির ফলে অন্যত্র জল জমায়। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘বৃষ্টির ফলে ফের বিভিন্ন জায়গায় জল জমবে। আর ওই এলাকায় যে হারে এডিস মশার লার্ভা মিলেছে, বা ডেঙ্গি আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে তাতে নতুন করে সংক্রমণের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।’’
এই পরিস্থিতিতে এলাকার নির্মীয়মাণ বাড়িগুলি যে অন্যতম সমস্যা তা মানছে পুরসভাও। শহরের একাধিক শপিংমল, মাল্টিপ্লেক্স এবং বসতি রয়েছে যে এলাকায় সেই এলাকায় ডেঙ্গি এ ভাবে মহামারীর আকার নেওয়ায় আজ, মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসছে স্বাস্থ্য দফতর ও পুরসভা। পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের নোডাল অফিসার সুমিত বক্সী জানান, এই বৈঠকে নির্মীয়মাণ বহুতল ও বাড়ির মালিকদের ডাকা হয়েছে। শুধু ওই এলাকা নয়। শহরে নির্মাণ কাজ চলছে, এমন এলাকার মালিকদেরও ডাকা হতে পারে।