Advertisement
০৫ মে ২০২৪

যামিনী রায় পুরস্কার আড়শার স্কুলকে

দূর থেকে দেখলে মনে হবে সাজানো গোছানো বাংলো। গাছ গাছালিতে ঘেরা। কাছে এলেই চোখে পড়বে সীমানা প্রাচীরের গায়ে আটকে দেওয়া হয়েছে রবীন্দ্রনাথের সহজ পাঠের প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগের ছোট ছোট ছড়া।

পড়া শেষে বাগানের পরিচর্চা।—নিজস্ব চিত্র।

পড়া শেষে বাগানের পরিচর্চা।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আড়শা শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:৫৬
Share: Save:

দূর থেকে দেখলে মনে হবে সাজানো গোছানো বাংলো। গাছ গাছালিতে ঘেরা। কাছে এলেই চোখে পড়বে সীমানা প্রাচীরের গায়ে আটকে দেওয়া হয়েছে রবীন্দ্রনাথের সহজ পাঠের প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগের ছোট ছোট ছড়া। দেওয়ালে জ্বলজ্বল করছে যামিনী রায়ের ছবি। সুদৃশ তোরণ পার হয়ে কাঞ্চনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অঙ্গনে প্রবেশ করলে যে কারও মন ভাল হয়ে যেতে বাধ্য।

দৈনন্দিন পড়াশোনার পাশাপাশি পড়ুয়াদের মধ্যে পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক সচেতনতা গড়ে তুলে যামিনী রায় পুরস্কার পাচ্ছে পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলের ওই প্রাথমিক স্কুল। আজ বৃহস্পতিবার, কলকাতার টাউন হলে আড়শার এই স্কুলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। জেলা সর্বশিক্ষা মিশনের প্রকল্প আধিকারিক প্রদীপ পতি জানিয়েছেন, পুরস্কার তুলে দেবেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। প্রতি বছর শিক্ষা দফতর রাজ্যের তিনটি প্রাথমিক ও তিনটি মাধ্যমিক স্কুলকে এই পুরস্কার দেয়।

অযোধ্যা পাহাড়ের নীচে বেলডি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কাঞ্চনপুর প্রাথমিক স্কুলটি ২০১৩ সালে নির্মল বিদ্যালয় এবং পরের বছর শিশুমিত্র পুরস্কার জিতেছে। প্রদীপবাবু জানিয়েছেন, স্কুলে শৌচাগার আছে কিনা কিংবা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি দেখেই নির্মল বিদ্যালয় পুরস্কার দেওয়া হয়। অন্য দিকে, স্কুলের সঙ্গে পড়ুয়াদের সংযোগ কতটা গড়ে উঠেছে, তারা স্কুলে গিয়ে লেখাপড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশকে কতটা ভালোবাসছে, এই সমস্ত বিষয় বিবেচনা করে শিশুমিত্র পুরস্কার দেওয়া হয়। এই দু’টি পুরস্কার যে সমস্ত স্কুল পেয়ে থাকে, সেগুলির নামই যামিনী রায় পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হয়। রাজ্যস্তরের বিচারকেরা বিভিন্ন স্কুল ঘুরে বাছাই করে।

দৈনন্দিন পড়াশোনার পাশাপাশি পড়ুয়াদের মধ্যে সাংস্কৃতিক চেতনা, পরিবেশ সচেতনতা গড়ে তোলা, পাঠ্য বইয়ের বাইরের অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জানার আগ্রহ, খেলাধূলার প্রতি আগ্রহ গড়ে তোলার মতো বিষয়গুলিই কাঞ্চনপুরকে আর পাঁচটা স্কুল থেকে আলাদা করেছে। দেওয়ালে আঁকা রয়েছে পুরুলিয়ার ছৌ নৃত্যের বিভঙ্গ, ভাদু বা টুসু পরবের অত্যন্ত পরিচিত দৃশ্য। জঙ্গলমহলের স্বধীনতা সংগ্রামী বীরসা মুন্ডার আবক্ষ মূর্তিও রয়েছে স্কুল চত্বরে। ফুল ও পাতাবাহারের সঙ্গে রয়েছে কালমেঘ, অ্যালোভেরা, তুলসী, বাসকের মতো ওষধি গাছও। স্কুলের শিক্ষক সলিল কুমার মাঝি বলছিলেন, ‘‘আমাদের ৯১ জন পড়ুয়া। স্কুলের বাগান ওরা নিজেরাই পরিচর্যা করে।’’ তিনি জানান, স্কুল লাইব্রেরিতে সাধারণ জ্ঞান থেকে শিশুদের ভাললাগার অনেক বই রয়েছে। পড়ুয়ারা সেই লাইব্রেরির নিয়মিত পাঠক। পড়ুয়াদের জন্য পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা রয়েছে। চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া মানিক মাহালি, ইন্দ্রজিৎ মুদি, তৃতীয় শ্রেণির রাজু মাহালি, লতিকা মুদিরা বলে, ‘‘স্কুলের বাগান আমাদের খুব প্রিয়। এই বাগানে বাসক, থানকুনি পাতা সহ নানা গাছ রয়েছে, যা আমাদের অসুখ-বিসুখে কাজে লাগে।’’

গ্রামের বাসিন্দা সুভাষচন্দ্র মুদির কথায়, ‘‘শিক্ষক-ছাত্রছাত্রী মিলে স্কুলে সুন্দর পরিবেশ তৈরি করেছেন।’’ সলিলবাবু বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের সাংস্কৃতিক বা পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে কতটা সচেতন করতে পেরেছি, যামিনী রায় পুরস্কার তারই স্বীকৃতি বলা যায়। দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arsha High School
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE