Advertisement
E-Paper

ঘর পেল জেলার তিন ঠাঁইহারা

দু’মুঠো ভাত জোগাড়ের চিন্তায় স্বপ্ন দেখার জোরটাও ফুরিয়ে যাচ্ছিল ক্রমশ। সেই লক্ষ্মীমণি বেসরা আর আদরি বেসরা এ বারে ঘর পেল। ঠাঁই নয়, ঘর। মা বাবা ভাই বোন সব নিয়ে। ওদের সঙ্গে কলকাতার নতুন ঠিকানায় পাড়ি দিল জেলার আর এক খুদে তারিণী গোপও।

সমীর দত্ত

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:১০
ভরসা: চাইল্ড লাইনের সদস্যদের সঙ্গে খুদেরা। নিজস্ব চিত্র

ভরসা: চাইল্ড লাইনের সদস্যদের সঙ্গে খুদেরা। নিজস্ব চিত্র

মা বাবা নেই। দুই বোন খাবারের সন্ধানে ঘুরে ঘুরে বেড়াত। মায়ায় পড়ে শিক্ষক বা রাঁধুনিরা কখনও স্কুলের মিড-ডে মিল খাইয়ে দিতেন। কিন্তু সকাল সকাল ব্যাগ কাঁধে স্কুলে যাওয়া, ছুটি হলেই বাড়ির দিকে দৌড়— এ সব কিছুই ছিল না। দু’মুঠো ভাত জোগাড়ের চিন্তায় স্বপ্ন দেখার জোরটাও ফুরিয়ে যাচ্ছিল ক্রমশ। সেই লক্ষ্মীমণি বেসরা আর আদরি বেসরা এ বারে ঘর পেল। ঠাঁই নয়, ঘর। মা বাবা ভাই বোন সব নিয়ে। ওদের সঙ্গে কলকাতার নতুন ঠিকানায় পাড়ি দিল জেলার আর এক খুদে তারিণী গোপও।

‘মহীনের ঘোড়াগুলি’-র গানে আছে রাবেয়া বা রুকসানার কথা। শহরেরই কোনও বাগানে তারা ফুল হয়ে ফুটে থাকে। কিন্তু কী ভাবে অভিভাবকহীন, সহায়হীন, সম্বলহীন মেয়েরা সব একে একে ফুল হয়ে যায়? কেউ পাচার হয়ে হারিয়ে যায়। স্রোতের মতো ভেসে কখনও গিয়ে পড়ে দোকানে, গ্যারাজে। শিশুশ্রমিক হিসেবে। এই ব্যাপারটাই রুখতে কাজ করে বিভিন্ন সংগঠন। এসওএস চিলড্রেন’স ভিলেজ তেমনই একটি। সহায়হীন ছোট ছেলে মেয়েদের পারিবারিক কাঠামোর মধ্যে বড় করে তোলার কাজ করে তারা। পুরুলিয়া জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘সম্প্রতি পুরুলিয়ার তিন ছেলে মেয়েকে ওখানে পাঠানো হয়েছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণও পাবে। সবটাই বিনা খরচে।’’

কী ভাবে খোঁজ মিলল এই তিন জনের?

চাইল্ড লাইনের জেলা কো-অর্ডিনেটর অশোক মাহাতো জানান, লক্ষ্মীমণি ও আদরি দুই সহোদর বোন। লক্ষ্মীমণির বয়স বছর আষ্টেক, আদরি বছর ছয়েকের। হুড়া থানার কলাবনি গ্রামে ওদের বাড়ি ছিল। চাইল্ড লাইনের সদস্যরা এলাকায় কাজ করার সময়ে স্থানীয় বাসিন্দারা ওদের খোঁজ দেন। বাবা মা নেই। আত্মীয়ও নেই কেউ। পড়শিদের বাড়িতে চেয়েচিন্তে খাওয়া জুটত। তারিণীর বয়স সাত বছর। থাকত কেন্দা থানার টাড়া গ্রামে। ঠিকানা নেই। খাবারের সন্ধানে ঘুরে বেড়াত। অশোকবাবু বলেন, ‘‘বিনা খরচে কী ভাবে ওদের পড়াশোনা আর থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা যায় সেটাই খুঁজছিলাম আমরা। তখন কলকাতার সল্টলেকে এসওএস চিলড্রেন ভিলেজের খোঁজ পাই। ওঁদের কাছে আবেদন করি। এই ব্যাপারে জেলাশাসক নিজেও উদ্যোগী হয়েছিলেন।’’

এসওএস চিলড্রেন ভিলেজের শিক্ষা বিভাগের কো-অর্ডিনেটর মেঘদূত চক্রবর্তী জানান, তিনি নিজে পুরুলিয়া গিয়ে ওই তিন জনকে দেখে এসেছিলেন। কিন্তু শিশু কিশোরদের নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক জটিলতা থাকে। সেই সব মেটাতে বেশ কিছুটা সময় লাগে। সেই সময়ে চাইল্ড লাইন পড়শিদের বলে তিন জনের দেখভালের ব্যবস্থা করেছিল। মঙ্গলবার চাইল্ড লাইনের সদস্যরাই লক্ষ্মীমণি, আদরি আর তারিণীকে কলকাতা নিয়ে যান।

মেঘদূতবাবু জানান, যে সব ছেলেমেয়ে অনাথ, দায়িত্ব নেওয়ার কেউ নেই— তাদের থাকা খাওয়া ও পড়ার ব্যবস্থা করেন তাঁরা। বিশেষ দক্ষতা থাকলে সেই মতো প্রশিক্ষণের বন্দোবস্তও করা হয়। তবে ১২ বছর বয়সের মধ্যে তাদের আনতে যেতে হয়। তিনি বলেন, ‘‘এখানে ওরা মা বাবার অভাব বুঝতে পারবে না। নতুন নতুন ভাইবোন পাবে।’’

তিনি জানান, ২৫ বছর পর্যন্ত সহায়হীন ছেলে মেয়েরা ওই ভিলেজে থাকতে পারে। তার মধ্যেই যাতে ওরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে হয়, সংস্থা সেই চেষ্টা করে যায়।

Children Home
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy