Advertisement
E-Paper

হানার মুখে দোতলায় উঠে রক্ষা

সম্প্রতি দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অমিয়বাবু অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পরেই শনিবার সকালে তাঁর বাড়িতে হামলার অভিযোগ ওঠার পর থেকে জেলাজুড়ে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৮ ১২:৩৪
ঘটনার কথা বলছেন অমিয়বাবুর স্ত্রী। নিজস্ব চিত্র

ঘটনার কথা বলছেন অমিয়বাবুর স্ত্রী। নিজস্ব চিত্র

এক সময় তাঁর বাড়িতেই পুলিশ শিবির ছিল। তিনি রাস্তায় নামলে, অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে জনা দশেক পুলিশ কর্মী তাঁর আশপাশে থাকতেন। রাজ্যে পালাবদলের পরে বাঁকুড়ার একসময়কার সেই দাপুটে সিপিএম নেতা অমিয় পাত্রের সঙ্গে এখন থাকেন এক জন মাত্র দেহরক্ষী। সম্প্রতি দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অমিয়বাবু অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পরেই শনিবার সকালে তাঁর বাড়িতে হামলার অভিযোগ ওঠার পর থেকে জেলাজুড়ে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে।

এ দিন সকালে তালড্যাংরার বাড়িতে অমিয়বাবু তখন সবে খাওয়াদাওয়া সেরে বাঁকুড়ায় জেলা পার্টি অফিসে আসার তোড়জোড় করছিলেন। বাড়ির দোতলায় ছিলেন তিনি ও তাঁর স্ত্রী সুমিতাদেবী। সেই সময়েই সদর দরজা খুলে তাঁর বাড়ির নীচের তলার একাংশে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। অভিযোগ, জনা ষাটেক দুষ্কৃতী সদর দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে নীচের তলার কাচ দিয়ে ঘেরা বারান্দায় ভাঙচুর চালায়। খিড়কি দরজা দিয়ে নীচের তলার একাংশে ঢুকে এবং জিমে ঢুকেও জিনিসপত্র লন্ডভন্ড করে দুষ্কৃতীরা। ভাঙচুর চালিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করে দেয়। অমিয়বাবুর অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই হামলা চালিয়েছে।’’ যদিও তা মানতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব।

অমিয়বাবুর স্ত্রী জানান, হইচই শুনে ছাদে উঠেছিলেন। লোকজন বাড়ি ঘিরে তাণ্ডব চালাচ্ছে দেখে তিনি অমিয়বাবুকে ডাকেন। অমিয়বাবুর দাবি, ‘‘ছাদ থেকে দুষ্কৃতীদের কাছে জানতে চাই, কেন তারা ভাঙচুর চালাচ্ছে? গলা পেয়েই ওরা আমাদের লক্ষ্য করে ইট ছুড়তে শুরু করে। সেই সঙ্গে হুমকি দেয়, তালড্যাংরায় দলের জেলা পরিষদের এক মাত্র প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করাতে হবে। না হলে ওরা মেরে আমার হাত-পা ভেঙে দেবে। খুনেরও হুমকি দেয়।’’ এরপরেই তাঁরা দোতলায় নেমে এসে একটি ঘরে ঢুকে দরজা এঁটে দেন। যদিও রাতে পুলিশের কাছে অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, টাঙ্গি নিয়ে তাঁর উপরে হামলা হয়। কোনওরকমে দৌড়ে দোতলায় উঠে রক্ষা পান।

প্রতিবাদ: নেতার বাড়িতে হামলার প্রতিবাদে বাঁকুড়া শহরে সিপিএমের মিছিল। নিজস্ব চিত্র।

অমিয়বাবুর দাবি, ‘‘হামলা চলাকালীন আমি রাজ্য নির্বাচন কমিশনার অমরেন্দ্র সিংহকে ফোনে ঘটনাটি জানাই। কমিশনার বিষয়টি জেলা পুলিশ সুপারকে জানাবেন বলে আশ্বাস দেন। তার কিছুক্ষণ পরেই হামলাকারীরা চলে যেতে থানা থেকে পুলিশ আসে।’’ ১৫ জনের নাম-সহ অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তিনি। পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, ‘‘তদন্ত শুরু হয়েছে।’’

তালড্যাংরা ব্লকের ন’টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১০৯টি আসনের কোনওটিতেই শাসকদলের বিরুদ্ধে কোনও প্রার্থী নেই। একই অবস্থা তালড্যাংরা পঞ্চায়েত সমিতির ২৫টি আসনেও। তালড্যাংরার জেলা পরিষদের দু’টির আসনের মধ্যে শুধু মাত্র একটি আসনেই (২২ নম্বর) তৃণমূলের সঙ্গেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে বিজেপি ও সিপিএম প্রার্থীর সঙ্গে। ওই আসন থেকে বিরোধীদের সরিয়ে দিতে পারলে গোটা ব্লকে কোনও ভোট হবে না। এই সূত্রেই অমিয়বাবুর দাবি, ‘‘জেলা পরিষদের একটি আসনের জন্যও অনেক গ্রামে ভোট করাতে হবে। তাই ওই আসনটি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শাসকদল পেয়ে গেলে গোটা ব্লকেই ভোট করানোর প্রয়োজন হবে না। ফলে পুলিশের অভাবে জেরবার রাজ্য সরকারের ঝক্কিও অনেকটা কমে যাবে।’’

দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, উঠোনে ভাঙা কাচ পড়ে রয়েছে। বাগানের কিছু গাছ ভাঙা পড়ে রয়েছে। হামলার ঘটনার পরে আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারছেন না অমিয়বাবুর স্ত্রী সুমিতা পাত্র। তালড্যাংরা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নার্স সুমিতাদেবী বলেন, ‘‘এলাকার অনেক তৃণমূল নেতা-কর্মী দেখা হলে কথা বলেন। কিন্তু এ দিন তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা যা করল অবাক হয়ে যাচ্ছি।’’

দুপুরে তাঁর বাড়িতে দেখা করতে যান সিপিএমের জেলা সম্পাদক অজিত পতি-সহ অনেকেই। অমিয়বাবু দাবি করেন, ‘‘তালড্যাংরার জেলা পরিষদের প্রার্থীকে প্রত্যাহার করাতে তৃণমূল এলাকার সিপিএম নেতা ও কর্মীদের হুঁশিয়ারি দিচ্ছিল। তাতে কাজ না হওয়ায় ওরা সরাসরি আমার বাড়িতে হামলা চালাল। যদিও আমাদের প্রার্থী নাম তোলেননি।’’ এ দিন তাঁর বাড়িতেই দুপুরে দলের এক এরিয়া কমিটির সদস্য উজ্জ্বল মাঝি অভিযোগ করেন, ‘‘ওই প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করাতে তাঁকেও এ দিন অপহরণ করেছিল তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা।’’

যদিও তৃণমূলের জেলা নেতা অরূপ চক্রবর্তী দাবি করেন, ‘‘অমিয়বাবু তালড্যাংরার স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেন। ফলে কোনও ভাবে তৃণমূল তাঁর বাড়িতে হামলা চালাতেই পারে না।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘ক্ষমতায় থাকাকালীন অমিয়বাবু মানুষের উপরে কম অত্যাচার করেননি। তবে আমরা ক্ষমতায় আসার পরে কখনই পাল্টা প্রতিশোধের পথে যাইনি।’’ তাহলে কেন হামলা হল? অরূপবাবু বলেন, ‘‘সঠিক কারণ জানা নেই। স্থানীয় কোনও সমস্যা থেকেও হয়ে থাকতে পারে।’’

অমিয়বাবুর উপরে আগেও হামলার অভিযোগ উঠেছে। বেশ কয়েক বছর আগে বামফ্রন্ট সরকারের আমলে কোতুলপুরে অমিয়বাবুর উপরে হামলার অভিযোগ উঠেছিল। তখন অমিয়বাবু থানায় তৃণমূলের বেশ কয়েকজন নেতা ও কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। তাতে গ্রেফতারও হয়েছিলেন অনেকে। রাজ্যে পালাবদলের পরে সিপিএমের বহু নেতা-কর্মী আক্রান্ত হন। বাড়িছাড়া হয়ে অনেককে দিনের পর দিন বাইরে থাকতে হয়েছে বলে অভিযোগ। কিন্তু তৎকালীন সিপিএমের জেলা সম্পাদক দাপুটে অমিয়বাবুর উপরে সেই সময়ে হামলা হয়নি। পরে ২০১২ সালে তালড্যাংরা থানার অন্তর্গত একটি স্কুলের পরিচালন সমিতির নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়ন করাতে গিয়ে তৃণমূলকর্মীরা অমিয়বাবুর গাড়ি ঘিরে ধরে ভাঙচুর চালান বলে অভিযোগ উঠেছিল। সেই ঘটনার ছ’বছর পরে এ দিনের হামলায় তাজ্জব অনেকেই।

Attack Amiya Patra CPM TMC অমিয় পাত্র
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy