Advertisement
২৩ মে ২০২৪

তোলা নয়, পথ অবরোধে অটো

তোলাবাজির বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে আগের দিন পুলিশ থেকে প্রশাসনের কর্তাদের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাঁরা। পরের দিন সেই অটোচালকেরা সরাসরি রাস্তায় বসে পড়ে অবরোধ শুরু করলেন। বুধবার বিষ্ণুপুরের স্টেশন এলাকার অটোচালকদের ঘণ্টা দুয়েক অবরোধে ট্রেনযাত্রীরা কিছুটা নাকাল হলেন। শেষে রেলপুলিশ তাঁদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়।

তোলাবাজির অভিযোগ পুলিশ, প্রশাসনের কাছে জমা করার পরে বিষ্ণুপুর স্টেশন এলাকায় অবরোধে নামলেন অটোচালকেরা। বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

তোলাবাজির অভিযোগ পুলিশ, প্রশাসনের কাছে জমা করার পরে বিষ্ণুপুর স্টেশন এলাকায় অবরোধে নামলেন অটোচালকেরা। বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৬ ০১:৪৫
Share: Save:

তোলাবাজির বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে আগের দিন পুলিশ থেকে প্রশাসনের কর্তাদের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাঁরা। পরের দিন সেই অটোচালকেরা সরাসরি রাস্তায় বসে পড়ে অবরোধ শুরু করলেন। বুধবার বিষ্ণুপুরের স্টেশন এলাকার অটোচালকদের ঘণ্টা দুয়েক অবরোধে ট্রেনযাত্রীরা কিছুটা নাকাল হলেন। শেষে রেলপুলিশ তাঁদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়।

বিষ্ণুপুর স্টেশন এলাকায় মন্দির তৈরির নাম করে অটোচালকদের কাছ থেকে তোলা চাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। প্রশাসনকে দেওয়া অভিযোগপত্রে অটোচালকেরা জানিয়েছেন, প্রবীর রায়, মানিক ভট্টাচার্য, রাকেশ চৌধুরী নামে স্টেশন পাড়ার তিন ব্যক্তি চলতি বছরের ২ জানুয়ারি থেকে অটো পিছু তাঁদের কাছে দৈনিক ৫ টাকা করে ‘তোলা চাইছে’। এর মধ্যে টাকা না পাওয়ায় অটোস্ট্যান্ড বন্ধ করে দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়। তার উপরে এ দিন থেকে অটোচালকদের মারধর করে ও পাড়ার মেয়েদের দিয়ে বেইজ্জত করার হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগপত্রে তাঁরা উল্লেখ করেছেন। মঙ্গলবার ওই অভিযোগপত্রটি তাঁরা বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক, মহকুমা পুলিশ আধিকারিক, স্টেশন ম্যানেজার ও পুরপ্রধানের কাছে জমা দেন।

এ দিন বড় গোলমাল হতে পারে আশঙ্কা করে অটোচালকেরা রেলস্টেশনের জায়গায় অটোস্ট্যান্ডে রাস্তার উপরে বসে পড়ে অবরোধ শুরু করেন। তাঁদের কারও কারও হাতে প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল— ‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে তোলাবাজদের তোলা দিচ্ছি না, দেব না’। কয়েকজনের হাতে তৃণমূলের পতাকাও ছিল। প্ল্যাকার্ডের নীচে লেখা ছিল, বিষ্ণুপুর অটো রিকশা ইউনিয়ন (আইএনটিটিইউসি)। যদিও অবরোধকারীদের দাবি, এর সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই। তাঁদের তরফে উজ্জ্বল দত্ত, শ্যামল গড়াই দাবি করেছেন, ‘‘স্টেশনের মূল প্রাঙ্গণ ছাড়িয়ে বাইরের পিচ রাস্তার পাশে আমরা অটো নিয়ে দাঁড়াই। দিনভর যাত্রীদের পরিবহণ করে বিশেষ কিছু রোজগার হয় না। কোনও মতে সংসার চলে। এই অবস্থায় রোজ ৫ টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু ওঁরা তা শুনতে চাইছেন না।’’ তাঁরা জানান, ৪২ জন অটোচালক এর আগে দুর্গা মন্দির নির্মাণের জন্য চার হাজার টাকা তুলে দিয়েছিলেন। পরে ১০ বস্তা সিমেন্ট দেবেন বলেও জানিয়েছিলেন। কিন্তু এখন প্রতিদিন অটো পিছু ৫ টাকা করে দাবি করা হচ্ছে। এ ভাবে চাপ দিলে তাঁদের অটো চালানো বন্ধ করে না খেয়ে মরতে হবে বলে জানিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে তাই বাধ্য হয়ে তাঁরা এ দিন আন্দোলনে নেমেছিলেন।

যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্টেশন দুর্গামাতা ষোলো আনা কমিটির অভিযুক্ত সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য ও ওই কমিটির সম্পাদক প্রবীর রায়। তাঁদের দাবি, ‘‘তোলাবাজির অভিযোগ মিথ্যা। দুর্গামন্দির নির্মাণের কাজ চলছে বলেই ৫ টাকা করে চাঁদা দিতে বলা হয়েছিল। কোনও রকম জোরজুলুম করা হয়নি।’’

এ দিকে সকাল থেকে স্টেশনের মুখে অবরোধে আটকে পড়ে যাত্রীরা নাজেহাল হন। অনেককে ঘুরপথে স্টেশনে ঢুকতে হয়। খবর পেয়ে রেলপুলিশ ও বিষ্ণুপুর থানার পুলিশ গিয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা চালায়। শেষে রেলপুলিশ গিয়ে অবরোধ সরিয়ে দেয়।

বস্তুত এমনই তোলাবাজির বিরুদ্ধে ক’দিন আগে সরব হয়েছিলেন কলকাতার বাগুইআটি-সাতগাছি রুটের অটোচালকেরা। এক অটোচালকের বৃদ্ধা মায়ের আগুনে পুড়ে মৃত্যুতে ১২৯ জন অটোচালক জোট বেঁধে তোলাবাজদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে বাগুইআটি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্ত আবার শাসক দলের এক মন্ত্রী ও প্রভাবশালী মহিলা সাংসদের ঘনিষ্ঠ বলে এলাকায় পরিচিত। তবু রবিবার দুপুরে থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করার আগে দু’বার ভাবেননি তাঁরা। ঘটনাচক্রে ওই অটোরিকশা চালকেরাও নিজেদের তৃণমূল সমর্থক বলে জানিয়েছিলেন।

বিষ্ণুপুরের ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে? বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক ময়ূরী বসু বলেন, ‘‘বিষয়টি পুলিশকে দেখতে বলা হয়েছে।’’ বিষ্ণুপুরের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক লাল্টু হালদার বলেন, ‘‘কোনও রকম তোলাবাজি বরদাস্ত করা হবে না। ঘটনার দিকে আমরা নজর রাখছি।’’ তবে বিষ্ণুপুর থানা জানাচ্ছে, যে এলাকার গোলমাল তা রেলের জায়গার মধ্যে পড়ে। তাই আইনগত ভাবে যা ব্যবস্থা নেওয়ার তা রেল পুলিশই নেবে।

বিষ্ণুপুরের স্টেশন ম্যানেজার অঞ্জন মণ্ডল জানিয়েছেন, রেল চত্বরে অটোর জন্য আলাদা জায়গা দেওয়া হয়নি। তাই ওঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। রেলপুলিশকে ওঁদের অভিযোগ জানানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

blockade illegal money extortion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE