অভিযান: রঘুনাথপুরের নন্দুয়াড়ায়। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।
পুরুলিয়া জেলায় ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
শুক্রবারই এক লাফে সাত জন ডেঙ্গি রোগীর সন্ধান মিলল এই জেলায়। এ নিয়ে জেলায় এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৮। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিলকুমার দত্ত বলেন, ‘‘রক্ত পরীক্ষায় এ দিন নতুন করে সাত জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। তাঁদের মধ্যে দু’জন পুরুলিয়া পুরশহরের বাসিন্দা। বাকিদের বিভিন্ন ব্লকে বাড়ি।’’ স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এ দিন হাসপাতালে জ্বরে ভর্তি থাকা প্রায় ৭০ জনের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তার মধ্যে ১০ শতাংশ রোগীর শরীর ডেঙ্গির জীবাণুর অস্তিত্ব পাওয়ায় উদ্বেগে স্বাস্থ্য দফতর।
পুরুলিয়া শহরের পাশাপাশি ডেঙ্গির থাবা পড়েছে রঘুনাথপুর শহরেও। বৃহস্পতিবারই জানা যায়, এই রঘুনাথপুর পুরসভার নন্দুয়াড়া এলাকার এক যুবক গোবিন্দ বাউরি ডেঙ্গিতে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তার পরেই নড়াচড়া শুরু হয়েছে রঘুনাথপুর মহকুমা প্রশাসনের অন্দরে। শুক্রবার ছটপুজোর ছুটি থাকলেও রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসক দেবময় চট্টোপাধ্যায় পুরসভার কাউন্সিলর, পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিক-কর্মী ও পুরশহরের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, আশা কর্মীদের নিয়ে পুরভবনে বৈঠকে বসেন। পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, পুরশহরের যে এলাকায় অবর্জনা জমে রয়েছে, সেই এলাকা-সহ স্বাস্থ্যকেন্দ্র, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, সংশোধনাগার, মহকুমাশাসকের কার্যালয় এলাকায় সাফাই অভিযান চালাবে পুরসভা। মশা দমনে ওষুধ ‘স্প্রে’ করা হবে সমস্ত জায়গায়।”
পুরশহর এলাকায় যাতে মশাবাহিত রোগ বেশি না ছড়ায়, সেই বিষয়ে এ দিন সর্তকতামূলক ব্যবস্থা নিতে পুরসভাকে বলছে মহকুমা প্রশাসন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত এক মাসে জ্বর নিয়ে রঘুনাথপুর মহকুমা হাসপাতালে তিনশোর বেশি রোগী ভর্তি হয়েছেন। তার মধ্যে দু’জনের রক্ত পরীক্ষায় এনএস- ওয়ান পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে।
এ দিকে, রঘুনাথপুর পুরএলাকায় ডাম্পিং গ্রাউন্ড (আবর্জনা ফেলার বড় জায়গা) না থাকায় রাস্তার পাশে আবর্জনা জমে। নর্দমা নিয়মিত সাফাইও হয় না বলে অভিযোগ আছে বাসিন্দাদের। সেই প্রেক্ষিতেই মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে পুরসভাকে আরও উদ্যোগী হতে বলেছে প্রশাসন।
তবে পুরসভার দাবি, দুর্গাপুজোর আগে থেকেই মশা মারার জন্য ফগিং মেশিনে (কামান দাগা) ছোঁয়া ছড়ানো হচ্ছে। নর্দমায় মশা মারার তেল দেওয়া হচ্ছে। পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, ঋতু পরিবর্তনের জন্য সাধারণ জ্বর নিয়ে বাসিন্দারা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে, হাসপাতালে যাচ্ছেন বলে তাঁদের কাছে খবর থাকলেও, মশাবাহিত রোগে বাসিন্দাদের আক্রান্ত হওয়ার কোনও খবর এত দিন তাঁদের কাছে ছিল না।
পুরসভা এই দাবি করলেও মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে খামতি দিতে রাজি নয় প্রশাসন। এ দিন পুরসভার বৈঠকে মহকুমাশাসক জানিয়েছেন, মশাবাহিত রোগ কী ভাবে ছড়ায় সেই বিষয়ে আরও বেশি নিবিড় ভাবে বাড়ি বাড়ি প্রচার চালাতে হবে পুরসভাকে। আশা কর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের বাড়িতে গিয়ে জ্বরে আক্রান্তদের বিষয়ে বিশদে খোঁজ নিতে হবে। ডেঙ্গির উপসর্গ দেখলে সঙ্গে সঙ্গে তা স্বাস্থ্য দফতর ও পুরসভাকে জানাতে হবে। পাশাপাশি কাউন্সিলরদের নিজেদের ওয়ার্ডের প্রতি নজর রাখতে বলা হয়েছে। মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে পুরসভাকে আরও বেশি উদ্যোগী করার জন্য সকলকে নিয়ে এ দিন বৈঠক করা হয়েছে।”
তবে নন্দুয়াড়ার যে যুবক ডেঙ্গিতে আক্রান্ত বলে স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, এ দিন তার পরিবারের তরফে দাবি করা হয়েছে, ওই যুবক সুস্থ হয়ে উঠছেন। যুবকের দাদা প্রদীপ বাউরি দাবি করেন, ‘‘ভাই অনেকটা সুস্থ হয়ে যাওয়ায় পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল থেকে তাকে আসানসোলে এক আত্মীয়র বাড়িতে রাখা হয়েছে। সেখানে একটি বেসরকারি প্যাথলজিক্যাল সেন্টারে রক্ত পরীক্ষা করানো হয়েছিল। রিপোর্টে ডেঙ্গির জীবাণু পাওয়া যায়নি।” তিনি জানান, ভাইফোঁটার পরে জ্বর নিয়ে রঘুনাথপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন গোবিন্দবাবু। সেখানে রক্ত পরীক্ষায় এনএস ওয়ান পজিটিভ পাওয়ায় তাঁকে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
তবে পুরুলিয়ার উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (২) গুরুদাস পাত্র এ দিনও দাবি করেন, ‘‘ম্যাক অ্যালাইজা পরীক্ষায় ওই যুবকের রক্তে ডেঙ্গি ধরা পড়েছিল।”
পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর দাবি করেছে, গোবিন্দ বাউরি নামের ওই যুবক বাইরে থেকেই জ্বর নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তিনি কলকাতায় একটি হোটেলে কাজ করেন।
রঘুনাথপুরের পুরপ্রধান বলেন, ‘‘কলকাতা থেকেই জ্বর নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন ওই যুবক। তবে পুরশহরে ডেঙ্গি যাতে না ছড়ায়, সে দিকে আমরা সর্তক রয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy