গলায় ছুরি ঠেকিয়ে ভাইয়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে জোর করে তাকে ধর্ষণ করার জন্য টেনে নিয়ে যাচ্ছিল এক যুবক। বাধা দেওয়ায় সেই ছুরি দিয়েই গলায় কোপ মেরেছিল ওই যুবক। খুড়তুতো ভাইয়ের সঙ্গে সে দিন টিউশন পড়তে গিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি বেলিয়াতোড়ের পুরুষোত্তমপুর গ্রামের ছাত্রী। গ্রামেরই যুবক পার্থ মণ্ডলের ছুরিতে জখম হয়ে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিল।
২০১২ সালের ৭ জুলাই-এর সেই ঘটনার চূড়ান্ত রায় বৃহস্পতিবার জানালো বাঁকুড়ার দ্রুত নিষ্পত্তি আদালত। অভিযুক্ত পার্থকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের নির্দেশ দিলেন ওই আদালতের বিচারক বি এন রায় বর্মন। সরকার পক্ষের আইনজীবী অরুণ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য মৃত্যুদণ্ডের জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সেই আবেদন মানেনি আদালত।
কী হয়েছিল ৭ জুলাই?
নিহত ছাত্রীটির পরিবার সূত্রে জানা যাচ্ছে, পার্থ অনেক দিন ধরেই ওই ছাত্রীকে কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। কিন্তু সে রাজি হয়নি। ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ খুড়তুতো ভাই পিন্টুকে (তখন সপ্তম শ্রেণির ছাত্র) নিয়ে টিউশন পড়তে যাচ্ছিল সোনামুখীর বড় চাতরা হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রী। পুরুষোত্তমপুর ও মাজিরডাঙা এলাকার মাঝে একটি ফাঁকা জায়গায় দিদি ও ভাইয়ের পথ আটকায় পার্থ। গলায় ছুরি ঠেকিয়ে সে সময় ছাত্রীকে জোর করে টেনে একটি ঝোপের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে সে। প্রতিবাদ করলে পিন্টুকে খুন করার হুমকি দেয়। ভয় পেয়ে যায় পিন্টু।
দৌড়ে বাড়ি গিয়ে সব কথা বলে। বাড়ির লোকজন যখন ঘটনাস্থলে আসে, ততক্ষণে পার্থ উধাও। আর ওই ছাত্রী, রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছে!
জখম ছাত্রীকে বাড়ির লোকজন উদ্ধার করে প্রথমে বেলিয়াতোড় স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও পরে বাঁকুড়া মেডিক্যালে নিয়ে যায়। কিন্তু গলার নলি কেটে অতিরিক্ত পরিমান রক্তপাত হওয়াতে মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যায় সে। তার পরিবার বেলিয়াতোড় থানায় পার্থর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করে। ঘটনার দিনেই পুলিশ পার্থকে আটক করে গ্রেফতার করে। শুরু হয় তদন্ত। পিন্টুর গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয় আদালতে।
“জখম অবস্থায় যখন ওকে গাড়িতে করে বেলিয়াতোড় থেকে বাঁকুড়া নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন মা ছিল সেই গাড়িতে। বোন মাকে বার বার বলেছিল ‘পার্থ আমাকে বাঁচতে দিল না। ওর যেন সাজা হয়!’ বোনকে তো বাঁচাতে পারলাম না। ওর শেষ ইচ্ছেটা পূর্ণ করতে পেরে ভাল লাগছে।”
নিহত ছাত্রীর দিদি
সরকারি আইনজীবী অরুণবাবু এ দিন জানান, এত দিন জামিন পায়নি পার্থ। পুলিশ ঘটনার চার্জশিট জমা দেয় ওই বছরই ২৬ সেপ্টেম্বর। ঘটনার তিন বছরের মাথায় এই খুনের মামলায় রায় দান করল বাঁকুড়া ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট। অরুণবাবু বলেন, “ওই ছাত্রীর ঘটনা কোনও ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। প্রায়ই নানা জায়গায় মেয়েদের নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রেও মৃত্যুদণ্ডই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতে পারত বলে বিচারকের কাছে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু সব দিক খতিয়ে দেখে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং নগদ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছ’মাস জেলের সাজা দিয়েছেন বিচারক।’’
এ দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন নিহত ছাত্রীর দিদি। পার্থর যাবজ্জীবন কারাদন্ডের সাজা শুনে তার পরিবারের সদস্যেরা বলে, “জখম অবস্থায় যখন ওকে গাড়িতে করে বেলিয়াতোড় থেকে বাঁকুড়া নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন মা ছিল সেই গাড়িতে। বোন মাকে বার বার বলেছিল ‘পার্থ আমাকে বাঁচতে দিল না। ওর যেন সাজা হয়!’ বোনকে তো বাঁচাতে পারলাম না। ওর শেষ ইচ্ছেটা পূর্ণ করতে পেরে ভাল লাগছে।’’
এ দিন সাজা শুনে আদালতের বিচারকের সামনে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করে পার্থ। বিচারকের সামনে বয়স কম হওয়ার জন্য সাজা কমানোর আবেদন করে সে। সেই আবেদন শুনেই সরকারি আইনজীবী পাল্টা আদালতের সামনে প্রশ্ন রাখেন, ‘‘নৃশংস ভাবে খুন হওয়ার সময় ছাত্রীর বয়স ছিল মাত্র ১৭। ওই বয়সে তাকে খুন করা কি ঠিক হয়েছে?’’ নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক পার্থর আইনজীবী বলেন, “এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy