তীব্র গরমের হাত থেকে রক্ষা পেতে সকাল সকাল কাজ সেরে বাড়ি ফিরে আসা— এটাই এখন চল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আদালতও বসে যাচ্ছে সকাল-সকাল। বেলা গড়াতেই কাজ সেরে ঘরমুখো হচ্ছেন আইনজীবীরা, আদালত চত্বর হয়ে যাচ্ছে সুনসান। স্কুলগুলিতেও ছুটি দেওয়া হয়েছে অনেক আগেই। প্রাথমিক স্কুল ও হাইস্কুলের শিক্ষকেরা সকালেই স্কুলে গিয়ে অফিসের কাজ সেরে বাড়ি ফিরে আসছেন। বাধ সেধেছে কেবল প্রশাসনিক দফতরের আধিকারিক ও কর্মীদের ক্ষেত্রেই।
কাঠফাটা রোদ্দুর মাথায় নিয়ে এই গরমেও তাঁদের ১০টা-৫টার ডিউটিই করে যেতে হচ্ছে। জেলার তাপমাত্রা চলতি গ্রীষ্মে মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় সকলেই যখন সকাল-সকাল কাজের পাট চুকিয়ে দিচ্ছেন, তখন প্রশাসনিক দফতরের আধিকারিক-কর্মীরাও কেন সেই সুযোগ পাবেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু অবশ্য বলছেন, “তেমন ভাবে কেউ আমার কাছে সকালে অফিস করার দাবি তোলেননি। তাছাড়াও ভোটের সময় হঠাৎ করে ছক বদলে কাজ করা সম্ভবও নয়।”
তবে প্রশাসনিক মহলের বহু আধিকারিকই আড়ালে ক্ষোভ প্রকাশ করতে ছাড়ছেন না। জেলাশাসকের দফতরেরই এক আধিকারিক আক্ষেপ করে বলেন, “শিক্ষক থেকে আইনজীবী সবাই পারেন। কেবল আমাদেরই বেলাতেই যত সমস্যা! এই গরমে ভর দুপুরে অফিসের পাখার তলায় বসে থাকা যে কী কষ্টের তা কাকে বোঝাবো?” শুধু অফিসে বসে থাকাই তো নয়, প্রায়ই নানা কাজে এই দফতর থেকে ওই দফতরেও ফাইল হাতে নিয়ে ঘুরে বেরাতে হয় বহু আধিকারিক ও কর্মীকেই। প্রখর রোদ থেকে বাঁচতে হাতের ফাইলকেই ছাতার মতো মাথায় নিয়ে হেঁটে যেতে দেখা যায় তাঁদের অনেককেই। এক আধিকারিক বলেন, “কয়েক বছর আগে গ্রীষ্মে সকালে অফিস খোলার দাবি আমরা জানিয়েছিলাম। কিন্তু নাকচ হয়ে গিয়েছিল। তাহলে কোন ভরসাতেই আর দাবি জানাতে যাব?”
দাবদাহের মধ্যেই বিষ্ণুপুরের শিরোমণিপুরের একটি
বেসরকারি পলিটেকনিক কলেজে দেওয়াল চিত্র আঁকা হচ্ছে।
এ দিকে গরমের জেরে অসুস্থ হওয়ার ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে। বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যাচ্ছে, গড়ে যেখানে কমবেশি ১২০০ রোগী ভর্তি থাকেন, এই হাসপাতালে এখন সেখানে প্রায়ই সংখ্যাটা ১৫০০ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। হাসপাতাল সুপার পঞ্চানন কুণ্ডু জানাচ্ছেন, ডায়েরিয়া, হজমের গণ্ডগোল, ঠান্ডা লেগে জ্বর, প্রস্রাবের সমস্যা, শরীরে জলের অনুপাত কমে অসুস্থ হওয়া রোগীদের লম্বা লাইন পড়ছে হাসপাতালের ইনডোর-আউটডোর সর্বত্রই। প্রায়ই রোগীদের ভিড় সামাল দেওয়া মুশকিল হচ্ছে। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রসূনকুমার দাস বলেন, “বাঁকুড়ার সব ক’টি ব্লকেই কমবেশি মানুষ গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তবে এখনও হিট স্ট্রোকে কেউ আক্রান্ত হননি। এই পরিস্থিতির উপর আমাদের নজর রয়েছে।”
শনিবারই জেলার তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৬.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী এই জেলায় এখনও পর্যন্ত এপ্রিল মাসের রেকর্ড। রবিবার অবশ্য সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নেমে যায় ৪৩.৮ ডিগ্রিতে। কিন্তু তীব্র দাবদাহের দোসর আবার গরম বাতাস। সকাল আটটা থেকেই ঝাঁ ঝাঁ রোদ ও গরম বাতাসের জেরে পথে নামলে শরীর জ্বলে যাওয়ার অবস্থা হচ্ছে। রাতেও শান্তি নেই!
এ দিকে জলস্তরও নেমে গিয়েছে। শুকিয়ে কাঠ পুকুর, নদী, জলাশয়। এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন গ্রামে গলা ভেজানোর জলটুকুও পাচ্ছেন না গ্রামবাসী। বহু মানুষের বাড়িতে সাবমার্সিবল থাকলেও জলস্তর নেমে যাওয়ায় জল উঠছে না বলে শোনা যাচ্ছে। জেলার প্রায় প্রতিটি ব্লকেই অল্পবিস্তর জলের সমস্যা চলছেই। এই পরিস্থিতিতে ভারী বৃষ্টিই একমাত্র স্বস্তি আনতে পারে। কিন্তু তারও কোনও পূর্ভাবাস জেলার আবহাওয়া দফতরে নেই। জেলার তপ্ত মাটি কবে ভেজে তারই অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন বাঁকুড়াবাসী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy