যদুভট্ট-মঞ্চ: এখানেই উৎসবের আসর বসবে। নিজস্ব চিত্র
দোলের সকালে সবাই দল বেঁধে রবীন্দ্রনাথের গান গাইতে গাইতে প্রভাতফেরিতে পা মেলাবেন। আকাশে উড়বে আবির। সন্ধ্যা মাতবে ধ্রুপদী সঙ্গীত, খেয়াল, টপ্পা আর হোলির গানে। এ ভাবেই এ বার বিষ্ণুপুরে বসন্ত উৎসবের সূচনা হতে যাচ্ছে।
দোলের দিন রবিবার দিনভর নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন হতে চলেছে একসময়কার মল্ল রাজধানী বিষ্ণুপুরে। যার পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে ‘টেরাকোটা শহরে ধ্রুপদী বসন্ত’। নেপথ্যে বিষ্ণুপুর বসন্ত যাপন কমিটি।
মল্ল রাজাদের উপাস্য দেবতা ছিলেন মদনমোহন। বিষ্ণুপুর শহর জুড়েই উপাস্য দেবতার বহু মন্দির বানিয়েছিলেন মল্লরাজারা। সেই আমলে বৈষ্ণব ভক্তিরসের কার্যত ঝড় উঠেছিল এই শহরে। সে কারণে বিষ্ণুপুরকে ‘গুপ্ত বৃন্দাবন’ বলাও হতো। এ শহরের ইতিহাস নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন, তাঁরা জানাচ্ছেন, দোলযাত্রা উৎসবও মল্ল আমলে বর্ণময় ছিল।
উদ্যোক্তা কমিটির আহ্বায়ক বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তুষারকান্তি ভট্টাচার্য সেই স্মৃতি আওড়েই বলেন, “মল্ল আমলে দোল যাত্রায় শহর জুড়ে নানা অনুষ্ঠান হতো। আমরা সেই প্রাচীন গরিমাকেই ফিরিয়ে আনারই চেষ্টা করছি।” তিনি জানান, বিষ্ণুপুরী ঘরানা ও রবীন্দ্রসঙ্গীত এই দুইয়েরই মিশেল থাকছে গোটা অনুষ্ঠানে। প্রভাতফেরিতে শহরের ছাত্রছাত্রী থেকে সাধারণ মানুষ সকলেই যোগ দেবেন। আবির উড়িয়ে খানিক শান্তিনিকেতনের ঢঙেই রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইতে গাইতে শহর পরিক্রমা করবে মিছিল। সন্ধ্যায় যদুভট্ট মঞ্চে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
জেলার বিভিন্ন এলাকার জনপ্রতিনিধি ও বিশিষ্টজনদের নিয়ে এই বিষ্ণুপুর বসন্ত যাপন কমিটি তৈরি হয়েছে। ওই কমিটির অন্যতম সদস্য তথা বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ মনে করেন, “বিষ্ণুপুরের দোল উৎসব একটা নতুন মাত্রা পেতে চলেছে এই অনুষ্ঠানের হাত ধরে।”
শান্তিনিকেতনের বসন্ত উৎসবে যেমন দেশ-বিদেশের পর্যটকদের ঢল নামে, তেমনই বিষ্ণুপুরেও লোক টানতে আগ্রহী এই কমিটি। বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীর। তাঁর কথায়, “মদনমোহনকে উৎসর্গ করেই মল্লরাজারা বিভিন্ন স্থাপত্য নির্মাণ করেছিলেন। দেশ-বিদেশে যার খ্যাতি রয়েছে। আমার প্রত্যাশা দোল উৎসবকে কেন্দ্র করে এখানকার পর্যটন আকর্ষণ আরও কয়েক গুণ বেড়ে যাবে।” আগামী দিনে যাতে এই উৎসব আরও বড় মাপের করা যায়, সে ব্যাপারেও তাঁদের ভাবনাচিন্তা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তুষারকান্তিবাবু জানান, কমিটির নিজেদের উদ্যোগে সংগ্রহ করা টাকা খরচ করে এ বার প্রথম বছরের বসন্ত উৎসব বিষ্ণুপুরে হচ্ছে। তবে আগামী দিনে যাতে সরকারি সাহায্য মেলে, তার জন্য রাজ্য সরকারের নজরে বিষয়টি নিয়ে আসবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy