Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভোটে লড়াই দেওর-বৌদির

মুখোমুখি দুটি বাড়িতে উভয়ের বাস। উঠতে-বসতে মুখ দেখাদেখি। ওঁরা শুধু একে অপরের পড়শি নন— সম্পর্কে দেওর-বৌদি। কিন্তু, ভোটের ময়দানে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বীও। দেওর ঘাসফুলে, বৌদি পদ্মফুলে। পারিবারিক সম্পর্ক সরিয়ে রেখে এখন একে অপরকে হারাতে মরিয়া।

যুযুধান: বামাপদ ঘোষ (বাঁ দিকে)। শেফালি ঘোষ। নিজস্ব চিত্র

যুযুধান: বামাপদ ঘোষ (বাঁ দিকে)। শেফালি ঘোষ। নিজস্ব চিত্র

দয়াল সেনগুপ্ত
রাজনগর শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৮ ০১:৪৯
Share: Save:

মুখোমুখি দুটি বাড়িতে উভয়ের বাস। উঠতে-বসতে মুখ দেখাদেখি। ওঁরা শুধু একে অপরের পড়শি নন— সম্পর্কে দেওর-বৌদি। কিন্তু, ভোটের ময়দানে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বীও। দেওর ঘাসফুলে, বৌদি পদ্মফুলে। পারিবারিক সম্পর্ক সরিয়ে রেখে এখন একে অপরকে হারাতে মরিয়া।

ছবিটা রাজনগরের ভবানীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কুণ্ডীরা গ্রামের। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের ১০ নম্বর সংসদ থেকে এ বারও শাসকদলের প্রার্থী হয়েছেন রাজনীতিতে পোড়খাওয়া বামাপদ ঘোষ। বিপক্ষের বিজেপি প্রার্থী বামাপদবাবুর মামাতো বৌদি শেফালি ঘোষ। ওই আসনে এক সিপিএম প্রার্থীও রয়েছেন। এলাকাবাসী অবশ্য তাকিয়ে দেওর-বৌদির লড়াইয়ের দিকে।

এমন ঘটনা বাংলার রাজনীতিতে নতুন নয়। বিশেষ করে পঞ্চায়েত নির্বাচনে এলাকার একই আসনে দুই ভাই বা দুই জা, ননদ-বৌদি, শালা-জামাইবাবুর লড়াই হামেশাই শোনা যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কাছের সম্পর্কের দু’জনকে একে অপরের মুখোমুখি লড়িয়ে দেওয়ার পিছনে কাজ করে যুযুধান দুটি বিপক্ষ রাজনৈতিক দলের ইন্ধন। রাজনগরের কুণ্ডীরা সেই তালিকায় একটি সংযোজন মাত্র। তবে বিপক্ষ প্রার্থী হওয়ায় দুই পরিবারের মধ্যে সম্পর্কের ফাটল দেখা দিয়েছে।

বৌদির সঙ্গে লড়াইটাকে ‘ইগো’ হিসেবেই নিয়েছেন বামাপদ ঘোষ। তার কারণ এলাকায় অত্যন্ত পরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বামাপদবাবুর কাছে ৭৬৬ ভোটার বিশিষ্ট ওই সংসদ হাতের তেলোর মতো চেনা। শুধু ওই সংসদ নয়, চেনা গোটা অঞ্চলটাই। ভবানীপুর পঞ্চায়েতের বিদায়ী তৃণমূল প্রধান যে তিনিই। এর আগেও ২০০৩ সালে, ২০০৮ সালে আরও দু’বার ওই গ্রাম পঞ্চায়েত আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৩ সালে উপপ্রধান হয়েছিলেন। এমন এক জন শাসকদলের নেতার বিপক্ষে তাঁরই ঘরের লোক।

শুধু বৌদি নন। মামাতো দাদা নিমাই ঘোষও এ বার বিজেপির হয়ে পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী। সেটাই কোথাও অস্বস্তিতে রেখেছে বামাপদবাবুকে। তিনি বলছেন, ‘‘দেখুন গোটা রাজনগর ব্লকেই প্রভূত উন্নয়ন হয়েছে। সেরা ভবানীপুর। সেখানে আত্মীয় কেউ দাঁড়ালে ভাল লাগার কথা নয়। তবে ওঁকে আমি হারাবই।’’ অন্য দিকে, সদ্য রাজনীতির আঙিনায় পা রাখা শেফালিদেবী বলছেন, ‘‘বিজেপিকে ভাল লাগে। পরিবারের সমর্থন রয়েছে, তাই প্রার্থী হয়েছি। বামাপদ দেওর ঠিকই। কিন্তু, ভোটের ময়দানে আমার প্রতিপক্ষ। ছেড়ে কথা বলার কোনও কারণ দেখি না। দাঁড়িয়েছি জেতার লক্ষ্যেই।’’

তবে প্রার্থী হওয়ার পিছনে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান দেওরের বিরুদ্ধে খানিক অভিমানও রয়েছে শেফালিদেবীর। তিনি বলছেন, ‘‘উন্নয়ন হয়েছে ঠিকই। কিন্তু, প্রধান হওয়ার পরে নিজের আত্মীয়, স্বজনদেরই বঞ্চিত করেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, ভোটে দাঁড়ানোর থেকে পরিবারে অশান্তি বাঁধানোর মূলেও দেওরের হাত রয়েছে।’’ প্রায় একই দাবি মামাতো দাদা নিমাই ঘোষেরও। তবে তিনি নীতির লড়াইকেই সামনে রাখতে চান। যা শুনে হাসছেন বামাপদবাবু। বলেছেন, ‘‘কী হয়েছে, কী হয়নি এলাকার মানুষ জানেন।’’

কেমন প্রচার উভয়পক্ষের?

শাসকদলের প্রচার, দেওয়াল লিখন, মিছিল-সভা শুরু হলেও বিজেপির তরফে এখনও কোনও ভোটপ্রচার শুরু হয়নি। তবে অন্য জায়গায় বিপক্ষ প্রার্থীদের হুমকি দেওয়া বা প্রচার চালাতে না দেওয়ার যে অভিযোগ বিরোধীরা তুলছেন, দেওর ও তাঁর দলের বিরুদ্ধে সেটা তোলেননি মামাতো দাদা–বৌদি। উভয়েই বলছেন, ‘‘না। ও সব নিয়ে এখানে কোনও সমস্যা নেই। ওঁর কাছে এটুকু সৌজন্য আশা করছি।’’ বামাপদবাবুও বলছেন, ‘‘সুষ্ঠু লড়াই হোক আমিও চাই। তবেই না ওজন বোঝা যাবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE