যে-সব গ্রামীণ এলাকায় ব্যাঙ্কিং পরিষেবার অভাব রয়েছে, সেখানে গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র চালু করতে উদ্যোগী হল বীরভূম জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক। মূলত গ্রামীণ এলাকায় কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতিগুলিতে এই পরিষেবা চালু করতে চায় জেলার কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক।
বৃহস্পতিবার রামপুরহাট ১ ও ২ ব্লকের ৭টি কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতিতে এই পরিষেবার উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। তার মধ্যে রামপুরহাট ২ ব্লকের ব্যাঙ্কবিহীন এলাকা হাঁসন ১ পঞ্চায়েতে গ্রাহক পরিষেবা চালু কেন্দ্র চালু করা হল এ দিনই। ওই পঞ্চায়েতের সদাশিবপুর কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতিতে এই গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র গড়া হয়েছে। জেলার সমবায় সমিতিগুলির সহকারী মহানিবন্ধক কৃষ্ণকান্ত সরকার জানান, বীরভূমের ৩২৩টি সমবায় সমিতির মধ্যে ২৯৪টি বর্তমানে চালু। সেগুলির মধ্যে যে সমস্ত সমিতি আমানত সংগ্রহ করে, সেগুলিতেই গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র চালু করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।
জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে জেলায় ১৩৫টি সমবায় সমিতিতে আমানত সংগ্রহ ব্যবস্থা চালু আছে। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের দাবি, এই সংখ্যা ভবিষ্যতে বাড়ানো হবে। চলতি আর্থিক বছরে ১৩৫টির মধ্যে ৭৩টি সমবায় সমিতিতে গ্রাহক পরিষেবার মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকায় ব্যাঙ্কিং পরিষেবা চালু করতে চান সমবায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। জেলা সমবায় উন্নয়ন আধিকারিক দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গত বছরের শেষের দিকে বীরভূম জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যঙ্ক আইএফএসসি কোড পেয়েছে। এর পর থেকেই বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে, বিশেষ করে যে সমস্ত এলাকায় ব্যাঙ্কিং পরিষেবা চালু নেই, সেখানে গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’’ লাভপুর ব্লকের ইন্দাস অঞ্চল কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতি এবং হাঁসন ১ পঞ্চায়েতের অধীন সদাশিবপুর কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতিতে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা চালু ছিল না। সেখানে অন-লাইনে গ্রাহকেরা সমবায় ব্যাঙ্কের যাবতীয় পরিষেবা এ বার থেকে পেয়ে যাবেন। লাভপুর ব্লকের আরও দু’টি সমবায় সমিতি, সাঁইথিয়া ব্লকের ৫টি, দুবরাজপুর ব্লকের ৪টি এবং খয়রাশোল ব্লকের একটি সমবায় সমিতিতে গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র চালু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রামপুরহাট ১ ও ২ ব্লক মিলিয়ে ৭টি সমবায় সমিতিতে ওই পরিষেবা চালু করা হল।
এ দিন সদাশিবপুর কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতিতে অনলাইন পদ্ধতিতে গ্রাহক পরিষেবা চালু করার পরে হাঁসন পঞ্চায়েতের প্রধান মহম্মদ রফিউদ্দিন প্রথম অ্যাকাউণ্ট খোলেন সমবায় ব্যাঙ্কে। তিনি জানান, হাঁসন ১ পঞ্চায়েতের অধীনে ১৩টি গ্রাম আছে। কিন্তু, কোনও গ্রামেই ব্যাঙ্কিং পরিষেবা চালু না থাকার জন্য এত দিন এলাকার মানুষকে পাশের পঞ্চায়েত এলাকায় গিয়ে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পেতে হত। এর ফলে তাঁদের হয়রানিও বাড়ত। এ বার সদাশিবপুরেই ব্যাঙ্কিং পরিষেবা চালু হওয়ায় ১০০ দিন কাজের প্রকল্প, বাংলা আবাস যোজনা থেকে কন্যাশ্রী, যুবশ্রী— এই সমস্ত সরকারি প্রকল্পের সুবিধা এলাকাতেই পেয়ে যাবেন গ্রামবাসী।
সদাশিবপুর কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির সম্পাদক কালিপ্রসাদ ঘোষ জানান, সমিতিতে বর্তমানে ৪৮৫ জন সদস্য। বর্তমানে বছরে প্রায় দেড় কোটি টাকা লেনদেন হয় এই সমিতিতে। এমন একটি জায়গায় অন-লাইন ব্যাঙ্কিং পরিষেবা চালু হওয়ার ফলে এলাকার মানুষ উপকৃত হবেন।