Advertisement
১৭ মে ২০২৪
শহর জুড়ে দশটি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসালো পঞ্চায়েত

নজরদারিতে নজির আমোদপুরের

আমোদপুর পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিল থেকে গঞ্জ-শহরের বিভিন্ন জায়গায় ১০টি সিসি-ক্যামেরা বসানো হল। এলাকার নিরাপত্তার কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত, জানিয়েছেন পঞ্চায়েত প্রধান কৃষ্ণা ভট্টাচার্য।

নজরবন্দি রাস্তা। আমোদপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

নজরবন্দি রাস্তা। আমোদপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

ভাস্করজ্যোতি মজুমদার
বোলপুর শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৬ ০০:৫৪
Share: Save:

আমোদপুর পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিল থেকে গঞ্জ-শহরের বিভিন্ন জায়গায় ১০টি সিসি-ক্যামেরা বসানো হল। এলাকার নিরাপত্তার কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত, জানিয়েছেন পঞ্চায়েত প্রধান কৃষ্ণা ভট্টাচার্য।

গত কয়েক মাসে এলাকায় বড়সড় চুরি-ছিনতাই হয়নি ঠিকই। কিন্তু, হতে কতক্ষণ? আর তেমনটা হলে অপরাধীর হদিস পেতে যে বছর ঘোরে তার উদাহরণ তো রয়েছে জেলাতেই! গত কয়েক মাসে বীরভূমের একের পর এক স্কুলে চুরির পরেও তার কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। তা নিয়ে জমেছে ক্ষোভও। সেই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে আমোদপুরের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন প্রশাসনিক কর্তা থেকে এলাকার বাসিন্দা, এমনকি ব্যবসায়ীরাও। তাঁদের কথায়, ‘‘এমন সিদ্ধান্তে আমোদপুর জেলা সদর সিউড়ি, মহকুমা শহর বোলপুর-সহ জেলার পাঁচটি পুর এলাকাকে টেক্কা দিল!’’ তাতে সায় দিয়ে পঞ্চায়েত প্রধান কৃষ্ণাদেবী বলছেন, ‘‘চতুর্দিকে যা ঘটছে, তাতে আমোদপুরের মতো ব্যস্ত এলাকার নিরাপত্তার কথা ভেবে এই নজরদারি জরুরি ছিল।’’

বীরভূমের অন্যতম বড় গঞ্জ শহর হল সাঁইথিয়ার আমোদপুর। সিউড়ি-কাটোয়া ও সাঁইথিয়া-বোলপুর সড়ক পথ ও বর্ধমান সাহেবগঞ্জ লুপ লাইনকে ছুঁয়ে গিয়েছে এই গঞ্জ। কাটোয়া রেলপথ থাকার ফলে রেলের জংশন স্টেশনও। ফলে যোগাযোগের সুবিধেও যথেষ্ট। সাঁইথিয়ার ব্লক অফিসও এখানে অবস্থিত। রয়েছে পুলিশ ফাঁড়িও। সব মিলিয়ে ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকা। এক সময় জেলার একমাত্র সুগার মিলও গড়ে উঠেছিল এখানে। সড়ক ও রেল যোগাযোগের কারণে আমোদপুর স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড চত্বর ও বাজার এলাকা সত্যিই ব্যস্ত। সিউড়ি ও লাভপুর এলাকার অধিকাংশ লোকজন ট্রেনে কলকাতা কিংবা অন্য কোথাও যাতায়াতের জন্যে আমোদপুর স্টেশনকেই ব্যবহার করেন। কাছাকাছি এলাকা থেকেও বহু মানুষ নানা প্রয়োজনে প্রতিদিন আমোদপুরে আসেন।

প্রশাসন সূত্রের খবর, এমন ব্যস্ত এলাকায় নানা রকমের মাদক এবং নেশারুদের দাপট বেড়েছে। ভোরবেলা ট্রেন ধরতে যাওয়ার পথে অথবা রাতের ট্রেন থেকে নেমে বাড়ি বা বাস ধরতে যাওয়ার পথে চুরি ছিনতাই যে একেবারেই হয়নি এমনও নয়। স্থানীয় ব্যবসায়ী অতনু মজুমদার, সবজি ব্যবসায়ী ইউনিয়নের সম্পাদক রাজু মণ্ডল, আমোদপুর ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নির্মলকুমার চন্দ্রেরা বলেন, ‘‘এত দিন বড়সড় কিছু হয়নি বলে আগামী দিনেও এমনটা হবে না সেটা তো আর হলফ করে বলা যাবে না। সে ক্ষেত্রে ওই সিসি-ক্যামেরা কাজে লাগবে। শুধু তাই নয় ওই ক্যামেরা দিয়ে নেশারুদের উপরেও নজরদারি চালানো যাবে।’’ এমন উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীও।

কোথায় কোথায় সিসি-ক্যামেরা বসানো হচ্ছে?

পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, আপাতত পুলিশ ফাঁড়ির সামনে একটি, সিউড়ি-লাভপুর বা কাটোয়া মেন রোডের চৌরঙ্গি মোড়ে চারটি (এই মোড় থেকেই বোলপুর ও সাঁইথিয়া যাওয়ার রাস্তা চলে গিয়েছে), বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া রেল সেতুর দু’পারে দুটি ও বড়মা কালী মন্দির চত্বরে তিনটি (স্টেশন যাওয়ার রাস্তা ও সিউড়ি-লাভপুর রাস্তা) মোট দশটি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। পরে আরও ক্যামেরা বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।

সিসি-ক্যামেরায় নজরদারির ভার দেওয়া হয়েছে পুলিশকে। আগামী দিনে পুলিশ-ই তার রক্ষণাবেক্ষণও করবে। সাঁইথিয়ার বিডিও অতনু ঝুরি বলেন, ‘‘খুব ভাল উদ্যোগ। আমোদপুর পঞ্চায়েত সব সময় ভাল কাজ করে।’’ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সোমনাথ সাধুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমোদপুর পঞ্চায়েত অন্য গঞ্জ ও শহরকে পথ দেখাল।’’

ঘটনা হল, আমোদপুরের চেয়ে অনেক ব্যস্ত শহর হল বোলপুর, সিউড়ি, রামপুরহাট, দুবরাজপুর কিংবা সিউড়ি। জেলার সদর হওয়ার কারণে সিউড়িতে লোকজনের আনাগোনা লেগেই রয়েছে। একই অবস্থা রামপুরহাট, বোলপুরেরও। নজরদারি বাড়াতে এই এলাকাগুলিতে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না কেন?

বোলপুরের পুরপ্রধান সুশান্ত ভকত বলেন, ‘‘সিসি-ক্যামেরা নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা চলছে। দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’’ সিউড়ি-র পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় মানছেন, ‘‘সিসি-ক্যামেরা সত্যিই খুব জরুরি, প্রশাসনের সঙ্গে কথা চলছে।’’ একই কথা জানিয়েছেন সাঁইথিয়ার পুরপ্রধান বিপ্লব দত্ত, দুবরাজপুরের পীযূষ পাণ্ডে, নলহাটির রাজেন্দ্রপ্রসাদ সিংহেরা। এর মধ্যে ব্যতিক্রম শুধু রামপুরহাট। প্রশাসন সূত্রের খবর, পুরসভার সহযোগিতায় এই শহরের বিভিন্ন জায়গায় ২৬টা সিসি-ক্যামেরা বসানো হয়েছে। যদিও অধিকাংশ ক্যামেরাই অচল। তীর্থস্থান তারাপীঠ মন্দির-সহ সমস্ত রাস্তায় সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে বলে জানান মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় বন্দ্যোপাধ্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Surveillance CCTV
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE