পাত পেড়ে। বুধবার দুপুরে কীর্ণাহারে তোলা নিজস্ব চিত্র।
সারা বছর দু’বেলা দু’মুঠো ভাতের জন্য ওদের ভিক্ষাবৃত্তি করে দিন কাটে। এ দিনই সরবৎ থেকে শুরু করে মধ্যাহ্ন ভোজের পর মুখে উঠল মিঠে পান। তারই মাঝে কেউ গাইলেন লোকগান। কেউ বা আওড়ালেন ছোটবেলায় মুখস্থ করা আমদের ‘ছোটনদী।’ কেউ বা মাতলেন ছেলেবেলার খেলায়। বুধবার দিনভর পিকনিকের মেজাজে কাটালেন চার শতাধিক ভিক্ষাজীবি।
গত ১০ বছর ধরে কীর্ণাহারের ‘আমরা ক’জন’ সংস্থার পক্ষ থেকে বৈশাখ মাসের শেষ বুধবার ভিক্ষাজীবিদের নিয়ে অভিনব ওই পিকনিকের আয়োজন করা হয়। শুধু এলাকারই ভিক্ষাজীবিরাই নন, লাগোয়া বর্ধমান এবং মুর্শিদাবাদ জেলার ভিক্ষাজীবিরাও তাতে যোগ দেন। এ বারও তার অন্যথা হয়নি। এ বারেও বিভিন্ন প্রান্তের ৪০৫ জন ভিক্ষাজীবি যোগ দিয়েছেন। অবস্থাপন্নের ভোজবাড়িতে সবার শেষে হতশ্রদ্ধার অন্নদান নয়, রীতিমতো আমন্ত্রিত অতিথির মতো সকালে সরবত, চা- বিস্কুট, মুড়ি-ঘুগনি, মিষ্টির টিফিন থেকে মধ্যাহ্নে পোলাও, ভাত, নানা রকম তরকারি থেকে শুরু করে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হল মিঠে পানও।
খাওয়া দাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে লাভপুরের কৈচড়া’র বৃন্দাবন দাস, কৃষ্ণা দাসরা মাইক্রোফোন ধরে গাইলেন বাউলগান। ছোটবেলায় মুখস্থ করা ‘ছোটনদী’ আবৃত্তি করলেন মুর্শিদাবাদের শিমুলিয়ার সুধাময় হাজরা। গলা মেলালেন বাকিরাও। কেউবা মাটিতে ছক কেটে খেললেন বাঘবন্দীর খেলা। সকলেই একই সুরে জানালেন, ‘‘এই দিনটার জন্যই আমরা সারা বছর প্রতীক্ষায় থাকি। এ দিনের সুখস্মৃতি আমাদের কাছে সারা বছরের সঞ্চয় হয়ে থাকে।’’
সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক সুবীর মণ্ডল, চঞ্চল দত্তরা জানান, বহু অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গিয়ে সামান্য খাবারের জন্য ভিক্ষাজীবিদের চরম অপমানিত হতে দেখেছি। তখনই একটা দিনের জন্য হলেও ওদের জন্য নিমন্ত্রিতের মতো খাওয়ার ব্যবস্থা করার কথাটা মাথায় আসে। সেইমতো খরচ সংস্থানের জন্য আমরা বছরভর কিছু কিছু করে টাকা আলাদা করে জমিয়ে রাখি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy