Advertisement
১৯ মে ২০২৪
কবে কাটবে টাকার আকাল, প্রশ্ন সবার

ব্যাঙ্কে বাড়ন্ত নোট, এটিএম বন্ধই

মাসের প্রথম দু’দিন ব্যাঙ্কে গিয়ে অনেকে প্রয়োজন মতো টাকা পাননি। ভেবেছিলেন, এটিএম থেকে পরে ধাপে ধাপে বাকি টাকা তুলবেন। কিন্তু সে আশাতেও ছাই। শনিবার দুই জেলার অধিকাংশ এটিএমে টাকাই মেলেনি। শহরাঞ্চলের যে ক’টি এটিএমে টাকা দেওয়া হয়েছে, মুহূর্তের মধ্যে সেখানে টাকা শেষ হয়ে গিয়েছে।

কখন ব্যাঙ্ক খুলবে, অপেক্ষায় থেকে বাঁকুড়ায় বন্ধ ব্যাঙ্কের সিঁড়িতেই বসে পড়েছেন বয়স্কেরা। পুরুলিয়ার হাসপাতাল মোড়ে এটিএম থেকে টাকা না পেয়ে বেরিয়ে আসছেন অনেকে।—নিজস্ব চিত্র।

কখন ব্যাঙ্ক খুলবে, অপেক্ষায় থেকে বাঁকুড়ায় বন্ধ ব্যাঙ্কের সিঁড়িতেই বসে পড়েছেন বয়স্কেরা। পুরুলিয়ার হাসপাতাল মোড়ে এটিএম থেকে টাকা না পেয়ে বেরিয়ে আসছেন অনেকে।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:২৯
Share: Save:

মাসের প্রথম দু’দিন ব্যাঙ্কে গিয়ে অনেকে প্রয়োজন মতো টাকা পাননি। ভেবেছিলেন, এটিএম থেকে পরে ধাপে ধাপে বাকি টাকা তুলবেন। কিন্তু সে আশাতেও ছাই। শনিবার দুই জেলার অধিকাংশ এটিএমে টাকাই মেলেনি। শহরাঞ্চলের যে ক’টি এটিএমে টাকা দেওয়া হয়েছে, মুহূর্তের মধ্যে সেখানে টাকা শেষ হয়ে গিয়েছে। ফলে অ্যাকাউন্টে বেতন, পেনশন-সহ সঞ্চয়ের টাকা জমা থাকলেও এ দিনও অনেকে প্রয়োজনমতো তুলতে পারলেন না।

কবে সমস্ত এটিএম চালু থাকবে? টাকা নিয়ে সমস্যায় জেরবার সাধারণ মানুষের মুখে এখন এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে। একটি বেসরকারি গৃহঋণ সংস্থার কর্মী বড়জোড়ার বাসিন্দা শুভজিৎ ঘোষ এ দিন কাজে বাঁকুড়া শহরে এসেছিলেন। হঠাৎ প্রয়োজন পড়ায় তিনি দু’হাজার টাকা তুলতে গোবিন্দনগর এলাকার একের পর এক এটিএমে ঘোরেন। তাঁর অভিজ্ঞতা, ‘‘বেশির ভাগ এটিএমই বন্ধ ছিল। কপাল ভাল থাকায় মেডিক্যাল কলেজ চত্বরের একটি এটিএমে টাকা পেয়ে যাই।’’

শুধু বাঁকুড়া শহরেই নয় এই জেলার বাকি দুই পুরশহর সোনামুখী ও বিষ্ণুপুরের এটিএমগুলির অবস্থাও একই। সোনামুখীর মনোহরতলা এলাকার বাসিন্দা কালীপ্রসন্ন চট্টোপাধ্যায় জানান, শহরের তিনটি এটিএমের মধ্যে দু’টি এটিএম নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পর থেকেই টানা বন্ধ রয়েছে। বাকি এটিএমটিও প্রায় দিনই ‘আউট অফ অর্ডার’ হয়ে থাকছে। গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দাদের ভোগান্তি আরও বেশি। সিমলাপালের বাসিন্দা বাদল গড়াইয়ের আক্ষেপ, “আমাদের সব রাস্তাই তো বন্ধ। ব্যাঙ্কে যা ভিড় তাতে সবাই টাকা তুলতে পারছেন না। এটিএম থেকে যদি দু’হাজার টাকাও তোলা যায় তাও কিছুটা রক্ষা হয়। কিন্তু এটিএমে টাকা থাকলে তো!’’

একই দুর্ভোগে পড়েছেন পুরুলিয়ার বাসিন্দারাও। কিছু জায়গায় এটিএমে শাটার বন্ধ ছিল। কয়েকটি জায়গায় আবার এটিএম খোলা দেখে ডেবিট কার্ড নিয়ে যাঁরা হাসিমুখে ভিতরে ঢুকেছিলেন, কিছুক্ষণ পরেই তাঁরা বেরিয়ে এসেছেন মুখ শুকনো করে। আসলে ওই সব এটিএমে টাকা দিলেও বেশিক্ষণ তা পরে থাকছে না। এ দিন দুপুরের দিকে নডিহা, রাঁচি রোড এলাকার এটিএমগুলিতে টাকা ভরার পরে কিছু লোকজন টাকা পেয়েছেন। যদিও শহরের প্রাণকেন্দ্র হাসপাতাল মোড় এলাকার একাধিক এটিএম থেকে দুপুর সাড়ে তিনটে পর্যন্ত টাকা মেলেনি। কোথাও আবার শুধু দু’হাজার টাকার একটি নোট পাওয়া গিয়েছে।

পুরুলিয়া শহরের রাঘবপুরের বাসিন্দা কার্তিক মাহাতো বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তায় একের পর এক এটিএমে ঢুঁ মারতে মারতে হাসপাতাল মোড়ের আসেন। সেখানকার একটি এটিএম থেকে হতাশ হয়ে বেরিয়ে বললেন, ‘‘নাহ্‌, এখানেও টাকা পেলাম না। আরও একটু ঘুরে দেখি।’’ আড়শার ফসকো গ্রামের বাসিন্দা বাদলচন্দ্র মাঝিও হতাশ। তিনি বলেন, ‘‘ধান কাটা চলছে। শ্রমিকদের মজুরির টাকা দিতে হবে। নিজেদের এলাকার এটিএমে টাকা নেই। ভেবেছিলাম পুরুলিয়া শহরে নিশ্চয় টাকা পাব। কিন্তু কিছুই পেলাম না।’’

আবার পুরুলিয়া মফস্সল থানার লোহারশোল গ্রামের বাসিন্দা শিপ্রা চট্টোপাধ্যায় জানান, কোর্ট রোডে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক লাগোয়া এটিএমে শুধু ২০০০ টাকার নোট রয়েছে বলে তিনি তোলেননি। ভেবেছিলেন, অন্যত্র ১০০ বা ৫০০-র নোট পাবেন। কিন্তু হাসপাতাল মোড়ের এটিএমে টাকাই নেই দেখে তিনি মুষড়ে পড়েন।

কেন এটিএমগুলির এমন হাল? বাঁকুড়ার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্তা জানান, নতুন দু’হাজার ও পাঁচশো টাকার মাপের ক্যাশ ট্রে এখনও বসানো যায়নি। তাই কিছু এটিএম বন্ধ। কিছু এটিএমে একশো টাকার নোট ভরে চালানো হলেও দ্রুত সব নোট শেষ হয়ে যাচ্ছে।

ব্যাঙ্কে টাকা মিললেও তাও প্রয়োজনের তুলনায় নেহাত কম বলে অনেকের ক্ষোভ। এ দিনও সকাল থেকেই বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সামনে টাকা তোলার লম্বা ভিড় দেখা গিয়েছে। কিন্তু বাঁকুড়ার অধিকাংশ ব্যাঙ্ক থেকে ১০ হাজারের বেশি দেওয়া হয়নি। ব্যাঙ্ক থেকে শুকনো মুখে ফেরার পথে এক বাসিন্দার আক্ষেপ, ‘‘আর কতদিন এই যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে কে জানে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Demonetisation ATM Bank
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE