Advertisement
০২ মে ২০২৪

ডাকঘরে ভোগান্তি চলছেই

তিন দিনেও মিলল না অঙ্ক। টাকার চাহিদা ও জোগানের বিস্তর ফারাক কিছুতেই মিটছে না। তাই শনিবারও দিনভর ডাকঘরে হাপিত্যেশ করে থাকা মানুষজনকে শুকনো মুখেই ফিরতে হল। কোনও কোনও ডাকঘর থেকে টাকা দেওয়া হলেও কয়েক ঘণ্টাতেই তা কর্পূরের মতো উবে যায়।

বেলা প্রায় ১১টা। টাকা ফুরিয়ে যেতেই উঠে যান কর্মীরা। হাল ছাড়তে নারাজ টাকা তুলতে আসা লোকজন। বাঁকুড়া ডাকঘরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

বেলা প্রায় ১১টা। টাকা ফুরিয়ে যেতেই উঠে যান কর্মীরা। হাল ছাড়তে নারাজ টাকা তুলতে আসা লোকজন। বাঁকুড়া ডাকঘরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৬ ০১:০৬
Share: Save:

তিন দিনেও মিলল না অঙ্ক। টাকার চাহিদা ও জোগানের বিস্তর ফারাক কিছুতেই মিটছে না। তাই শনিবারও দিনভর ডাকঘরে হাপিত্যেশ করে থাকা মানুষজনকে শুকনো মুখেই ফিরতে হল। কোনও কোনও ডাকঘর থেকে টাকা দেওয়া হলেও কয়েক ঘণ্টাতেই তা কর্পূরের মতো উবে যায়। বাকিদের সম্বল শুধু ক্ষোভের গজগজানি। যদি পরে টাকা আসে, এই আশাতেও অনেকে লাইনে থাকেন। কিন্তু দিনের শেষে তাঁদের আশা

পূরণ হয়নি।

পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া দুই জেলাতেই শনিবার শহর থেকে গ্রাম ঘুরে ভোগান্তির ছবিটা কমবেশি একই দেখা গিয়েছে। পুরুলিয়া শহরের মুখ্য ডাকঘরে অবশ্য এ দিন লোকজন টাকা বদলানোর সুযোগ পেয়েছেন। যাঁরা নতুন টাকা পেয়েছেন, তাঁদের মুখে হাসি। কিন্তু পুরুলিয়ার বাকি এলাকা তো বটেই খোদ বাঁকুড়া শহরের প্রধান ডাকঘরে যাওয়া লোকেদের ভাগ্য অবশ্য এ দিন অন্যরকম ছিল।

ডাকঘরে টাকা পাওয়া নিয়ে সমস্যা শনিবারও কাটল না বাঁকুড়া জেলায়। বাঁকুড়া সদর ডাকঘরে সকাল থেকে টাকা বদলে দেওয়া হলেও ১১টার পরেই তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কর্মীরা লোকজনকে জানিয়ে দেন, টাকা ফুরিয়ে গিয়েছে। তবুও আশা না ছেড়ে অনেকেই দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। কিন্তু টাকা আর আসেনি। আবার বিষ্ণুপুর মহকুমা মুখ্য ডাকঘরে এ দিন টাকাই আসেনি। শুধু পুরনো টাকা জমা নেওয়া হয়। ফলে দূর থেকে যাঁরা টাকা পাল্টাতে সকাল থেকে লাইন দিয়েছিলেন, শুকনো মুখে তাঁদের ফিরে যেতে হয়।

দুই জেলাতেই গ্রামাঞ্চলের অবস্থা খুবই করুণ। পুরুলিয়ার ডাকবিভাগের সুপারিন্টেডেন্ট তপন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ব্যাঙ্ক থেকে দু’কোটি টাকা পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু পুরুলিয়ার মূল ডাকঘরের উপরে চাপ বেশি। তাই ওই টাকার অর্ধেক পুরুলিয়াতে রেখে বাকি টাকা ৩৬টি ডাকঘরে পাঠাতে হচ্ছে। এ দিকে গত দু’দিনে গ্রাহকেরা মূলত পাঁচশো ও একহাজার টাকার নোট জমা করেছেন। শনিবার থেকে তাঁরা টাকা তোলার জন্য ডাকঘরে আসায় দ্রুত টাকা ফুরিয়ে গিয়েছে। তাই কিছু ডাকঘরে সমস্যা হয়েছে।’’

যদিও সমস্যাটা কিছু ডাকঘরের নয়, বরং অধিকাংশ ডাকঘরেই সঙ্কট চলছে বলে দাবি করছেন বাসিন্দারা। যেমন হুড়া উপ-ডাকঘরে এ দিন সকালে কিছুক্ষণ টাকা দেওয়ার পরে বন্ধ করে দেওয়া হয়। কেন? হুড়া পোস্টমাস্টার নিমাইচন্দ্র মণ্ডলের স্বীকারোক্তি, ‘‘টাকা আসেনি। শাখা ডাকঘরগুলি থেকে পাওয়া টাকা থেকে কমবেশি এক ঘণ্টা কিছু লোককে খুচরো দেওয়া গিয়েছে। সেই টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায় বাকিদের ফিরিয়ে দিতে হয়েছে।’’ বান্দোয়ানের পোস্টমাস্টার বিভূতি মাহাতো জানান, জেলা থেকে তাঁরাও টাকা পাননি। গ্রাহকেরা টাকা বদলাতে এলে অল্প অল্প করে কিছু টাকা দেওয়া হচ্ছে।

জেলার অন্যান্য প্রত্যন্ত এলাকাতেও একই ছবি। সকাল থেকে লোকজন টাকা বদলানোর জন্য লাইন দিয়েছেন। কিন্তু পোস্ট অফিস খোলার পরে তাঁরা জানতে পেরেছেন, ডাকঘরে টাকা নেই। ঝালদার বাসিন্দা সৌমেন কৈবর্ত্য বলেন, ‘‘সকাল থেকে এখানে শুধু টাকা জমাই নেওয়া হয়েছে। টাকা পাল্টে দেওয়া হয়নি।’’ এ দিকে গত কয়েকদিন ধরে জমিয়ে রাখা খুচরো টাকা প্রায় শেষ হওয়ার মুখে। তাই অনেকেই বিপদে পড়ে গিয়েছেন। সংসারের খরচ সামলাবেন কী ভাবে, তাঁরা ভেবে কিনারা পাচ্ছেন না।

শনিবার ডাকঘর খোলার কিছু পরেই গ্রাহকদের টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয় আদ্রা ও রঘুনাথপুরের ডাকঘর। দুপুর গড়ানোর আগেই আবার বেশ কিছু ডাকঘরের দরজায় তালা পড়ে যায়। দুপুর ১টা নাগাদ নন্দুয়াড়া মোড়ে ডাকঘরে গিয়ে দেখা যায়, মূল দরজা বন্ধ। বাইরে দাঁড়িয়ে তখনও কয়েকজন মানুষ। তাঁদের মধ্যে তীর্থ রায়, সুশান্ত পান্ডে, অজয় মুখোপাধ্যায়দের দাবি, ‘‘টাকা ফুরিয়ে গিয়েছে বলে ডাকঘরের কর্মীরা দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু টাকা জমা করতে এসেছি শুনেও তাঁরা দরজা খোলেননি।’’

এ দিন দুপুর তিনটে নাগাদ বন্ধ হয়ে যায় পুরুলিয়া সদর ডাকঘরের প্রধান দরজা। বাইরে তখনও অনেকে লাইনে। পুরুলিয়া মফস্সল থানা এলাকার দুমদুমি গ্রামের বাসিন্দা সুভাষ মাহাতো-সহ অনেকেই বলেন, ‘‘আচমকা বন্ধ করে দেওয়া হল। আগাম কিছুই জানানো হয়নি। তাহলে কে আর লাইনে দাঁড়াত?’’

পুরুলিয়া জেলা মুখ্য ডাকঘরের ডেপুটি সুপারিন্টেডেন্ট কাজল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শনিবার দুপুর একটা পর্যন্ত খোলা থাকার কথা। আমরা তাও দু’ঘণ্টা অতিরিক্ত পরিষেবা দিয়েছি। তবে তিনটে সময় যাঁরা ভিতরে ছিলেন, তাঁদের বদলানো, টাকা জমা, তোলা-সহ সমস্ত পরিষেবা দেওয়া হয়েছে।’’ রবিবারও পরিষেবা দেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

post-office currency note
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE