বাঁকুড়া আদালতে দেবল সোরেন।—নিজস্ব চিত্র
অভিযোগ ওঠার পর থেকেই তিনি পুলিশের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে ছিলেন। অবশেষে পুলিশের জালে ধরা পড়লেন রং মিস্ত্রিকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মারায় অভিযুক্ত বাঁকুড়া মেডিক্যালের চিকিৎসক দেবল সোরেন। সোমবার রাতে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বাঁকুড়া রেল স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে তাঁকে।মঙ্গলবার ধৃত চিকিৎসককে বাঁকুড়া আদালতে তোলা হলে বিচারক তিন দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
গত ১৪ জুলাই সন্ধ্যায় বাঁকুড়া মেডিক্যালের ডাক্তারদের আবাসনের ইলেকট্রিক খুঁটি রঙের কাজ করছিলেন বাঁকুড়া সদর থানার কুলপত গ্রামের বাসিন্দা প্রশান্ত দেওঘরিয়া (৪৫)। প্রশান্তবাবু যে খুঁটিতে রং করছিলেন তার নীচেই ছিল দেবলবাবুর বাড়ি। সেই গাড়িতেই কয়েক ফোঁটা রঙের ছিটে লেগে গিয়েছিল। আবাসন থেকে বেরিয়ে গাড়িতে রঙের দাগ দেখেই প্রচণ্ড রেগে যান ওই চিকিৎসক। অভিযোগ, সামনে পড়ে থাকা একটি লাঠি তুলে দেবলবাবু প্রশান্তবাবুকে মারধর করতে শুরু করেন। মাথাতেও গুরুতর আঘাত লাগে তাঁর।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। তাঁর মাথায় ১৫টি সেলাই করা হয়। বাঁকুড়া মেডিক্যালে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে প্রশান্তবাবুকে কলকাতায় স্থানান্তর করা হয়। যদিও শেষরক্ষা হয়নি। এসএসকেএমে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই ঘটনার দু’দিন পরে মৃত্যু হয় প্রশান্তবাবুর। মারধরের পরেই অবশ্য বাঁকুড়া মেডিক্যালের তরফে পুলিশকে লিখিত ভাবে ঘটনাটি জানানো হয়েছিল এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নিতে বলা হয়। নিহতের মামা কার্তিক অধিকারী ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর দায়ের করেন।
প্রশান্তবাবুর মৃত্যুর পরেই অভিযুক্ত চিকিৎসককে গ্রেফতারের দাবিতে থানা থেকে রাস্তার মোড়ে একাধিকবার আন্দোলনে নেমেছেন প্রশান্তবাবুর আত্মীয় ও কুলপোত গ্রামের বাসিন্দারা। যদিও ঘটনার পরে অভিযুক্ত চিকিৎসককে ধরতে প্রায় দু’মাস সময় লেগে গেল বাঁকুড়া পুলিশের।
ধরতে এত দেরি হল কেন? পুলিশ সূত্রে দাবি করা হয়েছে, ঘটনার পর থেকেই দেবলবাবু রাজ্যের বাইরে বিভিন্ন বন্ধুবান্ধবের বাড়িতে লুকিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। কলকাতা হাইকোর্টে আগাম জামিন নেওয়ারও চেষ্টা করেছিলেন তিনি। তবে হাইকোর্ট সেই আবেদন মঞ্জুর করেনি।
দেবলবাবুকে এ দিন আদালতে তোলার সময় সেখানে ক্ষোভে ফেটে পড়েন নিহতের আত্মীয়েরা। অনেকেই ডাক্তারের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। পুলিশের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তাঁরা। প্রশান্তবাবুর ভাই উজ্বল দেওঘরিয়ার বলেন, “ঘটনার পরে ওই ডাক্তারকে ধরতেই দু’মাস লেগে গেল পুলিশের! পুলিশ যদি সঠিক পথে তদন্ত করত তাহলে আরও আগেই ধরা পড়ত ওই চিকিৎসক। দাদার দু’টি ছোট সন্তানের ভবিষ্যতের কী হবে? ওই ডাক্তারকে সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে।’’ এ দিন আদালত চত্বরে ওই চিকিৎসক নিজেকে নির্দোষ বলেই দাবি করেছেন। তাঁর দাবি, “আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।” ওই চিকিৎসকের পক্ষের আইনজীবী সায়ন্তন চৌধুরী বলেন, “জামিনের আবেদন জানানো হয়েছে।” তবে আদালত তা খারিজ করে দেয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy