Advertisement
E-Paper

নাচনিদের সন্তানদের পাশে দুর্বার

মঞ্চে রঙিন আলোয় নেচে পুরুলিয়ার নাচনিরা হারিয়ে যেতে বসা লোকশিল্পকে ধরে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের সন্তানদের অনেকের কাছেই শিক্ষার আলো সে ভাবে এসে পড়ে না। অবহেলিত নাচনিদের সন্তানদের জন্য এ বার পাশে দাঁড়াচ্ছে দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:২২

মঞ্চে রঙিন আলোয় নেচে পুরুলিয়ার নাচনিরা হারিয়ে যেতে বসা লোকশিল্পকে ধরে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের সন্তানদের অনেকের কাছেই শিক্ষার আলো সে ভাবে এসে পড়ে না। অবহেলিত নাচনিদের সন্তানদের জন্য এ বার পাশে দাঁড়াচ্ছে দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি।

আড়শার সেনাবনা গ্রামে সম্প্রতি দুর্বারের প্রচেষ্টায় তেমনই একটি শিক্ষা ও শিল্পচর্চা কেন্দ্র চালু হয়েছে। যার পোষাকি নাম ‘অ্যা ডে কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার’। জার্মানির একটি সংস্থার সহায়তায় এই উদ্যোগ। উদ্যোক্তাদের পক্ষে কাজল বসু জানান, ২০০৫ সাল থেকে তাঁরা পুরুলিয়ায় নাচনিদের নিয়ে কাজ করছেন। লোকশিল্পের এই শাখার শিল্পীদের সন্তানদের শিক্ষার আলোয় নিয়ে আসাই তাঁদের লক্ষ্য।

নাচনিরা রাতের পর রাত মঞ্চে শিল্পরসিকদের মনোরঞ্জন করে গেলেও সমাজে আজও তাঁরা অবহেলিত এবং ব্রাত্যই থেকে গিয়েছেন। এই শিল্পকে ভালোবেসে রসিকের হাত ধরে মঞ্চে পা রাখলে সমাজ সেই নাচনিকে অন্য চোখে দেখে। পুরুলিয়ার সমাজকর্মী প্রশান্ত রক্ষিতের কথায়, ‘‘কিছুদিন আগেও নাচনির মৃত্যু হলে তাঁকে ভাগাড়ে ফেলে আসা হতো। সৎকারটুকুও একজন শিল্পীর জন্য জুটত না! শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষজনের এগিয়ে আসার কারণে সেই অবস্থা অবশ্য ধীরে ধীরে পাল্টাচ্ছে।’’

উদ্যোক্তাদের পক্ষে শতাব্দী সাহা জানিয়েছেন, নাচনিদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছেন তাঁরা সমাজে খুবই অবহেলিত। অবহেলিত তাঁদের সন্তানেরাও। তাঁদের সন্তানেরা যাতে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয়, এই দিকটি মাথায় রেখেই তাঁরা এই কেন্দ্র চালু করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘শুধু নাচনিরাই নয়, সমস্ত ধরনের লোকশিল্পীদের সন্তানদের শিক্ষার ক্ষেত্রে সহযোগী ভূমিকা পালনের জন্যই এই কেন্দ্র চালু করা হয়েছে।’’ তিনি জানান, এই কেন্দ্রে সকালে নাচনি-সহ লোকশিল্পীদের সন্তানেরা লেখাপড়া করবে। যাঁরা তাঁদের লেখাপড়ায় সাহায্য করবে বা শিক্ষা দেবে সেই শিক্ষকদের দুর্বার নিয়োগ করবে। এ ছাড়া যে সব মহিলা লোকশিল্পীদের ছোট বাচ্চাকে বাড়িতে রেখে বা সঙ্গে নিয়ে প্রতিদিন কাজে যেতে হয়, এ বার থেকে তাঁরা ওই কেন্দ্রে শিশুদের রেখে যেতে পারবেন। সেই সঙ্গে শিল্পীরা বিকেলে এই কেন্দ্রে তাঁদের শিল্পেরও চর্চা করতে পারবেন।

দুর্বারের এক অন্যতম কর্ত্রী মহাশ্বেতা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আড়শার এই গ্রামে এবং আশপাশের এলাকায় বেশ কয়েকজন নাচনির পরিবার রয়েছে। সে কারণেই এই এলাকা আমরা বেছে নিয়েছি।’’ তিনি জানান, সকাল থেকে অন্তত সাড়ে ন’টা পর্যন্ত এখানে লেখাপড়ার পরে খেয়েদেয়ে ওরা স্কুলে যাবে। এটি তাঁদের পাইলট প্রকল্প। আগামী দিনে জেলার অন্য এলাকাতেও তাঁদের এই ধরনের প্রকল্প চালু করার ভাবনা রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

উদ্বোধন করতে গিয়ে মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই নাচনিদের লোকপ্রসার শিল্পের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য এই কাজ নিঃসন্দেহে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।’’ নাচনি পস্তুবালাদেবী বা বিমলাদেবী বলেন, ‘‘আমাদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার জন্য এই উদ্যোগ বিরাট পাওনা।’’

Folk dancer Purulia Durbar Women Coordination Committee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy