Advertisement
E-Paper

তাড়া খেয়ে সাঁইথিয়ায়, হাতির হানায় জখম ৩

খেদানো তো গেলই না। উল্টে পাহাড়পুরের জঙ্গলে থাকা তিন হাতি বনকর্মী ও হুলাপার্টির তাড়া খেয়ে আরও বিপত্তি ঘটাল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:০১
হাতি দেখতে ভিড় নদীর ধারে। সাঁইথিয়ায় ছবিটি তুলেছেন অনির্বাণ সেন।

হাতি দেখতে ভিড় নদীর ধারে। সাঁইথিয়ায় ছবিটি তুলেছেন অনির্বাণ সেন।

খেদানো তো গেলই না। উল্টে পাহাড়পুরের জঙ্গলে থাকা তিন হাতি বনকর্মী ও হুলাপার্টির তাড়া খেয়ে আরও বিপত্তি ঘটাল। মঙ্গলবার রাতেই তাদের মতিগতি দেখে মনে হচ্ছিল, এ বার গন্তব্য সাঁইথিয়া। এবং ঠিক সেটাই হয়েছে।

রাতেই পাহাড়পুর জঙ্গল থেকে আমোদপুর, কাগাস, পরিহারপুর হয়ে সাঁইথিয়ার সাত নম্বর ওয়ার্ডে ঢুকে পড়ে ওই তিনটি হাতি। সেখান থেকে ভালদা, তিলপাড়া হয়ে বুধবার সকালে বামনি গ্রাম লাগোয়া ময়ূরাক্ষী নদীর চরে আশ্রয় নেয়। তার আগে রাতেই পরিহারপুরের শেখ ইউসুফ এবং ভালদা গ্রামের অভয়া মণ্ডল ও কার্তিক মণ্ডলকে শুঁড়ে করে তুলে আছাড় মারে। ইউসুফ সাঁইথিয়া গ্রামীণ হাসপাতালে, অভয়াদেবী বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল এবং কার্তিককে সিউড়ি সদর হয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ডিএফও (বীরভূম) কল্যাণ রায় অবশ্য বলেন, ‘‘উৎসুক লোকজন ও গ্রামবাসীদের অনেকে বিভিন্ন দিক থেকে মশাল জ্বেলে তাড়া করেছিল হাতিগুলিতে। তাতেই নেজাজ বিগরে যায় তাদের। ইলামবাজারের দিকে না গিয়ে উল্টো পথে হেঁটে সাঁইথিয়ায় ঢুকে পড়ে।’’

এই প্রথম সাঁইথিয়া পুর-এলাকায় হাতি ঢুকল। ২৪ ঘণ্টা পরেও এলাকার বাসিন্দাদের আতঙ্ক কাটেনি। পরিহারপুরের বাসিন্দা কাশেম শেখ এ দিন বলেন, ‘‘আমরা মঙ্গলবার গভীর রাতে খবর পাই গ্রামে হাতি ঢুকেছে। সেই খবর পেয়ে মাদ্রাসার সঙ্গে যুক্ত পেশায় দিনমজুর প্রৌঢ় ইউসুফ মাদ্রাসার ছেলেদের সাবধান করতে রাত দেড়টা নাগাদ মাদ্রাসায় যান। বাড়ি ফেরার পথে হাতির সামনে পড়ে যান। তখনই হাতি শুঁড়ে করে তুলে আছাড় মারেন ইউসুফকে।’’ আহত শেখ ইউসুফের ছেলে নাজিম ও জসিমের কথায়, ‘‘ওই রাতেই বাবাকে সাঁইথিয়া হাসপাতালে ভর্তি করাই। কপাল ভাল যে বাবাকে পায়ে করে পিষে মেরে ফেলেনি!’’

এ দিন সকালে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কার জমির কত আলু, গম, সরষে নষ্ট হয়েছে হাতিদের তাণ্ডবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। সাত নম্বর ওয়ার্ডের কলেজের পিছনের আদিবাসী পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, পাকু মাড্ডি ও অর্জুন মাড্ডির খড়ের ছাউনির মাটির বাড়ির দেওয়াল ভেঙেছে হাতির দল। পাকুদেবীর কথায়, ‘‘কাকভোরে দেওয়াল ভাঙার শব্দে চমকে উঠি। বাইরে বেরিয়ে দেখি, তিন-তিনটে হাতি! তখনও ঘরের মধ্যে সবাই ঘুমিয়ে আছে। ভয়ে হাতপা ঠান্ডা হয়ে যায়। কোনও রকমে ওদের ঘুম থেকে তুলে বাইরে পালাই।’’ ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শান্তনু রায় বলেন, ‘‘খুব বরাতজোর ওঁরা প্রাণে বেঁচেছেন।’’ পরিহারপুরের পরে ভালদা গ্রামে ঢুকে পড়ে হাতিরা। আহত অভয়াদেবীর বাড়িতে এ দিন কেউ ছিলেন না। তাঁর স্বামী বিজয় মণ্ডল ও ছেলে অশোক বোলপুর হাসপাতালে রয়েছেন। প্রতিবেশী বধূ অনুপা মণ্ডল জানান, ভোর পাঁচটা নাগাদ কল থেকে জল আনতে গিয়েছিলেন অভয়াদেবী। জল নিয়ে ফেরার পথে একটা হাতি তাঁকে শুঁড় দিয়ে তুলে ছুড়ে ফেলে। স্থানীয় বাসিন্দা সন্তোষ মণ্ডল বলেন, ‘‘গ্রামের লোকজন আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করে দেয়। কয়েক জন পড়ে আহত হন। লোকজনের তাড়া খেয়ে ময়ূরাক্ষীর দিকে চলে যায়।’’

সকাল আটটা নাগাদ ওই নদীতেই গিয়েছিলেন এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য সুজিত বসাকের ভাইপো কার্তিক। হাতির দল তাকেও আছড়ে ফেলে। সাঁইথিয়া হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মধুজিৎ সর্দার জানান, ইউসুফের আঘাত কম থাকায় তাঁকে এখানেই রাখা হয়েছে। অভয়াদেবীর কোমড়ের হাড় ভেঙেছে। মাথায়, হাতে পায়ে গুরুতর আঘাত রয়েছে কার্তিকের। নিয়ম মেনে আবেদন করলে সকলকেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন ডিএফও।

Elephant attack Sainthia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy