Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Kidnap

‘কিডন্যাপ করেছি’, ফোন এল মাঝরাতে

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সালাউদ্দিনের পরিবার বছর চারেক ধরে মল্লারপুরের বাসিন্দা। আড়াই মাস আগে মল্লারপুরের সমন্বয়পল্লিতে ভাড়া বাড়িতে উঠে এসেছিলেন সালাউদ্দিনের বাবা-মা।

ঘিরে রাখা হয়েছে দেহ উদ্ধারের ঘটনাস্থল। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

ঘিরে রাখা হয়েছে দেহ উদ্ধারের ঘটনাস্থল। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

দয়াল সেনগুপ্ত 
খয়রাশোল শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৯:২১
Share: Save:

সলমন এমনটা করতে পারেন বিশ্বাস করতে পারছেন না তাঁর মা পাপিয়া বিবি। বিশ্বাস করতে পারছেন না নিহত যুবক সৈয়দ সালাউদ্দিন ওরফে জয়ের মা বাসিরা বেগমও।

খয়রাশোলের আহম্মদপুরের বাড়িতে রবিবার কাঁদতে কাঁদতে বাসিরা বলছিলেন, ‘‘শনিবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ ছেলে আমায় ফোন করেছিল। জানতে চাইল ‘মা কেমন আছো, আব্বু কেমন আছে’। ওটাই ছেলের সঙ্গে আমার আমার শেষ কথা!’’ বাসিরা তখনও জানেন না, কী ভয়ঙ্কর পরিণতি অপেক্ষা করে আছে তাঁর ছেলের জন্য। এ দিন সাতসকালে একমাত্র সন্তানের দেহ উদ্ধারের খবর মেলা ইস্তক কেঁদে চলেছেন মা। শোকস্তব্ধ গোটা পরিবার এবং গ্রাম। বাড়িতে ভিড় জমিয়েছেন পড়শিরা। পাড়ার মহিলারা সান্ত্বনা দিচ্ছেন বাসিরাকে। নিহতের বাবা সৈয়দ আব্দুল মতিন বাড়িতে ছিলেন না। তিনি ইলামবাজার থানায় ছিলেন।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সালাউদ্দিনের পরিবার বছর চারেক ধরে মল্লারপুরের বাসিন্দা। আড়াই মাস আগে মল্লারপুরের সমন্বয়পল্লিতে ভাড়া বাড়িতে উঠে এসেছিলেন সালাউদ্দিনের বাবা-মা। তবে এর আগেও মল্লারপুরেই অন্যত্র ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। তাঁদের আদি বাড়ি খয়রাশোলের পাঁচড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার আহম্মদপুর গ্রামে। সালাউদ্দিনদের বাবারা চার ভাই। এক ভাই এই গ্রামে থাকেন। বাকি তিন জন বাইরে। গ্রামের বাড়িতে সালাউদ্দিনদের যথেষ্ট যাতায়াত ছিল। দুবরাজপুর শ্রী শ্রী সারদা বিদ্যাপীঠ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ কিছুদিন মল্লারপুরে ছিলেন সালাউদ্দিন। বছর খানেক আগে আসানসোলের কালিপাহাড়ির কাছে এক বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ভর্তি হন। সেখানে হস্টেলেই থাকতেন। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, শনিবার হস্টেল থেকে থেকে বন্ধু সলমনের ডাকেই বেরিয়ে এসেছিলেন বছর একুশের সালাউদ্দিন ওরফে জয়। বোলপুরে পিকনিক করতে যাওয়ার নাম করে ডাকা হয়েছিল। সলমনই তাঁর ভাইপোকে ডেকেছিল বলে দাবি করেছেন জয়ের ছোট কাকা সৈয়দ আব্দুল নঈমও।

শনিবার রাতে বাসিরারা ছিলেন মল্লারপুরের বাড়িতে। তিনি এ দিন বললেন, ‘‘রাত ১২টা নাগাদ শুয়ে আছি। ছেলের নম্বর থেকে ওর বাবার ফোনে ফোন আসে। ফোন করে জিজ্ঞাসা করেছে, ‘তুমি কে? আর কে আছে কাছে’? ছেলে হস্টেলে থাকে, ভাবলাম ওখানে কিছু হয়েছে। ওর বাবা জানতে চান, কী হয়েছে। তখন আবার ফোনের ওপার থেকে জিজ্ঞাসা করা হয়, আর কে আছে। আমার স্বামী জানান, আমার স্ত্রী আছেন। একটু তফাতে গিয়ে আমার স্বামী প্রশ্ন করতেই ফোনে বলা হয়, ‘তোর ছেলেকে আমরা কিডন্যাপ করেছি’!’’ বাসিরা জানান, তাঁর স্বামী জয়ের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে ফোনে বলা হয়, ‘ছেলে অজ্ঞান হয়ে আছে, কিডনি তুলছি। ৩০ লক্ষ টাকা চাই। রাত দুটোর মধ্যে টাকা নিয়ে বোলপুর আসতে হবে’। থানা পুলিশ করা চলবে না বলে শাসানিও দেওয়া হয়। ফোন কেটে যায়। বাসিরার দাবি, ‘‘কিছুক্ষণ পরে আবার ফোন আসে মুক্তিপণ চেয়ে। তখনই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন আমার স্বামী। কিন্তু ভয় ছিল ছেলেকে কিছু করে দেবে না তো!’’

বাসিরাদের আশঙ্কাই সত্যি হল। এ দিন সকালে জয়ের গলার নলি কাটা দেহ মিলল ইলামবাজারের চৌপাহাড়ির জঙ্গলে। বাসিরা বারবার বলছিলেন, ‘‘কতবার ফোনের লোকটাকে বললাম, আমার ছেলেকে কিছু কোরো না। একটাই ছেলে আমার। আমার বুক ফাঁকা হয়ে গেল!’’ তাঁর আক্ষেপ, সলমন এই গ্রামেরই ছেলে। জয়ের সঙ্গে খুব ভাব ছিল। কেন সে এমন করতে গেল।

অভিযুক্ত সলমনের বাড়ি থেকে জয়ের পৈতৃক বাড়ির দূরত্ব মেরে কেটে ৭০-৮০মিটার। সলমনের ডাকে হস্টেল থেকে বেরিয়ে তরতাজা জয় খুন হয়েছে ইলামবাজার জঙ্গলে রবিবার সকালে এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই তেতে উঠে এলাকা। স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, অভিযুক্ত সলমনের বাড়ি চড়াও হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। পুলিশ ও তৃণমূল নেতারা পৌঁছে পরিস্থিতি সামলান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kidnap Crime Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE