বাড়ির উঠোনে পড়ে আলু। শোকার্ত মৃত অরুণ ধাড়ার স্ত্রী ও পরিজনেরা। ছবি: শুভ্র মিত্র।
ফের এক আলুচাষির আত্মহত্যা। এবং ফের আত্মহত্যার কারণ নিয়ে মৃতের পরিবার ও পুলিশ-প্রশাসনের দ্বিমত।
শুক্রবার সকালে বাঁকুড়ার জয়পুর থানার ময়নাপুর অঞ্চলের নতুনগ্রামে নিজের বাড়ির উঠোনের একটি গাছে অরুণ ধাড়া (৩২) নামে এক আলুচাষির ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে কোনও এক সময়ে তিনি গাছের সঙ্গে দড়ি বেঁধে আত্মঘাতী হয়েছেন বলে পুলিশের অনুমান। এ দিন নতুনগ্রামের বাড়িতে স্বামীর ঝুলন্ত দেহের পাশে উঠোনে কান্নাকাটি করছিলেন মৃতের স্ত্রী সুমিত্রাদেবী। তিনি বলেন, “একটি ঋণদানকারী সংস্থা থেকে আলুচাষ করার জন্য ১০ হাজার টাকার ঋণ নিয়েছিলেন স্বামী। আরও কয়েক জনের কাছেও কিছু টাকার ধার ছিল। ভেবেছিলেন, আলু বিক্রি করে সেই টাকা শোধ হয়ে যাবে। কিন্তু এ বার আলুর দাম না ওঠায় তাঁর মাথায় হাত পড়ে।” তিনি জানান, কী ভাবে টাকা শোধ করবেন, তা নিয়ে প্রচণ্ড চিন্তায় ছিলেন অরুণ। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত মানসিক অবসাদে ভেঙে পড়ে যে চরম পথ বেছে নেবেন, তা তাঁরা ভাবেননি।
এলাকার অনেক আলুচাষিরই ক্ষোভ, “সরকার শেষ মুহূর্তে আলু কিনতে উদ্যোগী হলেও যে সহায়ক মূল্য (কেজি পিছু সাড়ে ৫ টাকা) ঘোষণা করেছে, তা-ও যথেষ্ট নয়। আলুর অতি ফলনের পরে তাই আর্থিক লোকসান কাটিয়ে ওঠা অনেকের কাছেই অসম্ভব।” যদিও জয়পুরের বিডিও মহম্মদ মারগুম ইলমির বক্তব্য, “এলাকার পঞ্চায়েত ও স্থানীয় সূত্রে খবর নিয়ে জেনেছি, এই মৃত্যুর পিছনে পারিবারিক অশান্তি রয়েছে। আরও বিশদে খবর নেওয়া হচ্ছে।” এলাকায় সরকারি মূল্যে আলু কেনা শুরু হয়েছে দাবি করে তিনি জানান, শুক্রবার ১২০ মেট্রিক টন আলু এই ব্লকের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কেনা হয়েছে। পুলিশেরও দাবি, আলু নিয়ে নয়, পারিবারিক অশান্তির কারণেই এই মৃত্যুর ঘটনা।
অন্য দিকে, বিষ্ণুপুর থানার লয়ের গ্রামে এ দিনই কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন এক আলুচাষি। তাঁকে গুরুতর অবস্থায় বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ওই যুবকের মা হাসপাতালে বসে বলেন, “তিন বিঘা জমিতে ধার-দেনা করে ছেলে আলু চাষ করেছিল। দর না ওঠায় নামমাত্র দরে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিল। এখন পাওনাদাররা টাকা চাইছে। দিতে না পারায় বাড়িতেই চাষের জন্য রাখা কীটনাশক খেয়ে ফেলে। সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।”
এ দিনই আগুনে পোড়া অবস্থায় পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা থানার রসকুন্ডু গ্রামের এক আলুচাষিকে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বার্ন ওয়ার্ডে অগ্নিদগ্ধ স্বামীর বেডের পাশে বসে স্ত্রী বলেন, “রাতের অন্ধকারে কেরোসিনের বোতল বাড়ি থেকে লুকিয়ে আলুর মাঠে নিয়ে গিয়ে আমার স্বামী নিজের গায়ে আগুন লাগান। চিত্কার শুনে আমরা কাছে গিয়ে আগুন নেভাই। মাথা ও কাঁধ অনেকটাই পুড়ে গেছে।” তাঁরও দাবি, ঘরের কয়েকটি ছাগল ও জিনিসপত্র বিক্রি করে কিছু জমিতে আলু চাষ করেছিলেন তাঁরা। খরচের তুলনায় অর্ধেক দামও পাননি। এই নিয়ে চিন্তায় ছিলেন ওই আলুচাষি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy