ভাঙা। রবিবার বোলপুরের হোটেলের সেই দরজা। নিজস্ব চিত্র
তাঁদের ‘চাঙ্গা’ করতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, নেতাদের এলাকায় পাঠাচ্ছে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। আর সেই নেতাদের সামনেই মারপিটে জড়িয়ে পড়লেন দলের নেতা-কর্মীরা।
রবিবার বোলপুরের ওই ঘটনায় কেন্দ্রীয় নেতার সামনে মুখ পুড়ল বিজেপি-র। পাশাপাশি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত, দলের নেতারা যতই হম্বিতম্বি করুন না কেন, সাংগঠনিক ভাবে বিজেপি-র নিচুতলা যে এখনও পোক্ত নয়, তা-ও ধরা পড়ল ওই ঘটনায়।
দলের সংগঠনকে মজবুত করতে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে একঝাঁক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও নেতাকে পাঠিয়েছে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তারই সূত্রে এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ বোলপুরে দলের কর্মিসভায় যোগ দেন কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী বিজয় সাম্পলা। আর বোলপুরের শ্রীনিকেতন রোডে একটি হোটেলে সেই সভা শুরুর আগেই বিজেপি-র জেলা সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে বচসা ও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়লেন দলেরই এক প্রাক্তন নেতা উজ্জ্বল মজুমদার এবং তাঁর সঙ্গী, বোলপুর পুরসভার একমাত্র বিজেপি কাউন্সিলর বিকাশ মিশ্ররা। হোটেলের কনফারেন্স রুমে হওয়া ওই সভায় কে ঢুকবেন, আর কে ঢুকবেন না— এ নিয়েই তাঁদের বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। যা শেষ অবধি দুই গোষ্ঠীর সদস্যদের ধস্তাধস্তি ও হাতাহাতিতে গড়ায়। তার জেরে কনফারেন্স রুমে ঢোকার একটি কাচের দরজা দু’ টুকরো হয়ে যায়। কিছু ক্ষণ হাতাহাতির পরে অবশ্য দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ঝামেলা থেমে যায়।
মন্ত্রীর সামনে এমন ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়ে যান বিজেপি-র জেলা নেতৃত্ব। ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখছে যে দল, যাঁদের উপর ভরসা রেখে সাংগঠনিক শক্তি মজবুত করার স্বপ্ন দেখেছেন বিজেপি নেতৃত্ব— দলের সেই নিচুতলার এমন আচরণ দৃশ্যতই বিব্রত দেখায় মন্ত্রীকে। উঠল গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের প্রসঙ্গও। পরে বিজয় অবশ্য বলেন, ‘‘এমন হওয়া ঠিক নয়। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’’ দিলীপ এবং উজ্জ্বল, দু’জনেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা অস্বীকার করেছেন। উজ্জ্বল বলেন, “মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম। সে সময় দিলীপ কর্মীদের বাধা দিয়েছেন।” দিলীপের আবার দাবি, “গোটা ঘটনায় একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে জোর করে দেখা করতে চাওয়ায় অনেককে বাধা দেওয়া হয়েছে। এটা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নয়।”
অন্য দিকে, সিউড়ির ডিআরডিসি হলে জেলা কমিটি, মণ্ডল ও অঞ্চল স্তরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু। যা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে দাবি করলেন খোদ রিজিজুই। আড়ালে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব যদিও মানছেন, দলে বিভাজন রয়েছে। এ দিন সিউড়িতে অন্তত তা প্রকট হয়নি। অতীতে নানা সময় মতের অমিল দেখা দিলেও জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়, সাধারণ সম্পাদক কালোসোনা মণ্ডলদের পাশেই দেখা যায় প্রাক্তন জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডলকেও।
বৈঠকে আমজনতার উপকারে আসে এমন কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির সুবিধা সাধারণ মানুষ পাচ্ছেন কিনা, তা দেখা এবং জনে জনে সেটা নিয়ে সচতনতা বৃদ্ধি করতে দলের নেতাদের নির্দেশ দেন প্রতিমন্ত্রী। সেখান থেকে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে রিজিজু দাবি করেন, ‘‘কেন্দ্রীয় জনমুখী প্রকল্প এবং বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পগুলির সঠিক রূপায়ণে ব্যর্থ তৃণমূল সরকার। তৃণমূল সরকার পুলিশ ও প্রশাসনকে ব্যবহার করে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করছে।’’ রিজিজু যখন এই কথা বলছেন, তখন বোলপুরে বিজয় অভিযোগ করেন, ‘‘এ রাজ্যের থানাগুলিকে দলীয় কার্যালয়ে পরিণত করেছে তৃণমূল। সাধারণ মানুষ বিচার পাচ্ছেন না।’’
দুপুরের খাওয়া সেরে দু’জনই দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy