Advertisement
২৪ মার্চ ২০২৩

ঘেরাও হয়ে কাটমানির ‘স্বীকারোক্তি’

চার জনের মধ্যে ইন্দ্রজিৎ বাউরি, বাবু বাউরি ও বিপুল বাউরি নামের তিন তৃণমূল কর্মী ক্যামেরার সামনে দাবি করেন, এলাকায় কয়েকজন নেতার কথায় তাঁরা আবাস যোজনার উপভোক্তাদের কাছ থেকে পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত তোলা আদায় করেছেন।

অভিযুক্তেরা। পাত্রসায়রের হাটকৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র

অভিযুক্তেরা। পাত্রসায়রের হাটকৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা 
পাত্রসায়র শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

দলের নেতাদের কথায় সরকারি প্রকল্পে সুবিধা পাইয়ে দিয়ে উপভোক্তাদের কাছ থেকে কাটমানি নিয়েছেন বলে স্বীকার করলেন চার তৃণমূল কর্মী। বৃহস্পতিবার পাত্রসায়রের হাটকৃষ্ণনগর গ্রামের ঘটনা। কয়েক সপ্তাহ আগে ওই গ্রামেরই বাসিন্দা এক স্কুল ছাত্র-সহ তিন জন গুলিতে জখম হয়েছিলেন। এ দিন ওই চার তৃণমূল কর্মীকে ঘিরে বিক্ষোভে ফের উত্তাল হয়ে ওঠে হাটকৃষ্ণনগর।

Advertisement

চার জনের মধ্যে ইন্দ্রজিৎ বাউরি, বাবু বাউরি ও বিপুল বাউরি নামের তিন তৃণমূল কর্মী ক্যামেরার সামনে দাবি করেন, এলাকায় কয়েকজন নেতার কথায় তাঁরা আবাস যোজনার উপভোক্তাদের কাছ থেকে পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত তোলা আদায় করেছেন। যদিও তার বেশির ভাগটাই ওই নেতারা নিয়ে নিতেন। সেই টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন তাঁরা। তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সংসদীয় জেলা সভাপতি শ্যামল সাঁতরা দাবি করেন, ‘‘খবর নিয়ে দেখেছি তাঁরা এক সময় তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক ছিলেন। বিজেপির লোকেরা ভয় দেখিয়ে, হুমকি দিয়ে ভিডিয়ো করিয়েছে। হাতে পোস্টার ধরিয়ে অপপ্রচার করছে। এ সব করে বিজেপির লাভ হবে না।’’

বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংঠনিক জেলা সভাপতি স্বপন ঘোষের দাবি, ‘‘কাটমানি ফেরত দেওয়ার কথা বিজেপি বলেনি, মুখ্যমন্ত্রী নিজের দলীয় নেতা-কর্মীদের বলেছেন। তাতেই মানুষ সাহস পেয়ে হকের টাকা আদায়ের চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে বিজেপি কী ভাবে আসছে?’’

এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ হাটকৃষ্ণনগরে তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত ওই চার জনকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু হয়। স্থানীয় বাসিন্দা শেফালি বাউরি অভিযোগ করেন, ‘‘আবাস যোজনায় ঘর তৈরির টাকা এসেছিল। কিন্তু দশ হাজার টাকা নিয়েছেন তৃণমূলের লোকজন।’’ নির্মলা বাউরি নামে আর এক বাসিন্দার দাবি, ‘‘ইন্দিরা আবাস যোজনায় আমার কাছে টাকা নিয়েছেন তৃণমূলের এই লোকেরা। আমার টাকা ফেরত চাই।’’

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দা বাপি হাজরা অভিযোগ করেন, গরিব মানুষদের কাছ থেকে জোর করে ওরা টাকা আদায় করেছে। আবাস যোজনার প্রাপ্ত টাকা উপভোক্তারা তুলে ব্যাঙ্কের সিঁড়ি দিয়ে যখন নামতেন, সেই সময় তাঁদের ছুরি দেখিয়ে আটকে টাকা কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

তাঁর আরও দাবি, ‘‘এলাকায় ৩০ বিঘার মতো খাস জমিতে স্থানীয় কিছু মানুষ ৪০-৫০ বছর ধরে চাষাবাদ করে আসছিলেন। ওই জমি কেড়ে কারচুপি করে লক্ষ লক্ষ টাকায় তা বিক্রি করে দেওয়াতেও ওই চার জন যুক্ত।’’

ঘেরাও হয়ে থাকা তৃণমূল কর্মী বিপুল বাউরি, বাবু বাউরি স্বীকার করেন, ‘‘জোর করে টাকা তুলিনি। তৃণমূলের এলাকার নেতারা ফোন করে টাকা চাইতেন। প্রকল্পের উপভোক্তারা আমাদের দুই থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়েছেন। নেতাদের সেই টাকা দেওয়ার পরে আমাদের সামান্য কিছু দিতেন। তবে মানুষ চাইলে সেই টাকা ফেরত দিতে হবে। প্রয়োজনে দিনমজুরি খেটে টাকা ফেরত দেব।’’

আর এক তৃণমূল কর্মী ইন্দ্রজিৎ বাউরি দাবি করেন, ‘‘বাড়ি পিছু পাঁচ-১০ হাজার টাকা তুলেছি। গ্রামবাসীরা দাবি করছেন, সব মিলিয়ে সাত-আট লক্ষ টাকা তোলা হয়েছে। কিন্তু অত টাকা দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। জনগণ যা সিদ্ধান্ত নেবেন মেনে নেব। প্রয়োজনে জেলে দিন।’’

যদিও দলের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পাত্রসায়রের ব্লক তৃণমূল সভাপতি পার্থপ্রতিম সিংহ দাবি করেছেন, ‘‘সারা রাজ্যে ‘কাটমানি’ নিয়ে হিড়িক চলছে। ওই চার জন দলের সদস্য বা পদাধিকারী নন। বাইরে কে, কোথায়, কার কাছে টাকা নিয়েছে কি নেয়নি, তার দায় দল কেন নিতে যাবে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.