Advertisement
১৯ মে ২০২৪
হোমের তরুণীকে ফেরালেন টোটো চালকেরা

জানলা ভেঙে পালানোর চেষ্টা

জানলার রড খুলে ওড়নার সাহায্য দোতলা থেকে ঝাঁপ মেরে হোম থেকে পালালেন এক তরুণী। তাতেও শেষরক্ষা হল না। পালানোর ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই স্থানীয় টোটো চালকেরা তাঁকে উদ্ধার করে হোম কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেন।

হোমের এই জানলার রড ভেঙেই পালিয়েছিলেন তরুণী। —নিজস্ব চিত্র

হোমের এই জানলার রড ভেঙেই পালিয়েছিলেন তরুণী। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৬ ০১:৩৫
Share: Save:

জানলার রড খুলে ওড়নার সাহায্য দোতলা থেকে ঝাঁপ মেরে হোম থেকে পালালেন এক তরুণী। তাতেও শেষরক্ষা হল না। পালানোর ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই স্থানীয় টোটো চালকেরা তাঁকে উদ্ধার করে হোম কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেন।

বুধবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ রামপুরহাটের নিশ্চিন্তপুর এলাকার একটি সরকারি হোমের ঘটনা। ‘রাজ্য শিশুসুরক্ষা দিবসে’র ঠিক ২৪ ঘণ্টা আগের এই ঘটনায় প্রশ্নের মুখে ওই সরকারি স্বল্পকালীন ওই হোমের পরিকাঠামো। বছর আঠারোর ওই তরুণীর অবশ্য দাবি, তাঁকে বাড়িতে ফেরানো হোক।

হোম সূত্রের খবর, পুরনো দিল্লির সিলানপুর থানা এলাকার ওই তরুণীর কর্মসূত্রে দিল্লিতে থাকা বহরমপুরের এক যুবকের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। সম্প্রতি ওই যুবকের সঙ্গে পালিয়ে তরুণী নিজের বাড়ি ছেড়েছিলেন। দিল্লিতেই কিছুদিন একসঙ্গে কাটানোর পরে বহরমপুরের ওই যুবক তরুণীকে একা রেখে পালিয়ে যান। ছেলেটির খোঁজে দিল্লি থেকে হাওড়া হয়ে রামপুরহাটে চলে আসেন ওই তরুণী। কিন্তু যুবকের ঠিকানা না জানায় তিনি আর বহরমপুরে পৌঁছতে পারেননি। তার আগেই তরুণীটিকে শহরে একা ঘুরতে দেখে উদ্ধার করে রামপুরহাট থানার পুলিশ। আদালতে হাজির করানো হলে গত ১৪ মে ওই তরুণীকে নিশ্চিন্তপুরের ওই হোমে পাঠানোর নির্দেশ দেয় রামপুরহাট এসিজেএম আদালত। হোমের সুপার তাপসী সালুই বলেন, ‘‘আমরা দিল্লিতে ওই তরুণীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। কিন্তু পরিবার মেয়েটিকে আর ঘরে ফেরত নিতে চাইছে না। এই অবস্থায় ওঁকে ঘরে ফেরানোর জন্য আমরা কাগজপত্র তৈরি করছিলাম। তার মধ্যেই মেয়েটি এই কাণ্ড করে বসল।’’

এ দিন দুপুর ১২টা নাগাদ গিয়ে দেখা গেল, হোমে ঢোকার দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। হোমের এক শিক্ষক জানান, দোতলার জানালার একটি লোহার রড খুলে তরুণীটি জানলার অন্য রডে ওড়না বেঁধে নীচে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। ঝাঁপ মেরেই তিনি হোমের পাশের রাস্তা দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যান। ঘটনার কথা জানাজানি হতেই হোমের সুপার বাইরে বেরিয়ে তরুণীর খোঁজ শুরু করেন। তত ক্ষণে এলাকা ছাড়িয়ে পালিয়ে গিয়েছেন তরুণী। তাপসীদেবী বলেন, ‘‘ঘটনার সময় হোমের আবাসিক মেয়েদের অনেকে স্নান করছিল। কেউ রান্নার কাজে ব্যস্ত ছিল। ওই তরুণী স্নান করার জন্য হোমের উপরে ছিলেন। সেই ফাঁকে কখন যে মেয়েটি জানালার লোহার রড খুলে পালালেন, কেউ দেখতে পায়নি।’’ হোম কর্তৃপক্ষ খোঁজ শুরু করতেই খবর ছড়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যেও। তার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে স্থানীয় টোটো চালকেরা স্টেশন সংলগ্ন লোকোপাড়া এলাকা থেকে ওই মেয়েটিকে ঘোরাঘুরি করতে দেখে তাঁকে ধরে ফেলেন। টোটোয় চাপিয়ে তাঁকে হোমেও পৌঁছে দেন।

এ দিকে, হোমে ফেরানো হলে ওই তরুণী প্রবল কান্নাকাটি শুরু করেন। কাঁদতে কাঁদতে তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘হোমের অন্য এক মেয়ে আমাকে মারধর করে। আমি এখানে থাকতে চাই না। বাড়িতে ফিরতে চাই। তাই পালিয়েছিলাম।’’ হোম কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই অভিযোগ মানতে চাননি। হোমের অফিস কর্মী সোমনাথ প্রামাণিক এবং আবাসিকদের অনেকের পাল্টা দাবি, ‘‘মেয়েটিই হোমের কোনও কাজ করতে চায় না। অন্যদের মারধর করতেন। তাই ওঁর সঙ্গে হোমের অন্য মেয়েদের বনিবনা হতো না।’’ এই পরিস্থিতির জন্য যদিও হোমের পরিকাঠামোকে দায়ী করেছেন এলাকার মানুষ। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন হোমের নিরাপত্তা নিয়েও। হোমের সভাপতি সত্যজিৎ মজুমদারের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘জন্মলগ্ন থেকেই হোমটি ভাড়াবাড়িতে চলছে। নিজস্ব বাড়ি না থাকায় পরিকাঠামোগত দিক থেকে আমাদের চরম অসুবিধার মধ্যে পড়চে হচ্ছে।’’ এ ব্যাপারে প্রশাসনের কাছে বহুবার আবেদন করা হলেও সাড়া মেলেনি বলেই তাঁর অভিযোগ।

এসডিও (রামপুরহাট) সুপ্রিয় দাস যদিও জানিয়েছেন, ওই হোমের জন্য লিজের ভিত্তিতে একটি জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই জমি নিয়ে কিছু জটিলতা থাকায় এখনও কাজ এগোয়নি। জটিলতা মিটলেই প্রশাসনের তরফে হোমের জন্য নিজস্ব ভবন গড়ে দেওয়ার আশ্বাস তিনি দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় একটি প্রকল্পে ওই হোমের নিজস্ব ভবন গড়ার ব্যাপারে একই রকম আশ্বাস দিয়েছেন জেলা শিশুসুরক্ষা সোসাইটির আধিকারিক নিরূপম সিংহও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

home breaking
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE