Advertisement
E-Paper

তৃণমূলের দ্বন্দ্বে পঞ্চায়েত সমিতিতে প্রহৃত উপপ্রধান

ফের শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এল বাঁকুড়ায়। এ বার তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর বিবাদে উত্তেজনা ছড়ায় ছাতনা পঞ্চায়েত সমিতি কার্যালয় চত্বরে। মঙ্গলবার তৃণমূল পরিচালিত এই পঞ্চায়েত সমিতির বিরুদ্ধে দলের ব্যানারেই কয়েকটি সরকারি গৃহ নির্মাণ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলেন শতাধিক মানুষ। সেই সময় পঞ্চায়েত সমিতির দফতরেই সভাপতির স্বামী তথা ছাতনা ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধানকে মারধরের অভিযোগ উঠল আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৫ ০১:১৪
গণ্ডগোলের পরে সমিতির অফিসে পুলিশ।— নিজস্ব চিত্র

গণ্ডগোলের পরে সমিতির অফিসে পুলিশ।— নিজস্ব চিত্র

ফের শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এল বাঁকুড়ায়। এ বার তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর বিবাদে উত্তেজনা ছড়ায় ছাতনা পঞ্চায়েত সমিতি কার্যালয় চত্বরে। মঙ্গলবার তৃণমূল পরিচালিত এই পঞ্চায়েত সমিতির বিরুদ্ধে দলের ব্যানারেই কয়েকটি সরকারি গৃহ নির্মাণ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলেন শতাধিক মানুষ। সেই সময় পঞ্চায়েত সমিতির দফতরেই সভাপতির স্বামী তথা ছাতনা ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধানকে মারধরের অভিযোগ উঠল আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে।
কয়েক মাস আগে পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতিও তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে অগ্নিগর্ভ চেহারা নিয়েছিল। মার খেয়েছিলেন সমিতির সভাপতি, কর্মাধ্যক্ষ-সহ অনেকে। ছাতনার ঘটনা এ দিন জেলা তৃণমূলের অনেক নেতাকে পাত্রসায়রের কথা মনে পড়িয়ে দিয়েছে। এ দিন দুপুরে ছাতনার মালডাঙা, ঝুঁজকা, শুশুনিয়া, কড়রার মতো বেশ কিছু অঞ্চল থেকে শতাধিক লোকজন পঞ্চায়েত সমিতির দফতরে জড়ো হন। তাঁদের অনেকের হাতেই ছিল তৃণমূলের দলীয় পতাকা। গীতাঞ্জলি প্রকল্পে দুর্নীতি করা হচ্ছে বলে পঞ্চায়েত সমিতির বিরুদ্ধে তাঁদের অভিযোগ। তারই প্রেক্ষিতে এ দিন স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি ছিল আন্দোলনকারীদের। পঞ্চায়েত সমিতির অফিসে ঢুকতেই আন্দোলনকারীদের মুখোমুখি পড়ে যান ছাতনা ১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বঙ্কিম মিশ্র। প্রথমে তাঁর সঙ্গে বচসা শুরু হয় কয়েক জনের। অভিযোগ, কয়েক জন মিলে বঙ্কিমবাবুর উপর চড়াও হয়ে তাঁকে মারধর করে। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে চরম উত্তেজনা দেখা দেয় পঞ্চায়েত সমিতিতে। বঙ্কিমবাবুর স্ত্রী, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মৌসুমী মিশ্রকেও কয়েক জন হেনস্থা করে বলে অভিযোগ।

ঝামেলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বঙ্কিমবাবু বলেন, “যারা আমাকে মারধর করেছে, তারা আমাদের দলের লোক। আমাকে দেখেই তারা প্রশ্ন করে, সিপিএম, বিজেপির লোক কেন গীতাঞ্জলি প্রকল্পে ঘর পাবে। আমি তাদের বলি, গরিব মানুষের জন্য এই প্রকল্প। সেখানে দল দেখব না। তাতেই উত্তেজিত হয়ে ওরা আমাকে মারধর করে।’’ যদিও বিষয়টি নিয়ে পুলিশে অভিযোগ জানাতে নারাজ বঙ্কিমবাবু। তিনি বলেন, “আগে দলকে সব জানাব। তার পর পুলিশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেব।’’ আন্দোলনকারীদের মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জনের অভিযোগ, “গীতাঞ্জলি প্রকল্পে যোগ্য লোকেরা বাড়ি পাচ্ছেন না। দুর্নীতি করে টাকার বিনিময়ে বাড়ি দিচ্ছে পঞ্চায়েত সমিতি।’’ মৌসুমীদেবীর অবশ্য দাবি, “এই সব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কিছু লোক পঞ্চায়েত সমিতি অফিসে ঢুকে হামলা চালাল।’’

ছাতনা ব্লকে এলাকার তৃণমূল বিধায়ক শুভাশিস বটব্যাল এবং বঙ্কিম মিশ্রের গোষ্ঠীর বিবাদ নতুন নয়। বঙ্কিম-গোষ্ঠী এখন কিছুটা কোণঠাসা। ব্লকের তৃণমূল সভাপতি পরমেশ্বর কুণ্ডু, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় শুভাশিসবাবুর অনুগামী হিসেবেই পরিচিত। বঙ্কিমবাবুর শক্তি বলতে পঞ্চায়েত সমিতিতে কর্মাধ্যক্ষদের একাংশ। তাঁর স্ত্রী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। সরকারি নানা প্রকল্প নিয়ে মৌসুমীদেবীর (আসলে বকলমে বঙ্কিমবাবু) প্রতি দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন শুভাশিসবাবুর অনুগামীরা। সম্প্রতি গীতাঞ্জলি প্রকল্পে রাজ্য থেকে কয়েক হাজার বাড়ির কোটা বরাদ্দ হয়েছে ছাতনা পঞ্চায়েত সমিতির জন্য। এই প্রকল্প বিলিকে কেন্দ্র করেই শুভাশিসবাবুর অনুগামীদের কোপের মুখে পড়েছেন বঙ্কিমবাবু। অভিযোগ, যোগ্য ব্যক্তিদের প্রকল্পের সুবিধা না দিয়ে স্বজনপোষণ করা হচ্ছে। সমান ভাবে প্রকল্পের বাড়ি বিলি করা হচ্ছে না।

কর্মাধ্যক্ষ জয়ন্তবাবুর কথায়, “এ দিন পঞ্চায়েত সমিতিতে যা ঘটেছে, তা গণ-বিক্ষোভ বলেই প্রাথমিক ভাবে আমার কাছে রিপোর্ট এসেছে। এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখানো পদ্ধতিতে কাজ করলে হয়তো এই ঘটনা ঘটত না।’’ ঘটনার খবর পেয়েই এ দিন বিকেলে ছাতনা পঞ্চায়েত সমিতিতে গিয়েছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “সাধারণ মানুষ দুর্নীতির যে অভিযোগ তুলছেন, তা খতিয়ে দেখা হবে। কোনও জনপ্রতিনিধিকে মারধর করা হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে আমি খোঁজ নিচ্ছি।” দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা তিনি মানতে চাননি। যদিও তিনি ছাতনা পঞ্চায়েত সমিতিতে দলীয় কর্মী ও কর্মাধ্যক্ষদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে সভাধিপতি বলেন, “কে বাড়ি পাবে, কে পাবে না, তা নিয়ে বিডিও তদন্ত করে রিপোর্ট দেবেন। সেই ভিত্তিতেই রাজ্য থেকে টাকা আসবে। এ নিয়ে ঝামেলা হওয়ার কথা নয়। একটা ভুল বোঝাবুঝিতেই এই ঘটনা ঘটল।’’

ব্লক তৃণমূল সভাপতি বলেন, “তৃণমূলের ব্যানারেই এ দিন পঞ্চায়েত সমিতিতে আন্দোলন করা হয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু কে বা কারা উপস্থিত ছিলেন, আমার জানা নেই।’’পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে কোনও অভিযোগ থানায় দায়ের করা হয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত শুরু হবে।

chatna bankura Trinamool susunia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy