Advertisement
E-Paper

ডাক্তার নিয়োগে দ্বন্দ্ব, হুমকির নালিশ

ফের শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ছায়া পড়ল গ্রাম পঞ্চায়েতে। দলের ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধেই খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুললেন তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান। বাঁকুড়ার ইঁদপুর ব্লকের গৌরবাজার গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘটনা। দল সূত্রে খবর, পঞ্চায়েতে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক নিয়োগকে কেন্দ্র করেই প্রধান ও ব্লক সভাপতির মধ্যে দ্বন্দ্ব। গ্রাম পঞ্চায়েত সূত্রে জানা যাচ্ছে, গৌরবাজার পঞ্চায়েতে একজন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের পদ খালি রয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৫ ০১:২৪

ফের শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ছায়া পড়ল গ্রাম পঞ্চায়েতে। দলের ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধেই খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুললেন তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান। বাঁকুড়ার ইঁদপুর ব্লকের গৌরবাজার গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘটনা।

দল সূত্রে খবর, পঞ্চায়েতে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক নিয়োগকে কেন্দ্র করেই প্রধান ও ব্লক সভাপতির মধ্যে দ্বন্দ্ব। গ্রাম পঞ্চায়েত সূত্রে জানা যাচ্ছে, গৌরবাজার পঞ্চায়েতে একজন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের পদ খালি রয়েছে। সেখানে চাকরির জন্য ১৪ জন প্রার্থী আবেদন জানিয়েছেন। আবেদনকারীদের মধ্যে একজন ব্লক সভাপতিরই ভাই। মাস পাঁচেক আগে ওই আবেদনকারীদের মৌখিক পরীক্ষাও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও কাউকে নিয়োগ করা হয়নি। এই ডাক্তার নিয়োগকে কেন্দ্র করেই পঞ্চায়েত প্রধান সঞ্জয় সোরেন, পঞ্চায়েত সদস্য আবদুল রসিদ মণ্ডল ও ব্লক সভাপতি অসিত লায়েকের মধ্যে বিবাদ শুরু হয়েছে।

প্রধান ও ওই সদস্যের অভিযোগ, অসিতবাবু তাঁর ভাইকে ওই পঞ্চায়েতে ডাক্তারের চাকরি দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। প্রধানের দাবি, “সভাপতির ভাইয়ের তুলনায় অন্যান্য আবেদনকারীদের যোগ্যতা বেশি। তাহলে কী করে আমরা তাঁকে চাকরি দেব? সভাপতির চাপে পড়েই মৌখিক পরীক্ষা হয়ে গেলেও পাঁচমাস পরেও কাউকে ডাক্তার হিসেবে নিয়োগ করতে পারছি না।” অন্যদিকে ব্লক সভাপতি অসিতবাবুর পাল্টা অভিযোগ, “আমার ভাইকে নিয়োগের জন্য কোনও রকম চাপ আমি দিইনি। কিন্তু ওই পদে নিয়োগের জন্য এক ব্যক্তির কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা ঘুষ নিয়েছেন পঞ্চায়েত প্রধান। দুর্নীতি করে ওই পদে লোক নিয়োগ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই ঘটনার বিরুদ্ধেই আমার আপত্তি জানিয়েছি।” যদিও অসিতবাবুর অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে উড়িয়ে দিয়েছেন সঞ্জয়বাবু।

উল্লেখ্য, এই গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৪টি আসনের মধ্যে ১৩টিই তৃণমূলের। মাত্র একটি সিপিএমের দখলে রয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েতে অসিতবাবুর অনুগামীর সংখ্যাও বেশি। দল সূত্রের খবর, তাই সঞ্জয়বাবুর অনুগামী আবদুল রসিদকে শিল্প পরিকাঠামো সংক্রান্ত উপ সমিতির সঞ্চালক পদ থেকে সরাতে অনাস্থা আনেন অসিতবাবুর অনুগামীরা। সম্প্রতি তলবি সভায় আস্থা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়ে পদও খোয়ান আবদুল রসিদ। এই ঘটনার পরেই বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় থানায় অসিতবাবু-সহ তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে বাড়িতে চড়াও হয়ে তাঁদের খুন করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ আনেন সঞ্জয়বাবু ও আবদুল রসিদ। তাঁদের অভিযোগ, “বাড়িতে ঢুকে অসিত ও তার লোকজন আমাদের খুন করার হুমকি দিচ্ছে। ফোনেও মাঝে মাঝে প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখাচ্ছে দুষ্কৃতীরা।” যাবতীয় অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন অসিতবাবু। উল্টে শীঘ্রই এলাকায় পথসভা করে তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচারের জবাব দেবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, “ওঁরা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলছে। এলাকায় সমর্থন হারিয়ে ওঁরা এখন পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছে। আমি পথসভা করে মানুষের কাছে তা তুলে ধরব।” পুলিশ জানিয়েছে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।

তবে এই ঘটনার জেরে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরাই বলতে শুরু করেছে, মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া নির্দেশ সত্ত্বেও বাঁকুড়ায় দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থামছে না। কিছুদিন আগেই সোনামুখী পঞ্চায়েত সমিতির এক মহিলা কর্মাধ্যক্ষকে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল পঞ্চায়েত সমিতিরই এক সদস্যের বিরুদ্ধে। শাসকদলের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে একাধিকবার অশান্ত হয়েছে পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতি। ছাতনা পঞ্চায়েত সমিতিতেও সভাপতির স্বামীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের একটি গোষ্ঠীর লোকজনের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া গঙ্গাজলঘাটি, রাইপুর, সিমলাপালের মতো বহু ব্লকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের নানা ঘটনা বহুবার প্রকাশ্যে এসেছে।

একদিকে গোটা জেলা জুড়েই শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের আগুন জ্বলছে, অথচ তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বকে গরমাগরম বক্তৃতা দেওয়া ছাড়া আর কোনও ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন দলেরই কর্মীদের একাংশ। এ নিয়ে দলের মধ্যে জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ-র বিরুদ্ধেও ক্ষোভ ছড়িয়েছে দলের একাংশের মধ্যে। অনেকেরই মতে, জেলা সভাপতি কোনও রকম কড়া পদক্ষেপ না করায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। তাঁদের ক্ষোভ, “একদিকে দলনেত্রী জেলা সভাপতিদের দলীয় কোন্দল মেটাতে কড়া হতে বলছেন। কিন্তু বাঁকুড়ায় তাঁর নির্দেশ পালন করা হচ্ছে না।”

এ দিন তৃণমূল সভাপতি অরূপবাবুকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। দলের জেলা কোর কমিটির সদস্য তথা জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীর অবশ্য আশ্বাস, “ইঁদপুরে কি হয়েছে খোঁজ নিয়ে দেখছি। দলের শৃঙ্খলা কেউ ভাঙলে তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেব।” তা শুনেও অনেক কর্মীর মন্তব্য, ‘‘ব্যবস্থা এ বার সবার সামনে নিতে হবে। বিধানসভার ভোট দূরে নেই। তা নাহলে এই সব ঘটনা ভোটে প্রভাব ফেলতে পারে।’’ বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকারের কটাক্ষ, “এই রাজ্যের প্রশাসন স্বচ্ছ নয় তা বারবার প্রমাণিত হচ্ছে। সরকারি পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে যে দুর্নীতির অভিযোগ আকছার উঠছে তা যে মিথ্যা নয়। দলের নেতাদের দ্বন্দ্বেই তার প্রমাণ হয়ে গেল।”

Bankura Group clash Trinamool Police Gram panchayat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy