Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Bankura Sammilani Medical College

পরীক্ষাগারে ঘুম বাঁকুড়ার স্বাস্থ্যকর্মীর! করমণ্ডল দুর্ঘটনায় আহতের সঙ্গে অসহযোগিতা অভিযোগ

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় বালেশ্বরে করমণ্ডল এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই এ রাজ্যের বেশ কিছু হাসপাতালে সতর্কতা জারি করা হয়। যার মধ্যে অন্যতম বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

Health worker of Bankura hospital was allegedly sleeping while an injured in coromandel incident went for x-ray test

বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২৩ ১৯:১৬
Share: Save:

বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনার পর চূড়ান্ত সতর্কতা জারি হয়েছে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে। জরুরিকালীন পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে বলা হয়েছিল সমস্ত বিভাগকে। আগে থেকে মজুত করা হয় রক্ত, ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম। কিন্তু তার পরেও হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা আহতদের দুর্ভোগের ছবি ছড়িয়ে পড়ল সমাজমাধ্যমে (এই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন)। ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে যিনি ডিজিটাল এক্স-রে করাবেন, তিনি সংশ্লিষ্ট ঘরে ঘুমে কাদা। তাঁকে ডাকাডাকি করে ঘুম ভাঙাতে গিয়ে গলদগর্ম দশা হয় আহতের পরিজনের। হাসপাতালের একটি সূত্র বলছে, তিনিই ডিজিটাল এক্স-রে করানোর একমাত্র কর্মী। অন্য দিকে, এই ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই নড়েচড়ে বসেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ।

গত ২ জুন, শুক্রবার সন্ধ্যায় বালেশ্বরে করমণ্ডল এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই এ রাজ্যের বেশ কিছু হাসপাতালে সতর্কতা জারি করা হয়। যার মধ্যে অন্যতম বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। দুর্ঘটনার পর দিন অর্থাৎ শনিবার থেকেই দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনে থাকা বাঁকুড়ার যাত্রীদের জেলায় ফেরানোর কাজ শুরু হয়েছে। বেশির ভাগ যাত্রীই শরীরের একাধিক অংশে চোট-আঘাত নিয়ে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনের মোট ৬৬ জন যাত্রী জেলায় ফিরেছেন। এঁদের মধ্যে ১৫ জনের শরীরে আঘাত থাকায় তাঁদের জেলা মেডিক্যাল কলেজে রেখে চিকিৎসা করানো হয়েছে। তার মধ্যেই ওই হাসপাতালের দৃশ্য বলে যে ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে, তাই নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। জানা যাচ্ছে, ভিডিয়োটি গত ৩ জুনের। ভোর সাড়ে ৩টে নাগাদ আহত রেলযাত্রী সুজন বাউড়ির পরিবারের লোকজন তাঁর ডিজিটাল এক্স-রে করানোর কাগজপত্র জমা দিতে যান সংশ্লিষ্ট ঘরে। সেখানে তখন ১জন কর্মীই ছিলেন। তিনিও বেঞ্চে টানটান হয়ে শুয়ে নাক ডেকে ঘুমোচ্ছিলেন।

রোগীর পরিবারের অভিযোগ, অনেক ডাকাডাকিতে কর্মীর ঘুম ভাঙলেও তিনি বেঞ্চ থেকে উঠে নথিপত্র নেওয়ার সৌজন্যতাটুকুও দেখাননি। শুয়ে শুয়েই বিরক্তির সঙ্গে কাউন্টারের ভিতর থেকে নথিপত্র সংগ্রহ করেন। ডিজিটাল এক্স-রে কর্মীর এই আচরণ খারাপ লাগায় গোটা বিষয়টি নিজের মোবাইলে ভিডিয়ো করে সমাজমাধ্যমে ছেড়ে দেন। আহত ট্রেন যাত্রীর আত্মীয় গোপী বাউড়ি বলেন, “আমি সে সময় হাসপাতালে ছিলাম না। যাঁরা সে সময় ডিজিটাল এক্স-রে করাতে গিয়েছিলেন, তাঁরা সেই ঘরে গিয়ে দেখেন এক কর্মী বেঞ্চে ঘুমোচ্ছেন। বেশ কিছু ক্ষণ ডাকাডাকির পর তাঁর ঘুম ভাঙে। কিন্তু তিনি শুয়ে শুয়েই নথিপত্র জমা নেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ডিজিটাল এক্স-রে করা হয়েছিল।”

এই ভিডিয়ো নিয়ে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজের সুপার সপ্তর্ষি চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা ভিডিয়োটি দেখেছি। হাসপাতালের ভিতরে ওই ডিজিটাল এক্স-রে করানো হলেও তা পিপিপি মডেলে পরিচালনা করে একটি বেসরকারি সংস্থা। তা সত্ত্বেও কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল তা তদন্ত করে দেখা হবে। অভিযুক্ত কর্মীকে ৩ দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। যুক্তিযুক্ত কারণ না থাকলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।”

আর এই বিতর্কে ‘অভিযুক্ত’ কর্মী উত্তম ভক্তের যুক্তি, “দুর্ঘটনার পরে পরেই হাসপাতালের আধিকারিকেরা আমাদের বিভাগে গিয়ে সতর্ক থাকার কথা বলেছিলেন। আমরা যথেষ্ট সতর্ক ছিলাম। কিন্তু একের পর এক আহতের এক্স-রে প্রয়োজনীয় নথি তৈরির কাজ করে আমার মাথা যন্ত্রণা শুরু হয়।’’ তাঁর দাবি, তিনি ঘুমোননি। শুধু বেঞ্চে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE