Advertisement
E-Paper

জল যদি ঢোকে, আতঙ্কে কাটল রাত

নাছোড় বৃষ্টি কিছুতেই বিদায় নিচ্ছে না। কিছুক্ষণের বিরতি দিলেও ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ফের ঝমঝমিয়ে ফিরে আসছে সে। ইতিমধ্যেই বৃষ্টির দাপটে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার নদীগুলোতে জলস্ফীতি ঘটেছে। মঙ্গলবার কোথাও জল কমেছে, কোথাও আবার কজওয়ে জলের নীচেই ডুবে ছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:২৩
হুড়ার লালপুর-কেশরগড় রাস্তায় পাতলই নদীর করণডি কজওয়ের উপরে এমনই ছিল জলের বেগ। ত্রিপলের নীচেই চলছে সংসার। বাঁকুড়ার কেশিয়াকোলে।—নিজস্ব চিত্র

হুড়ার লালপুর-কেশরগড় রাস্তায় পাতলই নদীর করণডি কজওয়ের উপরে এমনই ছিল জলের বেগ। ত্রিপলের নীচেই চলছে সংসার। বাঁকুড়ার কেশিয়াকোলে।—নিজস্ব চিত্র

নাছোড় বৃষ্টি কিছুতেই বিদায় নিচ্ছে না। কিছুক্ষণের বিরতি দিলেও ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ফের ঝমঝমিয়ে ফিরে আসছে সে। ইতিমধ্যেই বৃষ্টির দাপটে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার নদীগুলোতে জলস্ফীতি ঘটেছে। মঙ্গলবার কোথাও জল কমেছে, কোথাও আবার কজওয়ে জলের নীচেই ডুবে ছিল।

এরই মধ্যে এ দিন সকালে ইন্দাসে বাড়ি ধসে মৃত্যু হয় এক বালকের। জখম হয়েছেন আরও একজন। প্রশাসন সূত্রে খবর, মৃত বালক সেখ রূপচাঁদ (১০) ইন্দাসের খোসবাগ এলাকার বাসিন্দা। অ্যাসবেসটসের ছাউনির মাটির বাড়িতে রূপচাঁদ-সহ ওই পরিবারের পাঁচ সদস্য চাপা পড়েন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় রূপচাঁদের। গুরুতর জখম হন তার কাকা সেখ মঞ্জুর। তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছে। বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক ময়ূরী ভাসু বলেন, “ইন্দাসের ওই ঘটনাটি মর্মান্তিক। এ ছাড়া বৃষ্টিতে বিষ্ণুপুর মহকুমায় তেমন কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর মেলেনি।” ইন্দাসের বিডিও সুচেতনা দাস জানিয়েছেন, দুর্ঘটনাগ্রস্থ পরিবারটিকে প্রশাসনের তরফে ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হয়েছে।

বাঁকুড়া জেলা আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার দিনভর জেলায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৪৯.২ মিলিমিটার। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত জেলায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ১০.৪ মিলিমিটার। রবিবার ও সোমবার রাইপুরের ভৈরববাঁকী কজওয়ে জলের নীচে থাকলেও এ দিন জল নেমে যায়। তাই ফের ওই রাস্তায় যানবাহন চলাচল শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন রাইপুরের বিডিও দীপঙ্কর দাস। যদিও কংসাবতী জল ছাড়ায় খাতড়ার কেচন্দাঘাট অবশ্য জলের তলাতেই রয়ে গিয়েছে। ফলে খাতড়া-রানিবাঁধ রাস্তায় যান চলাচল এ দিনও দিনভর বন্ধ ছিল। কংসাবতী সেচ দফতরের খাতড়া মহকুমা আধিকারিক সৌরভ দাস জানিয়েছেন, এ দিন ১৫ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া হচ্ছে কংসাবতী ব্যারাজ থেকে।

এ দিন সকাল থেকে পুরুলিয়া জেলায় আবহাওয়ার কিছুটা উন্নতি হলেও গত দু’দিনে যা ব্যাপক পরিমাণে বৃষ্টি হয়েছে (জেলা প্রশাসনের হিসেবে ১৩৫ মিলিমিটার) তাতে পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। বিভিন্ন রাস্তায় কজওয়ে জলের তলায় চলে যাওয়ায় এ দিন সকালের দিকেও সেই সব রাস্তাগুলিতে যানবাহন চলাচল করেনি। দুপুরের পরে কিছু কজওয়ের জল নামে।

এ দিকে সোমবার বৃষ্টিতে বিনিদ্র রাত কাটিয়েছেন মানবাজার ১ ব্লকের ধানাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের জামদা গ্রামের ৫২টি পরিবার। মুকুটমণিপুর জলাধারে জল বাড়তে শুরু করায় লাগোয়া ওই গ্রামের বাসিন্দাদের সোমবার বিকেলেই উঁচু জায়গায় সরানোর কথা ভেবেছিল প্রশাসন। শেষ পর্যন্ত তা করতে হয়নি। তবে গ্রামের বাসিন্দা অনিল মুদি, শশধর মুদি প্রমুখের কথায়, ‘‘যে ভাবে জলাধারের জল বাড়ছিল তাতে সোমবার রাতে আমরা ঘুমোতে পারিনি।’’ একই ছবি কংসাবতী নদী লাগোয়া পুঞ্চার গোবরদা গ্রামেরও। ওই গ্রামে সোমবার রাতে জল ঢুকে পড়ে। এই গ্রামেরও ৩০টি পরিবারকে সরানোর চিন্তা ছিল প্রশাসনের। কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকে বৃষ্টি কমে আসায় এবং মুকুটমণিপুর জলাধার জল ছাড়ায় কোনও পরিবারকেই সরানোর প্রয়োজন পড়েনি। তবে রাতে বেশ কিছু এলাকায় বৃষ্টি শুরু হওয়ায় ফের গ্রামে আতঙ্ক ছড়ায়।

মানবাজার ২ ব্লকের বোরো-ধবনি রাস্তায় ও বোরো-দিঘি রাস্তায় এবং বোরো-তালপাত রাস্তায় টটকো নদীর জয়পুর ঘাটের কজওয়ে জলের তলায় থাকায় এ দিন দুপুর পর্যন্ত ওই রাস্তাগুলিতে যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে। হুড়া ব্লকের লালপুর-কেশরগড় রাস্তায় পাতলই নদীর উপর একটি কজওয়ে জলের তলায় থাকায় এ দিন দুপুর পর্যন্ত এই রাস্তায় যাতায়াত বন্ধ ছিল। স্থানীয় কালীপুর গ্রামের বাসিন্দা ধীরেন মাঝির কথায়, ‘‘নদী পার হয়ে আমাকে বাড়ি যেতে হবে। সকাল থেকে দাঁড়িয়ে রয়েছি। জল কমার কোনও লক্ষণই নেই।’’

রঘুনাথপুর ২ ব্লকের নীলডি গ্রাম পঞ্চায়েতের উতলা জোড়ের উপরে নির্মিত একটি চেকড্যামের গার্ডওয়াল ভেঙে পড়েছে। ফলে এই চেকড্যামের কাছাকাছি থাকা একটি সেতু জলের তলায় চলে যায়। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বাবলু মণ্ডল জানান, বিকেলের দিকে জল নামলে দেখা গিয়েছে সেতুর একটা অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়কে রঘুনাথপুর পুরশহরের অদূরে বুন্দলা জোড়ের উপরে থাকা সেতুর গার্ডওয়ালের একাংশ ভেঙে পড়েছে। পুরুলিয়া শহরেরও দু’-একটি ওয়ার্ডে জল জমে রয়েছে।

লাগাতার বৃষ্টিতে গন্ধেশ্বরী ও দ্বারকেশ্বর নদের জলস্তর ফের বাড়তে শুরু করেছে। সম্প্রতি টানা বৃষ্টিতে প্রবল বন্যা হয় গন্ধেশ্বরী নদীতে। ক্ষতিগ্রস্ত হন গন্ধেশ্বরীর পাড়ে বসবাসকারী কেশিয়াকোল এলাকার বহু মানুষ। বহু ঘরবাড়ি নদীর জলে ভেসে যায়। তাঁদের পরিবার পিছু তখন একটি করে ত্রিপল দেওয়া হয়। যদিও প্রশাসনের দেওয়া ত্রাণ যথেষ্ট নয় বলেই এ দিন নতুন করে দাবি করেছেন ক্ষতিগ্রস্তেরা। ওই এলাকায় এ দিন গিয়ে দেখা গেল সর্বস্ব হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় বারোটি পরিবার প্রশাসনের দেওয়া একটি ত্রিপলের নীচে কোনও মতে মাথা গুঁজে দিন কাটাচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে বুলবুলি মালাকার, পূজা বাগদি, পুর্ণিমা মালাকারের ক্ষোভ, “একটি ত্রিপলে কি আর সবার মাথা ঢাকা পড়ে? বাচ্চাদের নিয়ে কোনও ভাবে রয়েছি। ভিজে মাটিতেই শুতে হচ্ছে। এলাকায় সাপের উপদ্রবও রয়েছে। প্রশাসন ঘর না করে দিলে থাকব কী ভাবে?’’ প্রশাসন জানাচ্ছে, তাঁদের ধর তৈরি করে দেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তবে এখনও পর্যন্ত বাঁকুড়া সদর মহকুমার কোনও এলাকায় জল জমার খবর নেই বলেই প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। এই নিম্নচাপের বৃষ্টি কৃষির ক্ষেত্রে অবশ্য বেশ উপযোগী হয়েছে বলেই জানাচ্ছেন জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা আশিসকুমার বেরা। তিনি বলেন, “এই বৃষ্টি কৃষির ক্ষেত্রে খুবই উপযোগী ভূমিকা নিল। গত তিনদিন ধরে নিম্নচাপের জেরে মাটিতে অনেকটাই রস সঞ্চয় হয়েছে।” যদিও কিছু এলাকায় সব্জি ও শাক ডুবে রয়েছে বলে চাষিদের আক্ষেপ করতে শোনা গিয়েছে।

রেলসূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাতের প্রবল বৃষ্টিতে রূপসী বাংলা এ দিন চার ঘণ্টা বিলম্বে সাঁতরাগাছি থেকে পুরুলিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। চক্রধরপুর-বোকারো-হাওড়া ফাস্ট প্যাসেঞ্জার এ দিন চার ঘণ্টা দেরিতে হাওড়া পৌঁছেছে। আদ্রা-হাওড়া শিরোমণি প্যাসেঞ্জার ও পুরুলিয়া-হাওড়া পুরুলিয়া এক্সপ্রেস এই দু’টি ট্রেনের যাত্রাপথ সঙ্কুটিত করা হয়। ট্রেন দু’টি এ দিন হাওড়ার বদলে সাঁতরাগাছি স্টেশন পর্যন্ত চলেছে।

rainfall
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy