Advertisement
E-Paper

হুল দিবসে পরিচ্ছন্নতার শপথ

হুল দিবসে শহিদ সিধো-কানহোকে ফুলে, মালায় শ্রদ্ধা জানালো দুই জেলা। কিন্তু সেই চেনা গথে না হেঁটে অভিনব পথ বেছে নিলেন বান্দোয়ানের যমুনাগোড়ার বাসিন্দারা।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৬ ০২:২৮
বলরামপুরের ঘাটবেড়া-কেরোয়ায় আদিবাসী নাচে পা মেলালেন মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু।  ছবি: সুজিত মাহাতো

বলরামপুরের ঘাটবেড়া-কেরোয়ায় আদিবাসী নাচে পা মেলালেন মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু। ছবি: সুজিত মাহাতো

হুল দিবসে শহিদ সিধো-কানহোকে ফুলে, মালায় শ্রদ্ধা জানালো দুই জেলা। কিন্তু সেই চেনা গথে না হেঁটে অভিনব পথ বেছে নিলেন বান্দোয়ানের যমুনাগোড়ার বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার ১১১টি আদিবাসী পরিবার সার দিয়ে দাঁড়িয়ে শপথ নিল— রাস্তাঘাট থাকবে সাফ সুতরো, ময়লা ফেলা হবে নির্দিষ্ট জায়গায়, শৌচালয় ব্যবহার করবেন সবাই। শপথ পাঠ করালেন বিডিও (বান্দোয়ান) অমলেন্দু সমাদ্দার। অমলেন্দুবাবু জানান, ওই পরিবারগুলিকে নির্মল বাংলা প্রকল্পে ইতিমধ্যেই শৌচালয় গড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্রামের বাসিন্দা অজয় মুর্মু, শেফালি মুর্মুরা বলেন, ‘‘এই দিনটা আমাদের কাছে খুবই পবিত্র। তাই আজই আমরা পরিচ্ছন্নতার শপথ নিলাম।’’

দুই জেলাতেই হুল দিবসে সরকারি উদ্যোগে অনুষ্ঠান হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে বলরামপুরের ঘাটবেড়া-কেরোয়া বিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠে সিধো-কানহোর মূর্তি উন্মোচন করেন রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী সন্ধ্যারাণি টুডু। তিনি সাঁওতালি ভাষায় হুল দিবসের গুরুত্বের কথা তাঁর বক্তৃতায় তুলে ধরেন। পা মেলান আদিবাসীদের সমবেত নাচেও। অনুষ্ঠানে জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো বলেন, ‘‘শোষণ থাকলে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন হবেই। সিধো-কানহো সেই আন্দোলনেরই প্রতীক।’’ উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) অরিন্দম দত্ত। সিধো-কানহোর জীবন বিষয়ক একটি প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়েছিল।

বাঘমুণ্ডির বাঁশিটাঁড়ে সিধো-কানহোর স্মরণে দিনভর ফুটবল প্রতিযোগিতা, ছৌনাচ-সহ নানা অনুষ্ঠান হয়। সিধো-কানহোর মূর্তিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বাঘমুণ্ডির বিধায়ক নেপাল মাহাতো, স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অবনীভূষণ সিংহবাবু প্রমুখ। নেপালবাবু বলেন, ‘‘১৮৫৫ সালের এই দিনে আদাবাসীদের অধিকার রক্ষার দাবিতে ইংরেজ শাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। নেতৃত্বে ছিলেন সিধো-কানহো। আমরা এই দুই বীর শহিদের স্মরণে একটি সংগ্রহশালা গড়ে তোলার কথা ভাবছি।’’

পুরুলিয়া সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগেও দিনটি মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার নচিকেতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাঁওতালি কবি কলেন্দ্রনাথ মান্ডি ও মহাদেব হাঁসদা। কাশীপুর-বাঁকুড়া রাস্তার মাজরামুড়া মোড়েও সিধো-কানহোর মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেন স্থানীয় বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়া।

অনুষ্ঠান হয়েছে কাশীপুরের বাঁশরায়া গ্রামে। আড়শা ব্লকের কুমিরডিহা ডুংরিডি মোড়ে তৃণমূলের আদিবাসী সেলের উদ্যোগে হুলদিবস পালিত হয়েছে। সরকারি উদ্যোগে ব্লক স্তরে হুল দিবস পালনের পাশাপাশি মানবাজার, বোরো, বান্দোয়ান, পুঞ্চা, বরাবাজারে বিভিন্ন ক্লাব ও সংস্থা হুল দিবস পালন করে। মানবাজারে অক্ষয়পুর মাঠে সিধো-কানহো হুল উদযাপন কমিটির উদ্যোগে স্বাস্থ্যশিবির হয়।

বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন এলাকাতেও পালিত হয়েছে হুল দিবস। এ দিন বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজের মাঠে সরকারি উদ্যোগে একটি অনুষ্ঠান হয়। প্রদীপ জ্বালিয়ে এবং ধামসা বাজিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন তালড্যাংরার বিধায়ক সমীর চক্রবর্তী এবং বাঁকুড়া জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী। উপস্থিত ছিলেন বাঁকুড়ার জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু, অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি) পার্থ ঘোষ এবং জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষেরা। অনুষ্ঠানের আগে তামলিবাঁধ থেকে কলেজ পর্যন্ত ধামসা মাদল নিয়ে অগুনতি আদিবাসী পুরুষ ও মহিলা শোভাযাত্রা করেন।

খাতড়া পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে এ দিন সকালে দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। পুরুষ বিভাগে সুপুর থেকে এসডিও মোড় পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার এবং মহিলা বিভাগে খাতড়া আদিবাসী কলেজ থেকে এসডিও মোড় পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার দৌড়ের প্রতিযোগিতা হয়। পুরুষ বিভাগে প্রথম হয়েছেন সিমলাপালের জোড়ষ্যার কিঙ্কর দুলে। দ্বিতীয় হয়েছেন বারিকুলের মণ্ডলডিহার বালিরাম মুর্মু এবং তালড্যাংরার সঞ্জীব সোরেন তৃতীয় হয়েছেন। মহিলাদের বিভাগে প্রথম হয়েছেন খাতড়ার বারোঘুটু গ্রামের মিনতি মান্ডি। খাতড়ার শালুনির শ্রীমতী হাঁসদা দ্বিতীয় এবং আরামবাগের টুম্পা মণ্ডল তৃতীয় হয়েছেন।

এ দিন সকালে খাতড়ার গুরুসদয় মঞ্চেও হুল দিবসের একটি অনুষ্ঠান হয়। উপস্থিত ছিলেন খাতড়ার মহকুমাশাসক অভিষেক তিওয়ারি। পাশাপাশি সারেঙ্গার মিশন ময়দান, হিড়বাঁধের ভুয়াকানা, রাইপুরের সোনাগাড়া, রানিবাঁধের বিরসা বাজারেও হুল দিবসের অনুষ্ঠান হয়েছে। সিমলাপাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির সম্পাদক অনুপ পাত্র জানান, হুলদিবস উপলক্ষে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে জাহের থানে শতাধিক গাছের চারা লাগানো হয়েছে।

Hool day cleaning
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy