Advertisement
E-Paper

ডেঙ্গির আতুঁড় হাসপাতালই

জাতীয় সড়কের ধারে হাসপাতালের প্রধান দুটি গেট। হাসপাতাল যাওয়ার পথে সড়কের ধারে ১০০ মিটার জুড়ে অস্থায়ী দোকান। নিকাশি নালার উপরেই দোকানগুলির অবস্থান।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৩৯
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

যেখানে রোগ নিরাময় হওয়ার কথা, সেই হাসপাতালই অস্বাস্থ্যকর। পৃথক স্বাস্থ্যজেলার রামপুরহাট জেলা হাসপাতাল নিয়ে এমনই অভিজ্ঞতা এলাকাবাসীর। জেলার এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা চারশো ছুঁইছুঁই। তাঁদের অনেকের চিকিৎসা চলছে যে হাসপাতালে, তার ছবিটা কেমন?

জাতীয় সড়কের ধারে হাসপাতালের প্রধান দুটি গেট। হাসপাতাল যাওয়ার পথে সড়কের ধারে ১০০ মিটার জুড়ে অস্থায়ী দোকান। নিকাশি নালার উপরেই দোকানগুলির অবস্থান। উনুনের ছাই, এঁটো শালপাতা, প্লাস্টিক প্যাকেট জমে নিকাশি নালাতে জল যাওয়ার পথ বন্ধ। হাসপাতালের নিকাশি নালা জাতীয় সড়কের এই নালার সঙ্গেই জুড়ে রয়েছে। রামপুরহাট জেলা হাসপাতালের সুপার সুবোধকুমার মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘হাসপাতালের জল বেরোবার পথটাই তো অবরুদ্ধ। তা হলে হাসপাতালের নিকাশি নালাতে জল জমবে না তো কি হবে!’’ সেই জমা জলেই মশাদের যে জন্ম-বৃদ্ধি হচ্ছে সেটাও স্বীকার করেন সুপার। তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালের নিকাশি নালার সঙ্গে যুক্ত জাতীয় সড়কের ধারে নিকাশি নালা জল যাওয়ার ব্যবস্থা করতে রোগী কল্যাণ সমিতির মিটিংয়ে আলোচনা করেছি।’’

হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেল প্রথম গেটের ধারে বড় আকারে নালা কাটা হয়েছে। দু’দিন আগের নিম্নচাপের বৃষ্টিতে সেই নালায় জমে থাকা জলে মশা ডিম পাড়ছে। কাটা নালার জল পেরিয়ে রোগী এবং রোগীর আত্মীয় পরিজনদের হাসপাতালে ঢুকতে হচ্ছে। গেট ছাড়িয়ে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট ঢোকার আগে যেখানে নিকাশি নালা কাটা, সেখানেও মশা থিক থিক করছে। ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট ঢোকার আগে সুলভ শৌচালয়ের সামনে, পিছনে মূল ভবন ঘিরে ঝোপ জঙ্গলের আগাছাতে ভর্তি।

ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের সামনে ইনফেকসন ওয়ার্ডের সামনে রামপুরহাট পুরসভা থেকে হাসপাতালের সৌন্দর্যায়নের কাজ করা হচ্ছে। রোগীর পরিবারের অভিযোগ, চার মাস আগে সেই কাজের জন্য গর্ত খোঁড়া হয়। সেই গর্তের জমা জলে দেখা গেল মশার লার্ভা। পুরসভার কাজের ব্যাপারে সুপারের অভিযোগ, ধীরে কাজ চলছে। পুরসভাকে এ ব্যাপারে জানানো হয়েছে। ইনফেকশন ওয়ার্ড ও ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডের মাঝামাঝি রোগীর আত্মীয় পরিজনদের জন্য বসার জায়গা। অভিযোগ, ওই জায়গায় কোনও আলো বা পাখার ব্যবস্থা নেই। রাতের বেলায় মশার কামড় খেয়ে রোগীর পরিবার-পরিজনকে রাত কাটাতে হয়।

জরুরি বিভাগ পেরিয়ে নতুন ভবন সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল যাওয়ার রাস্তা। সেখানেও অবরুদ্ধ নিকাশি নালা। জমা জলে থিক থিক করছে মশা।

হাসপাতাল পরিস্কারের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারদের দাবি, মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণের কাজ চলছে। নির্মাণকারী সংস্থাকে একাধিকবার হাসপাতালের মূল ভবনের জল নিকাশির জন্য বলা হলেও কোনও কাজ হয়নি। এখনও পর্যন্ত বৃষ্টি হলেই দেড়শো কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে নির্মিত সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল ঢুকতে জমা জলের সুরাহা হয়নি। জমা জল ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে ও পিছনেও। সেখানেও ঝোপ জঙ্গলে আগাছাতে ভর্তি। একই ছবি মর্গে যাওয়ার রাস্তার দু’ধারেও। জঙ্গলে ছেয়ে আছে এলাকা।

এ সবের মাঝেই চলতি বছরের জুলাই মাসের ৭ তারিখ থেকে রামপুরহাট জেলা হাসপাতালে ‘ম্যাক অ্যালাইজা টেস্ট’-এর ব্যবস্থা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত রামপুরহাট হাসপাতালে ভর্তি থাকা এবং মহকুমার বিভিন্ন ব্লক থেকে আসা রোগীদের নিয়ে মোট ১৭৭ জনের এই টেস্ট করা হয়েছে। তার মধ্যে ৬৭ জনের রক্তে পজিটিভ পাওয়া যায়। এবং বুধবার হাসপাতালের পুরুষ বিভাগ, মহিলা বিভাগ, শিশু বিভাগ ঘুরে দেখা গেল গত রাত পর্যন্ত ৭০ জন জ্বরের রোগী ভর্তি রয়েছেন।

কী বলছেন সুপার? তিনি বলেন, ‘‘১০০ দিনের কাজে নিকাশি নালা ও ঝোপ জঙ্গল পরিস্কারের জন্য পঞ্চায়েতের মাধ্যমে কাজ করার জন্য ব্লক অফিসে চিঠি করা হয়েছে।’’

রামপুরহাট ১ ব্লকের বিডিও নীতিশ বালা বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতে ২০০০ লেবারকে দিয়ে কাজ করানোর কথা। কতটা কী হয়েছে খোঁজ নেব।’’

Dengue
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy