Advertisement
১৯ মে ২০২৪
এসপি’র দ্বারস্থ সিপিএম

বাঁকুড়া-সোনামুখী দাপাচ্ছে বাইকবাহিনী

পঞ্চায়েত ও লোকসভা দু’টি ভোটেই বুথে ঝামেলা দেখেছে বাঁকুড়া। পঞ্চায়েত ভোটে শালতোড়ার গোঁসাইডিহির একটি বুথে বুথ দখল এবং লোকসভায় সোনামুখীর সাহাপুর বুথে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ উঠেছিল শাসকদলের বিরুদ্ধে। দু’টি বুথেই প্রশাসনকে পুনর্নিবাচন করতে হয়। এ বার পুরভোটেও কি একই ঘটনার পুনারাবৃত্তি ঘটবে? তেমনই আশঙ্কায় বিরোধীরা। তাই শান্তিপূর্ণ ভোটের দাবিতে মঙ্গলবার বাঁকুড়া জেলা পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দিল বাঁকুড়া জেলা সিপিএম।

অভিযোগ জানিয়ে বেরিয়ে আসছেন অমিয় পাত্র-সহ অন্য সিপিএম নেতারা। — নিজস্ব চিত্র।

অভিযোগ জানিয়ে বেরিয়ে আসছেন অমিয় পাত্র-সহ অন্য সিপিএম নেতারা। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৫৪
Share: Save:

পঞ্চায়েত ও লোকসভা দু’টি ভোটেই বুথে ঝামেলা দেখেছে বাঁকুড়া। পঞ্চায়েত ভোটে শালতোড়ার গোঁসাইডিহির একটি বুথে বুথ দখল এবং লোকসভায় সোনামুখীর সাহাপুর বুথে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ উঠেছিল শাসকদলের বিরুদ্ধে। দু’টি বুথেই প্রশাসনকে পুনর্নিবাচন করতে হয়। এ বার পুরভোটেও কি একই ঘটনার পুনারাবৃত্তি ঘটবে? তেমনই আশঙ্কায় বিরোধীরা। তাই শান্তিপূর্ণ ভোটের দাবিতে মঙ্গলবার বাঁকুড়া জেলা পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দিল বাঁকুড়া জেলা সিপিএম।

এ দিন দুপুরে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য অমিয় পাত্র, সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য শেখর ভট্টাচার্য ও জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় জেলা পুলিশ সুপারের দফতরে যান। সেখান থেকে বেরিয়ে অমিয়বাবু অভিযোগ করেন, “সোনামুখী, বিষ্ণুপুর ও বাঁকুড়া তিনটি পুরসভাতেই ভোটের দিন সন্ত্রাস চালানোর প্রস্তুতি নিয়েছে তৃণমূল। বহিরাগতদের পুরএলাকায় নিয়ে এসে ইতিমধ্যেই বিরোধী দলের প্রার্থী ও কর্মীদের হুমকি, শাসানি দেওয়া হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসন যাতে শান্তিপূর্ণ ভোট করতে পদক্ষেপ করে তাই লিখিত ও মৌখিক ভাবে আমরা পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন জানিয়েছি। অমিয়বাবুর আশঙ্কা, বাঁকুড়া পুরসভার ৭, ১৫, ১১ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বুথগুলিতে ঝামেলা বাঁধতে পারে। পাশাপাশি সোনামুখীর ৩, ১৩, ৫, ৭ ও ৯ নম্বর বুথেও বহিরাগতদের নিয়ে এসে বুথ জ্যাম করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে তাঁর দাবি। অন্যদিকে বিষ্ণুপুরে সিপিএমের সংগঠন যে তেমন মজবুত নয়, তা মেনে নিয়েও পুরএলাকার ১৯টি ওয়ার্ডেই বিশেষ নজরদারির দাবি জানিয়েছে সিপিএম।

অমিয়বাবু জানান, সোনামুখী ও বাঁকুড়ায় তৃণমূলের বাইক বাহিনী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এলাকায়। বিরোধী দলের কর্মীদের প্রচারে যেতে তারা নিষেধ করছে। প্রকাশ্যেই ভোট লুঠ করার ভয়ও দেখানো হচ্ছে। তাঁর অভিযোগ, “তৃণমূল এমন কিছু লোকজনকে সোনামুখীতে নিয়ে এসে প্রচার চালাচ্ছে পুলিশের খাতায় যাঁরা দাগি আসামী। পুরএলাকার বাসিন্দাও নয়। মানুষকে ভয় দেখিয়ে ভোট করতে চাইছে তৃণমূল।” শাসকদলের তরফে অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ বলেন, “কোথাও সন্ত্রাসের পরিবেশই নেই। দীর্ঘ বাম আমলে মানুষ ভোট দিতে পারতেন না। এখন মানুষ খোলা মনে ভোট দিতে পারছেন। পঞ্চায়েত ও লোকসভার পরে এ বার পুরভোটেও জেলা থেকে মুঝে যাবে লাল পার্টি। আগাম তা বুঝেই নানা মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন ওঁরা।”

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই সোনামুখী ও বাঁকুড়া পুরএলাকায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাতটি রাজনৈতিক সন্ত্রাসের অভিযোগ জমা পড়েছে জেলা শাসকের দফতরে। এ ছাড়াও নির্বাচনী বিধিভঙ্গের একাধিক অভিযোগ জমেছে বাঁকুড়া সদর ও বিষ্ণুপুর মহকুমা শাসকের দফতরেও। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারি বলেন, “বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তরফে জেলা শাসকের কাছে আসা অভিযোগগুলির তদন্ত রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনে।” সোনামুখী পুরএলাকাতে ভোটকে কেন্দ্র করে এলাকায় বহিরাগতরা ঢুকছে বলে খোদ নির্বাচন কমিশনে আগেই অভিযোগ জানিয়েছে বামেরা। কমিশনের তরফে সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছিল। জেলা থেকে তদন্ত রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে কমিশনে। বস্তুত সোনামুখী এ বার বাম ও শাসকদল দু’পক্ষই পাখির চোখ হিসেবে দেখছে। কারণ একমাত্র এই শহরের ক্ষমতাই বামফ্রন্ট ধরে রেখেছিল। তাই তা এ বারও ধরে রাখতে তারা মরিয়া। অন্যদিকে, শাসকদলও ওই পুরসভা দখলে আনতে মরিয়া। ফলে ওই এলাকায় গণ্ডগোলের আশঙ্কা করছে প্রশাসনও।

তিনটি পুরসভাতেই প্রাথমিক ভাবে স্পর্শকাতর ও অতিস্পর্শকাতর কিছু বুথ চিহ্নিতও করে ফেলেছে জেলা প্রশাসন। তবে চূড়ান্ত আলোচনা এখনও হয়নি। সব মিলিয়ে শেষ লগ্নে এসে পুরভোটের উত্তেজনা বেশ খানিকটা বেড়ে গিয়েছে জেলায়। জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার সিপিএমের অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, “বাইক বাহিনী এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে আমার কাছে অভিযোগ জানিয়েছে সিপিএম। সংশ্লিষ্ট থানাগুলিকে আমি ব্যবস্থা নিতে বলছি। পাশাপাশি এই ধরনের ঘটনা দেখলে রাজনৈতিক দলগুলিও যাতে সরাসরি থানায় জানায় সে কথা বলেছি।” তাঁর আরও সংযোজন, “ভোটের তিনদিন আগে থেকে বাইরের কোনও রাজনৈতিক কর্মী পুরএলাকায় থাকতে পারবেন না বলে সব রাজনৈতিক দলগুলিকেই আমরা জানিয়ে দিয়েছি। পুলিশও বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালাবে। সমস্ত রকম ঝামেলা রুখতে আমরা তৎপর।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE