E-Paper

আবার কি ফিরবে হুমকি-প্রথা, চিন্তা

নিহত চিকিৎসকের বিচার চেয়ে আন্দোলন চলাকালীনই সামনে আসে, নানা হাসপাতালে এক ‘হুমকি প্রথা’ চলত।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় 

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৫:১৬
রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ।

রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ। —ফাইল চিত্র।

আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসক পড়ুয়ার ধর্ষণ-খুনের প্রতিবাদে আন্দোলনে উত্তাল হয়েছিল রাজ্য। জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতি, লাগাতার বিক্ষোভ আন্দোলনের জেরে সামনে আসে নানা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চলতে থাকা ‘হুমকি প্রথা’র অভিযোগ। কিন্তু সেই আর জি কর মামলায় সেই হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের জামিন এবং সন্দীপ ঘনিষ্ঠ চিকিৎসক অভীক দে-র রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলে ফিরে আসায় ফের ‘হুমকি প্রথা’ ফিরবে বলে আশঙ্কা করছেন জুনিয়র চিকিৎসকদের অনেকে।

নিহত চিকিৎসকের বিচার চেয়ে আন্দোলন চলাকালীনই সামনে আসে, নানা হাসপাতালে এক ‘হুমকি প্রথা’ চলত। আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ঘনিষ্ঠ একাধিক চিকিৎসক সেই চক্রের ‘মাথা’ ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। ‘উত্তরবঙ্গ লবি’ নামে পরিচিত সেই চক্রের মাধ্যমে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়া, বদলি করিয়ে দেওয়ার মতো হুমকি দিয়ে জুনিয়র চিকিৎসকদের ‘নিয়ন্ত্রণে’ রাখা হত বলে অভিযোগ ওঠে। এই হুমকি প্রথা নির্মূল করার দাবিও উঠেছিল আর জি কর আন্দোলনে।

আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের অনেকে জানাচ্ছেন, তাঁদের আন্দোলনে নাগরিক সমাজ যোগ দেওয়ায় এবং বিচারের দাবিতে জোরদার আন্দোলন হওয়ায় রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজেই ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র অন্তর্গত হুমকি চক্রের পাণ্ডারা চাপে পড়ে গিয়েছিল। রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজও ব্যতিক্রম নয়। রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তার থেকে পড়ুয়ারা শহরের রাজপথে হেঁটেছেন। হাসপাতালের উন্নত পরিকাঠামোর দাবিতে এবং হুমকি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। দীর্ঘদিন হাসপাতালে অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচি চলেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় সেই হুমকি-সংস্কৃতি আবার ফিরে আসবে কি না তা নিয়ে আশঙ্কা দানা বাঁধছে।

সম্প্রতি সন্দীপ ঘোষের জামিনের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আবার, দিন কয়েক আগে উচ্চ আদালতের নির্দেশে হুমকি দেওয়ায় অভিযুক্ত রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের চার পড়ুয়ার সাসপেনশন তুলে নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গেই রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলে ফিরে এসেছেন, সন্দীপ ঘনিষ্ঠ ‘প্রভাবশালী’ চিকিৎসক অভীক দে। এই সমস্ত কিছুর জেরেই আবার কলেজে হুমকি সংস্কৃতি ফিরে আসতে পারে বলে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তাররা আশঙ্কা করছেন। তা যে আগের থেকে যে বড় আকারে ফিরতে পারেও বলে তাঁদের অনেকের আশঙ্কা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জুনিয়র ডাক্তারের দাবি, হুমকি সংস্কৃতির সঙ্গে যারা যুক্ত ছিল তারা আন্দোলনের জেরে কোণঠাসা ছিল। এ বার তারা অভীক দে-কে মেডিক্যাল কাউন্সিলে নিয়ে আসার কথা বলে পড়ুয়াদের নিজেদের অনুগত করার চেষ্টা শুরু করেছে বলে জুনিয়র ডাক্তারদের অনেকের দাবি। এক জুনিয়র ডাক্তার বললেন, ‘‘আমাদের অনুগামী না হলে পরীক্ষায় পাশ করতে পারবি তো, এমন বলে হুমকিও দিতে শুরু করেছে ওরা।’’ তাদের অনুগত পড়ুয়াদের সুবিধে পাইয়ে দেওয়ার কথাও বলা হচ্ছে বলে জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশের অভিযোগ।

আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের অনেকের দাবি, এর আগে কলেজের অধ্যক্ষ-সহ কলেজের কিছু পড়ুয়া এবং প্রাক্তন ডিন-এর নামে গ্রিভ্যান্স কাউন্সিলে অভিযোগ করা হলেও তার কোনও সুরাহা হয়নি। সেই কারণে নতুন করে আর কোথাও অভিযোগ জানাতেও ভয় পাচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের ডিন পার্থ ভট্টাচার্য এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

এই ‘হুমকি সংস্কৃতি’ জেরে কলেজের বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসক থেকে কর্মীরাও আতঙ্কিত বলে জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশের দাবি। এর আগে আর জি কর কাণ্ডের জেরে আন্দোলনের সময় জুনিয়র ডাক্তাররা কলেজের ডিনের বিরুদ্ধে এবং চার জন ছাত্রের বিরুদ্ধে হুমকি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন। তার জেরে ডিন-এর পরিবর্তন ঘটে। অভিযুক্ত চার ছাত্রের বিরুদ্ধে পদক্ষেপও করেছিলেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আবার সেই ‘হুমকি সংস্কৃতি’ ফিরে আসবে কি না সেটাই তাঁদের আতঙ্কিত করছে বলে দাবি করছেন জুনিয়র ডাক্তারদের অনেকে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Rampurhat Medical college

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy