কন্যাশ্রী দিবসের অনুষ্ঠান বিষ্ণুপুরে।
কন্যাশ্রী দিবসে ১৮ বছরের আগে বিয়ে না করার শপথ নিল বিষ্ণুপুর শহরের বেশ কয়েকটি হাইস্কুলের ছাত্রীরা। শুক্রবার বিষ্ণুপুর মহকুমা প্রশাসন এবং বিষ্ণুপুর পুরসভার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই সভায় ছাত্রীদের ওই শপথ বাক্য পাঠ করান শহরের শিবদাস সেন্ট্রাল গার্লস হাইস্কুলের শিক্ষিকা মিঠু কাইতি।
এ ছাড়াও কন্যাশ্রীর প্রচারে ছিল নাচ, গান ও পুরস্কার বিতরণ। বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক পলাশ সেনগুপ্ত তাঁর বক্তৃতায় বলেন, “প্রকল্পটিতে ১৩ থেকে ১৮ বছরের ছাত্রীদের বছরে ৫০০ টাকা এবং ১৮ থেকে ১৯ বছর বয়সী একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের এককালীন ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে। ফলে আর্থিক অভাবে স্কুলছুটের প্রবণতা যেমন কমেছে। তেমনই সাবালিকা হওয়ার আগেই মেয়েদের বিয়ে দেওয়া কিছুটা আটকানো গিয়েছে।’’ এ দিন বিষ্ণুপুর ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগেও বাঁকাদহ উচ্চ বিদ্যালয়ে হয়েছে একটি অনুষ্ঠান। সেখানে কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুফল ও কুসংস্কার দূরীকরণ নিয়ে আলোচনা হয়। বিষ্ণুপুরের বিডিও প্রশান্তকুমার মাহাতো, ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মধুসূদন মণ্ডল, বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সদস্য মথুর কাপড়ি প্রমুখ অংশ নেন সেই আলোচনায়।
এ দিনই জেলার বিভিন্ন ক্ষেত্রের কৃতী ও সাহসিনীদের পুরস্কৃত করল পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। শুক্রবার পুরুলিয়া তথ্য সংস্কৃতি দফতর প্রাঙ্গণে জেলা কন্যাশ্রী মেলায় বিভিন্ন ক্ষেত্রের এ রকম কৃতী ৭৩ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) সবুজবরণ সরকার জানান, পুরুলিয়া কন্যাশ্রী প্রকল্পে লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে গিয়েছে। কে-১ (অষ্টম শ্রেণীতে পাঠরত অর্থাৎ ১৩-১৮ বছর বয়সী) প্রকল্পে জেলার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৫ হাজার। এই প্রকল্পের আওতায় ৫৯ হাজার ১৩৩ জন ছাত্রীকে আনা গিয়েছে। কে-২ (১৮ বছরের ঊর্ধ্বে) প্রকল্পে ৭ হাজার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ৮,১৯৫ জন ছাত্রীকে এর আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।
উল্লেখ্য, যে সমস্ত পরিবারের বাৎসরিক আয় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা, সেই পরিবারগুলির মেয়েরা পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুবিধা পায়। অতিরিক্ত জেলাশাসক জানান, কে-১ প্রকল্পে জেলার ছাত্রীদের ২৯ কোটি ৪২ লক্ষ টাকা এবং কে-২ প্রকল্পে ১৬ কোটি টাকা সাহায্য দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, এই প্রকল্পে পুরুলিয়ার ভূমিকা রাজ্যে প্রশংসিতও হয়েছে। সে কারণে পুরুলিয়া জেলা এ বার রাজ্যে বিশেষ পুরস্কারও পাচ্ছে।
এ দিনের অনুষ্ঠানে জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘একটা সাফল্যই শেষ কথা নয়। আমাদের লক্ষ্য, এক জন ছাত্রীও যেন এই প্রকল্পের বাইরে না থাকে।’’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছাত্রীদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ‘‘মন দিয়ে পড়াশোনা করাটাই আসল। তোমরাও পারবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে। লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি কখনও হতাশ হবে না।’’ পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘একটা সময় ছিল, যখন মেয়েরা অবহেলিত ছিল। আমরা আর সেই দিন দেখতে চাই না। তাই মুখ্যমন্ত্রী মেয়েদের এগিয়ে আসতে এই প্রকল্পের কথা ভেবেছেন। আজ আর পুরুলিয়াও পিছিয়ে পড়া নয়। এই জেলার মেয়েরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে আসছে। এই প্রকল্পের সাফল্য মিলছে।’’
এ দিনের অনুষ্ঠানে চিনের ইওহন প্রদেশে অনুষ্ঠিত বিশ্ব স্কুল ক্রীড়ায় লং জাম্পে সোনা জয়ী পুরুলিয়ার নেয়ে সোমা কর্মকারকে সংবর্ধনা জানানো হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রের সাহসিনী, যেমন ভিন্ রাজ্যে পাচার হওয়ার পরেও ফের স্কুল জীবনে ফিরে লেখাপড়া চালানো, শ্লীলতাহানি রুখতে কুয়োয় ঝাঁপ দিয়ে নিজেকে বাঁচানো, এ রকম কয়েক জনকে, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, আলিম, ফাজিল, সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু কৃতী কন্যাকে এবং আনন্দমঠ হোমের পাঁচ তরুণীকে (যাঁরা জিএনএম নার্সিং পাঠ্যক্রমে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন) পুরস্কৃত করা হয়। অনুষ্ঠানে পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠের অধ্যক্ষ স্বামী জ্ঞানলোকানন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এ দিন বরাবাজার ব্লকে কন্যাশ্রী দিবস অনুষ্ঠানে জেলা সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো, জেলার পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলা পরিষদ সদস্য স্থানীয় বাসিন্দা সুমিতা সিংহমল্ল ছিলেন। অনুষ্ঠানে কয়েক হাজার স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী ছিল বলে জানান বরাবাজারের বিডিও অনিমেষকান্তি মান্না।
—নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy