Advertisement
E-Paper

সাপে-কাটা বাপি বলছেন, সর্পাঘাতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান

চাষ জমিতেই তাঁদের অনেকখানি সময় কাটে। আর জমির আলে বা ঝোপে লুকিয়ে থাকে সাক্ষাৎ মৃত্যুরূপী বিষধরেরা। সম্প্রতি এলাকার দু’জনের প্রাণও গিয়েছে বিষধরদের ছোবলে। এই ঘটনাই চোখ খুলে দিয়েছে এলাকার ষোলোআনা কমিটির।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৩৩
ওন্দায় শিবিরে ভিড় করেছেন এলাকার বাসিন্দারা। —নিজস্ব চিত্র।

ওন্দায় শিবিরে ভিড় করেছেন এলাকার বাসিন্দারা। —নিজস্ব চিত্র।

চাষ জমিতেই তাঁদের অনেকখানি সময় কাটে। আর জমির আলে বা ঝোপে লুকিয়ে থাকে সাক্ষাৎ মৃত্যুরূপী বিষধরেরা। সম্প্রতি এলাকার দু’জনের প্রাণও গিয়েছে বিষধরদের ছোবলে। এই ঘটনাই চোখ খুলে দিয়েছে এলাকার ষোলোআনা কমিটির। ‘সাপে কাটার প্রতিকার কী’ তা নিয়ে এলাকাবাসীকে সচেতন করতে উঠে পড়ে লেগেছে ওন্দার রামসাগরের লাপুড় দ্বাদশ তিলি ষোলআনা সমিতি।

মঙ্গলবার রামসাগরের আঞ্চলিক ক্রীড়া উন্নয়ন সংস্থার মাঠে ষোলোআনা সমিতির উদ্যোগে হয়ে গেল সাপে কাটার প্রতিকার সংক্রান্ত একটি সচেতনতা শিবির। ওই শিবিরে জেলা ও ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিক থেকে বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী মঞ্চের সদস্যেরা যেমন ছিলেন, তেমনই আবার মানুষকে সচেতন করতে অনুষ্ঠানে সামিল হয়েছিলেন সাপের ছোবল খেয়েও সঠিক সময়ে চিকিৎসা করিয়ে বেঁচে ফিরে আসা মানুষজনও। যাঁরা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকায় শিবিরে আসতে পারেননি, তাঁদের জন্য স্থানীয় কেব্‌ল টিভিতেও অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচারিত করার ব্যবস্থাও করেছিলেন উদ্যোক্তারা।

ষোলোআনা সমিতির সম্পাদক সুব্রত নন্দী জানান, এ বছর দুর্গাপুজোর সময় এলাকার বাসিন্দা বাবলু টুডু ও কৃষ্ণচন্দ্র মণ্ডল ধানজমিতে চাষের কাজ করতে গিয়ে সাপের ছোবল খায়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করতে না পারায় দু’জনেরই মৃত্যু হয়। এরপরেই ষোলোআনা ঠিক করে, আগামী দিনে সাপের কামড়ে এ ভাবে যাতে কেউ মারা না যায়, তে নিশ্চিত করতে কিছু করতে হবে। শিবির শেষে উদ্যোক্তাদের আশা, সাপ নিয়ে অনেক রকম তথ্য পাওয়া গিয়েছে। যা সবার কাজে লাগবে।

সম্প্রতি জমিতে কাজ যাওয়া লাপুড় এলাকার গীতা বাউরি ও লাপুড় সংলগ্ন পাটপুর এলাকার বাসিন্দা বাপি দে-কে সাপে ছোবল মারে। সর্পদংশনের পরে দু’জনকেই সময়ের মধ্যে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ায় তাঁরা রক্ষা পেয়েছেন। শিবিরে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসার অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন বাপিবাবু। তিনি বলেন, “সাপে ছোবল মারার পরেই ধান জমিতে উপস্থিত লোকজন ও এলাকাবাসীর তৎপরতায় মিনিট কুড়ির মধ্যে রামসাগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছতে পেরেছিলাম আমি। তাই বেঁচে গিয়েছি।” সাপে ছোবল মারলে তাই দ্রুত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার আবেদন জানিয়েছেন তিনি।

সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে একটি ছোট্ট নাটকও মঞ্চস্থ হয় এই শিবিরে। রামসাগরের বাসিন্দা রাজীব মানিকের লেখা ওই নাটকে দেখানো হচ্ছে, সাপে ছোবল মারার পরে এক ব্যক্তিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এক সাপুড়িয়ার কাছে। নানা কেরামতি দেখিয়েও ওই সাপুড়ে মানুষটিকে সুস্থ করতে না পেরে শেষ মুহূর্তে অসুস্থ ওই ব্যক্তিকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।

রাজীববাবু বলেন, “ওঝা বা সাপুড়ে নয়, সাপের বিষের কবল থেকে মানুষকে রক্ষা করতে পারে চিকিৎসকেরাই। তাই সময় নষ্ট না করে যাতে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়, সেই বার্তাই এই নাটকে রেখেছি।’’

ওন্দা ব্লক এলাকায় সর্পাঘাতে মৃত্যুর সংখ্যা নেহাত কম নয়। স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, চলতি বছরেই এই ব্লকের অন্তত ১০ জন মানুষ মারা গিয়েছেন সাপের ছোবলে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকতে পারলেও ষোলোআনা সমিতির এই উদ্যোগের প্রশংসা করে ওন্দার বিডিও শুভঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, “গ্রামবাসীকে সচেতন করতে ষোলোআনার এই উদ্যোগ সত্যিই ব্যতিক্রমী। বহু মানুষ উপকৃত হবেন।”

এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাঁকুড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতরের ডেপুটি সিএমওএইচ ২ দীপা মণ্ডল, ওন্দা ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবশিস দে প্রমুখ। ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির রাধানগর শাখার সম্পাদক সৌম্য সেনগুপ্ত শিবিরে বিষধর ও নির্বিষ সাপ চেনা ও সাপের ছোবল এড়াতে কী করা উচিত, সেই সর্ম্পকে আলোচনা করেন। সৌম্যবাবু জানান, সাপে ছোবল মারলে নড়াচড়া যতদুর পারা যায় বন্ধ করতে হবে এব দ্রুত রোগীকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।

এই উদ্যোগের প্রশংসা করে সৌম্যবাবু বলেন, “এই জেলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায় এখনও মানুষ সর্পাঘাতের পরে পরে ওঝা বা মনসার থানে নিয়ে যান। এই অন্ধ বিশ্বাস ভাঙতে লাপুড় ষোলোআনার মতো অন্যান্য ষোলোআনা ও ক্লাবগুলির এগিয়ে আসা উচিত।”

Snake bite Local medical centre
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy