আদিবাসী সমাজের ডাইনি প্রথার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগী হল প্রশাসন। বিশ্বভারতীর পল্লি সম্প্রসারণ কেন্দ্র ও জেলা পুলিশের যৌথ উদ্যোগে, আদিবাসীদের বিভিন্ন সংগঠনের পাশাপাশি মাঝি হাড়ামদের নিয়ে একটি আলোচনা সভা হচ্ছে শনিবার। শনিবার শ্রীনিকেতনের ফ্রেস্কোতে জেলা পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনায় বসবে বিশ্বভারতী।
বিশ্বভারতীর পল্লি সম্প্রসারণ কেন্দ্রের আওতায় থাকা ৫০টি গ্রামের মধ্যে বেশির ভাগ গ্রাম আদিবাসী, তপসিলি জাতি এবং সংখ্যালঘু অধ্যুষিত।
রবীন্দ্রনাথের শ্রীনিকেতন ভাবনায় পল্লি পুনর্গঠন অন্যতম একটি উদ্দেশ্য ছিল। যেখানে গ্রামের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষার আলো ছড়িয়ে সমাজ থেকে বাল্য বিবাহ, পন প্রথার মতো সামাজিক ব্যাধি এবং আদিবাসী সমাজের ডাইনি প্রথার মতো কুসংস্কার দূর করাও ছিল অন্যতম একটি উদ্যোগ। এমন উদ্য্যোগ সচরাচর চোখে না পড়লেও, গত বছর আশেপাশের বেশ কিছু এমন ঘটনার জেরে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন।
পল্লি সম্প্রসারণ কেন্দ্রের প্রধান অধ্যাপক সুজিত কুমার পাল বলেন, “এলাকায় কুসংস্কার এবং অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে জন সচেতনতা গড়ে তুলতে এমন আলোচনার আয়োজন। বরাবরই বিশ্বভারতী এমন উদ্যোগ নিয়ে থাকে। আদিবাসী মহল্লায় যাতে, এমন কুসংস্কার এবং সামাজিক ব্যাধির কেউ শিকার না হন তার জন্যই আয়োজন।” সুজিতবাবুর দাবি, শুধু আলোচনাই নয়, ওই প্রথা বন্ধের জন্য ব্যবস্থা এবং অভিযুক্তের বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নিয়ে চলবে জোর প্রচারও। থাকছে তাদের সমাজের বেশ কিছু স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আলোচনাও।
বোলপুর মহকুমা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই মহকুমার চার ব্লক বোলপুর, ইলামবাজার, লাভপুর ও নানুরের আদিবাসী সমাজের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, সাহিত্য ও সংস্কৃতি পত্রিকা গোষ্ঠী, মাঝিহাড়াম এবং জানগুরুদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। মহকুমা পুলিশের এক কর্তা জানান, ২০১৫ সালের সচেতনতা কর্মসূচীর পর, সেই অর্থে ডাইনি নিয়ে হেনস্থার বা মারধরের এমন কোনও অভিযোগ নেই। ফলে নিয়মিত ব্যবধানে এমন কর্মসূচি কার্যত প্রতিষেধকের কাজ করবে এবং কুসংস্কার দূর হবে, বলেই আমরা আশা রাখি।
এলাকার মাঝি হাড়ামেরা স্বাভাবিক ভাবে খুশি বিশ্বভারতী এবং পুলিশের এমন সচেতনতা কর্মসূচির আয়োজনে।
লক্ষ্মীরাম মারাণ্ডি, পিয়ারসন পল্লির বুড়ো বাস্কি, বালিপাড়ার সুনীল হাঁসদা, লালবাঁধের আলো মারাণ্ডি প্রমুখ মাঝি হারামরা জানান, ‘‘খুবই ভাল উদ্যোগ।’’