শীতের গোড়া থেকেই ইউরোপ, মোঙ্গোলিয়া, সুদূর সাইবেরিয়া থেকে পরিযায়ী পাখির দল হাজির হতো এখানে। আর পাখিদের ওড়াউড়ি দেখতে শান্তিনিকেতনের বল্লভপুরের তিনটি ঝিল ও লালবাঁধের পাড়ে ভিড় জমাতেন পর্যটক থেকে স্থানীয় বাসিন্দা, বিশ্বভারতীর পড়ুয়া— সকলেই। কিন্তু এ বার ডিসেম্বরের শেষেও তাদের তেমন দেখা নেই। পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, সংস্কারের অভাব ও দূষণের জেরেই এলাকার ঝিলগুলি থেকে মুখ ফিরিয়েছে ভিন্ দেশি পাখির দল।
প্রশাসনের সূত্রে জানা গিয়েছে, বন দফতরের বোলপুর রেঞ্জের মধ্যে রয়েছে বল্লভপুর অভয়ারণ্য। গত কয়েক দশক ধরে সেপ্টেম্বর থেকে ওই তিনটি ঝিলে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসে পরিযায়ী পাখির দল। কিন্তু পরিবেশপ্রেমীদের অভিযোগ, ঝিল সংস্কারে প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ না করায় এ বার ডিসেম্বরের শেষেও পরিযায়ী পাখিদের দেখা মিলছে না। সংস্কারের অভাবে ঝিলগুলির কোথাও জল নেই, কোথাও বা বেড়েছে কচুরিপানা।
মূলত কী কী ধরনের পাখি আসে? পরিবেশপ্রেমীদের দাবি, নর্দান পিনাটেল, গ্যাডওয়াল, নব ডাক-সহ বহু ধরনের পরিযায়ী পাখিদের দেখা মেলে গোটা শীতকাল জুড়ে। পাখিরা না আসায় এর প্রভাব বাস্তুতন্ত্রের উপরেও পড়তে পারে বলে পরিবেশপ্রেমীদের আশঙ্কা। সৌম্য সেনগুপ্ত নামে এক জনের অভিযোগ, ‘‘প্রতি বছর শতাধিক প্রজাতির পরিযায়ী পাখি আসত। এ বার সেই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে না। সংস্কার না হওয়ায় ঝিলগুলি মজে যাচ্ছে।’’
প্রতি বছর, শীতের দুপুরে ছুটির দিনে বিশ্বভারতীর পড়ুয়া ও গবেষকেরা ছুটে যেতেন ঝিলগুলির পাড়ে। চলত পাখি চেনার কাজ। শোনা যেত ক্যামেরার ক্লিকের শব্দও। কিন্তু এ বার ছাত্রদের অভিযোগ, নজরদারি থাকলেও পরিযায়ী পাখিদের বাসা বাঁধার মতো পরিবেশ নেই। বিশ্বভারতীর গবেষক ছাত্র শ্রেয় সেনগুপ্তের দাবি, ‘‘একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, মাস তিনেক ধরে ভিন্ দেশি পাখিদের ওড়াউড়ি দেখা যায়। এ বার তেমনটা দেখা না যাওয়ায় বন দফতরকে পদক্ষেপ করার আর্জি জানানো হয়েছে।’’
ঝিলগুলির সংস্কারের অভাব রয়েছে, সে কথা স্বীকার করেই বোলপুরের বন দফতরের আধিকারিক নির্মলকুমার বৈদ্য বলেন, ‘‘পরিযায়ীরা একেবারে আসছে না, তা নয়। ঝিল সংস্কার ও বল্লভপুর অভয়ারণ্যকে ঢেলে সাজানোর জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।”