হেনস্তার অভিযোগ তুলে বিধায়কের নেতৃত্বে অবরোধ শুরু করল সিপিএম। তাতে অবশ্য দখলদার উচ্ছেদে ছেদ পড়েনি।—নিজস্ব চিত্র।
প্রশাসন রাস্তার পাশ থেকে অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে অভিযান শুরু করেছিল। আর তার বিরোধিতা করতে গিয়ে বিতর্কে জড়ালেন সিপিএমের বিধায়ক। পুলিশের বিরুদ্ধে তিনি হেনস্থার অভিযোগ তুললেন। আর মহকুমাশাসকও পাল্টা কয়েকজনের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক অভিযানে বাধা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করলেন। সব মিলিয়ে সোমবার বেলিয়াতোড়ে তেমাথা মোড়ে দখলদারি উচ্ছেদ ঘিরে তেতে রইল এলাকা।
এমনিতেই দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা বলে বেলিয়াতোড় তেমাথা মোড় চিহ্নিত। তার উপরে ওই এলাকায় রাস্তার পাশের জমি বেদখল হয়ে পড়ায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জল প্রকল্পের পাইপ বসানোও যাচ্ছিল না। দখল মুক্ত করতে মাস ছয়েক আগেই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। দখলদারি হটিয়ে ওই এলাকায় রাস্তা সম্প্রসারণ, পাইপলাইন বসানো ও এলাকায় একটি বাসস্ট্যান্ড তৈরির পরিকল্পনা নেয় জেলা প্রশাসন। সেই অনুযায়ী, দফায় দফায় অবৈধ নির্মাণ চিহ্নিত করে জেলা প্রশাসন। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বহুবার বৈঠক করে তাঁদেরই নিজেদের দখল করা এলাকার নির্মাণ ভেঙে ফেলতে সময় বেঁধে দেওয়া হয়।
সেই সময়সীমা পার হওয়ার পরে সোমবার সকাল থেকে মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) এবং ওসি-র (বেলিয়াতোড়) নেতৃত্বে দখলমুক্ত অভিযান শুরু হয়। গোড়াতেই বেলিয়াতোড়ের সিপিএম কর্মীদের প্রতিবাদের মুখে পড়ে জেলা প্রশাসন। বড়জোড়ার সিপিএম বিধায়ক সুজিত চক্রবর্তী উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ীদের হয়ে গুচ্ছ দাবিদাওয়া নিয়ে সরব হন। বিধায়কের সঙ্গে পুলিশের বাক-বিতণ্ডা কিছুক্ষণ চলে। তখনই তাঁকে পুলিশ কর্মীরা হেনস্তা করেন বলে বিধায়কের দাবি। এরপরেই ক্ষুব্ধ সিপিএম কর্মীরা বেলিয়াতোড় মোড়ে কিছুক্ষণ পথ অবরোধ করেন।
সুজিতবাবু অভিযোগ করেন, “বেশ কিছু বৈধ দোকানও প্রশাসন জোর করে ভেঙে ফেলার চেষ্টা চালায়। প্রতিবাদ জানালে পুলিশ আমাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। একজন বিধায়ককে পুলিশ এ ভাবে হেনস্থা করতে পারে কি না বিধানসভার স্পিকারের কাছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলব। জেলাশাসককেও লিখিত ভাবে বিষয়টি জানিয়েছি।” এ দিকে অভিযোগপত্রে সরাসরি কারও নাম না আনলেও প্রশাসনিক অভিযানে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে বেলিয়াতোড় থানাকে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) অসীমকুমার বালা। তিনি বলেন, “উন্নয়নের স্বার্থে এলাকাবাসী এই অভিযানে প্রশাসনকে সহায়তা করেছেন। তবে কয়েকজন বিরোধিতা করতে এসেছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে আমি অভিযোগ জানিয়ে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলেছি।”
সিপিএমের এই আন্দোলনকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে উল্লেখ করেছেন বড়জোড়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তথা বেলিয়াতোড়ের তৃণমূল নেতা কালীপদ মুখোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, “সিপিএম এলাকার উন্নয়ন চায় না। ওরা নোরা রাজনীতি করছে।” সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সুজয় চৌধুরীর পাল্টা বক্তব্য, “তৃণমূলের আমলে গণতন্ত্র বলে কিছু নেই। ব্যক্তিগত জমিতে তৈরি দোকানও প্রশাসন ভেঙে ফেলছে। আমরা তারই প্রতিবাদ করেছি মাত্র।”
তবে অভিযান থামেনি। এ দিন দুপুরের মধ্যেই বেলিয়াতোড় মোড় এলাকায় অন্তত ১৫০টি অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলে অভিযান শেষ করে জেলা প্রশাসন। বেলিয়াতোড়ের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নরেন আঁশ বলেন, “সরকারি জায়গায় অবৈধ নির্মাণ প্রশাসন ভেঙেছে। তাতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। তবে ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন নিয়ে প্রশাসন ভাবুক।” বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীর আশ্বাস, “ওই এলাকার ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন দেওয়ার ব্যাপারে আমরা চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy