Advertisement
১৯ মে ২০২৪
পুরসভা ও স্বাস্থ্য দফতরের বৈঠক

ডেঙ্গি নিয়ে আগাম সতর্কতা

গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার ডেঙ্গি মোকাবিলায় আগে থেকেই পুরুলিয়া পুরসভাকে সতর্ক হতে বলল জেলা স্বাস্থ্য দফতর। সাধারণত গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ডেঙ্গির বাহক এডিস ইজিপ্টাই মশার দৌরাত্ম্য শুরু হয়। তাই ‘সাবধানের মার নেই’ প্রবাদ আঁকড়ে আগেভাগেই মাঠে নামতে চাইছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর।

নিকাশি: শহরের রামপদ কলোনির এমন নোংরা নালাই মশার আঁতুড়। নিজস্ব চিত্র

নিকাশি: শহরের রামপদ কলোনির এমন নোংরা নালাই মশার আঁতুড়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৭ ০১:৩৫
Share: Save:

গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার ডেঙ্গি মোকাবিলায় আগে থেকেই পুরুলিয়া পুরসভাকে সতর্ক হতে বলল জেলা স্বাস্থ্য দফতর। সাধারণত গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ডেঙ্গির বাহক এডিস ইজিপ্টাই মশার দৌরাত্ম্য শুরু হয়। তাই ‘সাবধানের মার নেই’ প্রবাদ আঁকড়ে আগেভাগেই মাঠে নামতে চাইছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর।

ডেঙ্গির ভয়াবহতা এই রুখা-সুখা জেলা গত বছর কিছুটা হলেও টের পেয়েছে। রাজ্যে যখন গতবছর ডেঙ্গি একেক জায়গায় মহামারীর আকার নিয়েছে, সেই সময় পুরুলিয়া শহরের নর্থ লেক রোডের বাসিন্দা এক মহিলা ডেঙ্গির লক্ষণ নিয়ে অসুস্থ হয়ে মারা যান বলে তাঁর পরিবার সূত্রে দাবি করা হয়েছিল। যদিও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে এই মহিলার মৃত্যু হয়েছে বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর স্বীকার করেনি। তবে এই জেলায় গত বছর ডেঙ্গিতে যে ৩২ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন, তা অবশ্য জেলা স্বাস্থ্য দফতর স্বীকার করেছিল। তার মধ্যে বেশ কয়েকজন পুরুলিয়া শহর ও শহর লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা।

স্বাস্থ্য দফতর চাইছে, ডেঙ্গির বাহক যাতে এই শহরে বংশবিস্তার করতে না পারে। সে জন্য এ বার গরমের আগেই পুরসভাকে মাঠে নামাতে চাইছেন স্বাস্থ্য কর্তারা। এ নিয়ে সচেনত করতে সম্প্রতি পুরসভার সাফাই বিভাগের কর্মীদের নিয়ে পুরুলিয়া জেলা পরিষদ প্রেক্ষাগৃহে একটি বৈঠক করে স্বাস্থ্য দফতর।

সেখানে জেলার উপমুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গুরুদাস পাত্র, মহামারী বিশেষজ্ঞ সতীনাথ ভুঁইয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। গুরুদাসবাবু বলেন, ‘‘ডেঙ্গি সাধারণ ছড়ায় এপ্রিল মাস থেকে। তার আগেই আমরা পুরসভার সাফাই বিভাগের কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করে কোথাও জল যাতে জমে না থাকে, সে ব্যাপারে সচেতন করেছি। কারণ ডেঙ্গির মশার লার্ভা পরিষ্কার জমা জলেই জন্মায়। আর শহরের কোন কোন এলাকায় জল জমে থাকে, কেমন পরিবেশ এ ধরনের মশার আঁতুড়ঘর তা সাফাই বিভাগের কর্মীরাই সবচেয়ে ভাল জানেন। ফলে তাঁরা উদ্যোগী হলে ডেঙ্গি রোখার কাজ অনেকটা সহজ হবে।’’

তবে স্বাস্থ্য দফতর চাইলেও পুর এলাকার নিকাশি ব্যবস্থার হাল হকিকত দেখে প্রশ্ন উঠেছে এই ব্যবস্থা কতটা কার্যকর হবে।

পুরুলিয়ার অন্যতম মূল নিকাশি নালাটি শহরের নীচের দিকে ১২ নম্বর ওয়ার্ডের রামপদ কলোনি-বাউরি পাড়া বাই লেন দিয়েই গিয়েছে। রামপদ কলোনি এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, পলিব্যাগ, প্লাস্টিকের কাপ, গ্লাস, থার্মোকলের পাতা, বাটি প্রভৃতি জমতে জমতে এই নিকাশি নালায় জল যেতে বাধা পাচ্ছে। তা ছাড়া নালাটিও অনেকদিন সংস্কারের অভাবে বুজে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা অনিরুদ্ধ নন্দী, পঞ্চানন কর্মকার, সুমন কর্মকার প্রমুখ বলেন, ‘‘নিকাশি নালা বুজে যাওয়ায় নোংরা জল উল্টে অনেক সময় বাড়ির ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে। এখন থেকে মশার উপদ্রবও বেড়ে যাওয়ায় গরমে কী হবে, তা নিয়ে আমরা দুঃশ্চিন্তায় রয়েছি।’’ তাঁদের আক্ষেপ, পুরসভাকে আগে এ নিয়ে তাঁরা জানিয়েছিলেন। কিন্তু সাফাই হয়নি।

পুরসভার সাফাই বিভাগের দায়িত্বে থাকা চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল কৃষ্ণেন্দু মাহালিও স্বীকার করেন, ‘‘সাফাইয়ের কাজ নিয়ে আমরা বর্তমানে বেশ সমস্যার মধ্যে রয়েছি। কারণ এতদিন আমরা শহরের বাইরে যে সব এলাকায় আবর্জনা ফেলতাম, সেখানে এখন আর বাসিন্দারা আবর্জনা ফেলতে দিচ্ছেন না। এ দিকে জনবসতিও বাড়ছে।’’ তিনি জানান, প্রশাসনের কাছ থেকে শহরের বাইরে আবর্জনা ফেলার জমি মিলেছে। সেই জমি ঘেরার কাজ চলছে। সেখানে আবর্জনা ফেলার কাজ শুরু হয়ে গেলে, শহরে সাফাইয়ের কাজ আরও ভাল হবে বলে তাঁর আশ্বাস।

ততদিন কি ডেঙ্গি মোকাবিলা থেমে থাকবে?

কৃষ্ণেন্দুবাবু বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য দফতরের প্রস্তাব মেনে আমরা ঠিক করেছি, প্রতিটি ওয়ার্ডে দল গড়ে মানুষজনের কাছে এ নিয়ে প্রচার চালাব। বাসিন্দারা সচেতন হলেও ডেঙ্গি ঠেকানোর কাজ কিছুটা সফল হবে। পুরসভাও সাফাইয়ের কাজ যথাসাধ্য করবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Municipality
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE