আঁতুড়: বিষ্ণুপুরের মালঞ্চপল্লিতে এখনও জমা বৃষ্টির জল। —নিজস্ব চিত্র।
দেরিতে হলেও টনক নড়ল বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর পুরসভার। রাজ্য জুড়ে ডেঙ্গি-সহ মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার মধ্যেও বিষ্ণুপুরের যত্রতত্র জল জমে থাকায় তা নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছিলেন বাসিন্দারা। শুক্রবার সকালে তাই কোমর বেঁধে নেমে পরলেন পুরসভার কর্মীরা। মশা মারতে ফগিং মেশিন থেকে ধোঁয়া ছড়ালেন তাঁরা। পাড়া ঘুরে ঘুরে তাঁরা সচেতনতার জন্য বাসিন্দাদের বোঝালেনও। যদিও শুক্রবার শহর ঘুরে দেখা গেল, বহু এলাকাতেই জল জমে মশাদের বংশ বৃদ্ধির পরিবেশ তৈরি হয়ে রয়েছে।
এ দিন সকাল আটটা থেকে ফগিং মেশিন কাঁধে নিয়ে বেরিয়েছিলেন পুরসভার কর্মী আনন্দ বাউরি, বাচ্চু সরকার, মধুসূদন বাউরিরা। দুপুর পর্যন্ত তাঁরা টানা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরে মশা মারার ধোঁয়া ছড়ান। ততক্ষণে বাসিন্দাদের ফোন পেতে পেতে নাজেহাল অবস্থা বিষ্ণুপুর পুরসভার জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের আধিকারিক তুহিন কুণ্ডুর। তিনি বলেন, ‘‘সকাল থেকে ফোনের পর ফোন আসছে। তুললেই শুনতে হচ্ছে— ‘দাদা আমাদের তুলে নিয়ে চলে গেল’? আরে বাবা কে, কাকে তুলে নিয়ে গেল? মশার উৎপাতে সবাই নাজেহাল। কিন্তু শুধু পুরসভাই সব করে দেবে? নাগরিকদেরও তো একটু সচেতন হতে হবে। ফুলগাছের টবে জল জমছে, ফ্রিজের পিছনে জল জমছে, সে সব নিজেদেরই পরিষ্কার করতে হবে তো! বালতিতে তিন-চার দিন ধরে জল জমিয়ে রাখলেও ক্ষতি। এতে মশা বাড়বেই।’’
পুরপ্রধান থেকে কাউন্সিলরাও ছোটাছুটি শুরু করে দিয়েছেন। পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায় ফোন করে কর্মীদের কোথায় জল জমে রয়েছে, কোথায় ধোঁয়া দিতে হবে নির্দেশ দিচ্ছেন। পুরকর্মীরা ছোট ছোট দল করে বাড়ি বাড়ি ঘুরে সচেতনতার প্রচার চালাচ্ছেন বলে দাবি।
কিন্তু শহর ঘুরে এ দিনও যত্রতত্র জল জমে থাকতে দেখা গিয়েছে। বন দফতরের শিশু উদ্যানের কাছেই সদ্য তৈরি নিকাশি নালায় জল দিনের পর দিন জমে রয়েছে। শিশু উদ্যানে সন্তানকে নিয়ে এসেছিলেন অনুসূয়া মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘ছোট ছোট ছেলেপুলেরা সারা বিকেলটা এখানে থাকে। কেন যে পুরসভা এ সব দেখেও দেখে না, বুঝতে পারি না।’’ আবার বিষ্ণুপুর বিডিও অফিস যেতে মালঞ্চ পল্লির রাস্তার ধারেই ঘন বসতির মধ্যে অনেকটা জায়গা জুড়ে জমে আছে এক হাঁটু সমান জল। বাসিন্দারা বলেন, ‘‘ওই জলে মশা ডিম পাড়ছে। মশার এত উপদ্রব যে ঘরে টেকা দায় হয়ে ওঠে।’’ একই অবস্থা বিষ্ণুপুর গ্রামীণ হাটের পাশে নবোদয় পল্লি আর লেবুতলা বস্তিতেও। বৃষ্টির জল জমে দীর্ঘদিন ধরে ডোবার চেহারা নিয়েছে সেখানে। তাতেও মশা বাড়ছে দ্রুত। যদিও পুরসভা সূত্রে দাবি করা হয়েছে, দু’টি পাম্প ব্যবহার করে শহরের বিভিন্ন এলাকায় জমে থাকা জল তোলা হচ্ছে। পুরপ্রধান বলেন, ‘‘পর্যটন মরসুম শুরু হচ্ছে বলে শহরের সমস্ত হোটেল মালিক ও কর্মচারীদের নিয়ে ডেঙ্গু সচেতনতা শিবির করব। ছাত্রছাত্রীদেরও মশা ঠেকাতে কী কী করা উচিত, তা বোঝানো হবে।’’
তিনি জানান, বর্তমানে পুরসভার হাতে দু’টি মশা মারার কামান (ফগিং মেশিন) রয়েছে। আরও দু’টি কামান ও বদ্ধ জল নিকাশির জন্য বেশি শক্তিশালী দু’টি পাম্প কেনা হচ্ছে। তবে সবার উপরে নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে বলে আর্জি জানিয়েছেন পুরপ্রধান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy