অবশেষে অচলাবস্থা কাটতে চলেছে পুরুলিয়ার মানভূম ক্রীড়া সংস্থার। দীর্ঘ সাত মাস অভিভাবকহীন থাকার পরে সম্প্রতি এই সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবে জেলাশাসক একটি ‘অ্যাডহক’ কমিটির প্যানেলে স্বাক্ষর করেছেন। এই কমিটিতে জেলা শারীরশিক্ষা আধিকারিক-সহ মোট ১৬জনকে রাখা হয়েছে। স্থান পেয়েছেন পুরনো কমিটিরও বেশ কয়েকজন।
জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এমএসএ-তে একটা অচলাবস্থা দেখা দিয়েছিল। সেই অবস্থা কাটাতে ‘অ্যাডহক’ কমিটি গড়া হয়েছে। এ বার এই কমিটিই সাধারণ সভার কাজ দেখভাল করবে। আশাকরছি শীঘ্রই অচলাবস্থা কেটে যাবে।’’
পুরুলিয়া জেলার বিভিন্ন ক্লাব নিয়ে বছরের বিভিন্ন সময়ে ফুটবল লিগ, ক্রিকেট লিগ, অ্যাথলেটিক্স, ভলিবল-সহ নানা খেলাধুলোর আয়োজন করে মানভূম ক্রীড়া সংস্থা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সংস্থার কমিটি না থাকায় গত মরসুমে ক্রিকেট, ফুটবল, অ্যাথলেটিক্স-সহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতা হতে পারেনি। আঞ্চলিক বা রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য জেলার ক্রীড়া প্রতিভাদের কাছে এই সংস্থাই একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সংস্থার কোনও কমিটি না থাকায় খেলোয়াড়রা কার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন, কেই বা প্রতিযোগিতার আয়োজনের ব্যাপারে খবর দেবেন, তা জানা যাচ্ছিল না। এমনকী এমএসএ দফতরে এসেও খেলোয়াড়রা কোনও খবরাখবর পাচ্ছিলেন না বলে অভিযোগ। যার জেরে ওই কয়েকমাসে জেলার বাইরের বিভিন্নস্তরের প্রতিযোগিতায় পুরুলিয়া থেকে কেউ যোগ দিতে পারেননি বলেও অভিযোগ।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে, সংস্থার দখল কাদের হাতে থাকবে তাই নিয়েই গণ্ডগোলের সূত্রপাত। ২০১১ সালে রাজনৈতিক পালাবদলের পর থেকেই এই সমস্যার শুরু। সংস্থাটির একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, শেষবার এমএসএ-র বার্ষিক সাধারণ সভা হয়েছিল ২০০৯ সালে। সেই সভা থেকেই পরিচালন কমিটি নির্বাচিত হয়। কমিটির মেয়াদ ছিল দু’বছর। ২০১১ সালে ফের সংস্থার বার্ষিক সাধারণ সভার আয়োজন করা হয়। নিস্তারিণী মহিলা মহাবিদ্যালয়ে সেই সভা হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।
অভিযোগ, তৃণমূলের শহর নেতৃত্বের একাংশের বাধায় সে বার ওই সভা হতে পারেনি। কারণ, বাম আমলে তৈরি হওয়া কমিটিই ফের এই সংস্থার দখল নিতে পারে এমনই আশঙ্কা থেকে শাসকদলের একাংশ বাধা দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।
এরপরে ২০১২ সালের জুন মাসে রাজ্য সরকার এই সংস্থাকে ভেঙে দেয়। তখন এমএসএ রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যায়। এমএসএ-র সঙ্গে যুক্ত এক কর্মকর্তা জানান, আদালত নতুন করে বার্ষিক সাধারণ সভা না হওয়া পর্যন্ত যে কমিটি কাজ করছিল সেই কমিটিকেই কাজ চালিয়ে যেতে হবে বলে জানায়। আদালতের নির্দেশ মোতাবেক ২০০৯-এর কমিটিই সংস্থার কাজকর্ম চালিয়ে গেলেও নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছিল।
এমএসএ অফিসে ফুটবল সাবকমিটির সভা চলাকালীন ফের শাসক দলের আশ্রিত কিছু লোক সংস্থার কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। তালা ঝোলানোর পক্ষে তাঁদের যুক্তি ছিল, সংস্থায় অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে, বিভিন্ন খেলা বন্ধের মুখে, সংস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে ইত্যাদি।
এই ঘটনার কিছুদিন পরে ২০১৫-র অক্টোবরে আদালত যে কমিটিকে সংস্থার কাজকর্ম দেখভাল করতে বলেছিল সেই কমিটি পদত্যাগ করে।
কেন সবাই মিলে পদত্যাগ করলেন? পূর্বতন কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘জেলাশাসক এই সংস্থার চেয়ারম্যান। তিনি অতিরিক্ত জেলাশাসককে দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আমরা বারবার তাঁর কাছে গিয়ে সাধারণ সভা করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। এ দিকে সংস্থার কাজকর্ম চালিয়ে যেতেও নানা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছিল। তাই বাধ্য হয়েই আমরা দায়িত্ব ছেড়ে দিই।’’
অবশেষে জেলাশাসক যে ‘অ্যাডহক’ কমিটি গড়েছেন সেই কমিটির তৃণমূলের ছত্রছায়ায় থাকা এক সদস্য বলেন, ‘‘এতদিন তো আমরা কোনও কাজ করতে পারছিলাম না। পুরনো কমিটির একাংশের সঙ্গে আমাদের সমন্বয়ের অভাব ছিল। মাঝখানে এমএসএ বেশ কিছুদিন অভিভাবকহীন থাকায় কিছু অসুবিধা হয়েছে। এ বার আর সেই অসুবিধা হবে না।’’
অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) প্রবালকান্তি মাইতি বলেন, ‘‘মার্চ মাসের আগে থেকেই বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে আমরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। তাই তখন এমএসএ নিয়ে বেশি এগোনো যায়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy